সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন শুরু

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবিতে মানববন্ধনে সম্পাদক পরিষদ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের দাবি

সম্পাদক পরিষদের মানববন্ধন শুরু

নিউজ টোয়েন্টিফোর অনলাইন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিতর্কিত নয়টি ধারা সংশোধনের দাবিতে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সম্পাদক পরিষদ। আজ সোমবার বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন শুরু হয়। এতে সংগঠনের দাবি তুলে ধরছেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।

লিখিত বক্তব্যে মাহফুজ আনাম বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ পাস হওয়ার আগ থেকেই এ আইনটি নিয়ে, এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলাম।

‘আমরা মনে করি এই আইনটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী। বর্তমান আইনটি শুধু সাইবার জগৎ নয়, স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার আইন। আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধী নই। আমরা এই আইনটির বিশেষ কতগুলো ধারার সংশোধন দাবি করছি।

এসময় মাহফুজ আনাম সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি তুলে ধরেন।

সম্পাদক পরিষদের দাবি

• সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা সুরক্ষার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারা অবশ্যই যথাযথভাবে সংশোধন করতে হবে।

• এসব সংশোধনী বর্তমান সংসদের শেষ অধিবেশনে আনতে হবে।

• পুলিশ বা অন্য কোনো সংস্থার মাধ্যমে কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালানোর ক্ষেত্রে তাদের শুধু নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু আটকে দেয়ার অনুমতি দেয়া যাবে; কিন্তু কোনো কম্পিউটারব্যবস্থা বন্ধ করার অনুমতি দেয়া যাবে না। তারা শুধু তখনই প্রকাশের বিষয়বস্তু আটকাতে পারবে, যখন সংশ্লিষ্ট সংবাদপ্রতিষ্ঠানের সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে কেন ওই বিষয়বস্তু আটকে দেয়া উচিত, সে বিষয়ে যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারবে।

• কোনো সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কোনো কমপিউটারব্যবস্থা আটকে দেয়া বা জব্দ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই উচ্চ আদালতের আগাম নির্দেশ নিতে হবে।

• সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের সাংবাদিকতার দায়িত্বের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে প্রথমেই আদালতে হাজির হওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করতে হবে (যেমনটা বর্তমান আইনে আছে) এবং সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীদের কোনো অবস্থাতেই পরোয়ানা ছাড়া ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া আটক বা গ্রেফতার করা যাবে না।

• সংবাদমাধ্যমের পেশাজীবীর দ্বারা সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের গ্রহণযোগ্যতা আছে কিনা, তার প্রাথমিক তদন্ত প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত। এই লক্ষ্যে প্রেস কাউন্সিলকে যথাযথভাবে শক্তিশালী করা যেতে পারে।

• এই সরকারের পাস করা তথ্য অধিকার আইনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওপর প্রাধান্য দেয়া উচিত। ওই আইনে নাগরিক ও সংবাদমাধ্যমের জন্য যেসব স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, সেগুলোর সুরক্ষা অত্যাবশ্যক।

এর আগে, গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের পক্ষ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।  

ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৯ সেপ্টেম্বর একই দাবিতে আমাদের মানববন্ধন কর্মসূচি ছিল। কিন্তু তথ্যমন্ত্রীর অনুরোধে ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। তারপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর তিনজন মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমাদের উদ্বেগের বিষয়গুলো ৩ অক্টোবর অথবা ১০ অক্টোবরের মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করে আমাদের সঙ্গে নতুন করে আলোচনা শুরু করার জন্য মন্ত্রিসভার অনুমোদন চাইবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সে রকম কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তাই আমরা আমাদের স্থগিত কর্মসূচি আবারও ঘোষণা করছি।  

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩ ধারাগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই এই ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জানান তারা।

সম্পর্কিত খবর