শেরপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, হাসপাতালে ৭৩

শেরপুরে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী, হাসপাতালে ৭৩

জুবাইদুল ইসলাম, শেরপুর

শেরপুরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ৬ আগস্ট রোববার দুপুর পর্যন্ত শেরপুরে মোট ৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তবে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, শেরপুরে ডেঙ্গু নিয়ে আশঙ্কার কিছু নেই। জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পৌরসভার সমন্বয়ে জন সাধারণের মাঝে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করা হচ্ছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত ১১ জুলাই শেরপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে প্রথম ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর থেকে নিয়মিতভাবেই রোগী বেড়েছে জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। ২৬ দিনের ব্যবধানে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত জেলা সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ৭৩ জন রোগী। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

 

শেরপুর ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন ৫৬ জন রোগী। এছাড়া শ্রীবরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০ জন ও ঝিনাইগাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

অপরদিকে শ্রীবরদী উপজেলার ভাটি লঙ্গরপাড়া এলাকার মো. সেলিম মিয়া (৩৮) নামে এক শ্রমিক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার মারা গেছেন। তিনি ঢাকায় শ্রমিক হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। গত ৪ আগস্ট সেলিম মিয়া ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে বাড়ি আসার পর তাকে শেরপুরে ডা. আসাদুজ্জামানের কাছে নিয়ে গেলে তিনি সেলিমকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেলিম মিয়ার মৃত্যু হয়। তবে এখনও শেরপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোনো ডেঙ্গু রোগী মারা যাননি।

এদিকে লোকবল সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হলেও স্বাস্থ্য বিভাগ ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি বিশেষ নজর রাখছে। ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো সংকট নেই বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ইতোমধ্যে ডেঙ্গু ইউনিটের রোগীদের জন্য একজন মেডিকেল অফিসার ও দুইজন কনসালটেন্টকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জেলা সদর হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, শয্যা সঙ্কটে অনেকেই হাসপাতালের ফ্লোরে শুয়েই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. খায়রুল কবির সুমন বলেন, ডেঙ্গুতে আতঙ্কের কিছু নেই। যেসব ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন তারা সবাই ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন। কর্মক্ষেত্র ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে তারা গ্রামের বাড়ি শেরপুরে এসে হাসপাতালে ভর্তি হন। হঠাৎ করে শেরপুরে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় জেলা হাসপাতালের সাত তলায় ৫০ শয্যার একটি ডেঙ্গু ইউনিট চালু করা হয়েছে। সেখানে সব মিলিয়ে ১০০ জনের উপরে চিকিৎসা নিতে পারবেন। প্রয়োজনে শয্যার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

এ ব্যাপারে শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. অনুপম ভট্টাচার্য্য রোববার দুপুরে বলেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অধিকাংশই ঢাকা থেকে আক্রান্ত হয়ে শেরপুর এসেছেন। আমরা তাদের চিকিৎসার জন্য সব ব্যবস্থা নিয়েছি। মশাবাহিত এই রোগ থেকে বাঁচতে জেলাবাসীকে আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বাসাবাড়ির ছাদ ও আঙিনা পরিষ্কার রাখাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের যৌথ উদ্যোগে শেরপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশার বিস্তাররোধ এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি উপজেলাগুলোতেও নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে মশকনিধন ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

শেরপুর জেলা সদর হাসপাতালে ফ্লোরে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ডেঙ্গু রোগী।

news24bd.tvতৌহিদ

সম্পর্কিত খবর