কোরআনের ভাষায় পথভ্রষ্ট যারা

প্রতীকী ছবি

কোরআনের ভাষায় পথভ্রষ্ট যারা

কোরআনে আল্লাহ তাআলা কিছু মানুষকে পথভ্রষ্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের গুমরাহ বলেছেন। তারা যে পথে চলে সে পথ ভ্রান্ত। আমরা যেন তাদের পথে না চলি সে জন্য আল্লাহ তাআলা তাদের কথা উল্লেখ করে আমাদের সতর্ক করেছেন।

সেসব ব্যক্তির আলোচনা আল্লাহ তাআলা কোরআনে বিস্তারিত উল্লেখ করেছেন।

যারা আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে

শিরক সবচেয়ে মহাপাপ। তাদের আল্লাহ তাআলা পথহারা পথভ্রষ্ট বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করেন না।

এ ছাড়া অন্য যেকোনো গুনাহ যার ক্ষেত্রে চান ক্ষমা করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে (কাউকে) শরিক করে, সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১১৬)

আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাসী

যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে, আল্লাহর ক্ষমতাকে অস্বীকার করে, তাদেরও আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘(পক্ষান্তরে) যারা ঈমান আনার পর কুফরি অবলম্বন করেছে, তারপর কুফরিতে অগ্রগামী হতে থেকেছে, তাদের তাওবা কিছুতেই কবুল হবে না। এবং এরূপ লোকই বিপথগামী। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯০)

যারা আল্লাহর পথে বাধা দেয়

ইসলামের বিভিন্ন কাজে যারা প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়, তাদের আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আখিরাতের বিপরীতে দুনিয়ার জীবনকেই পছন্দ করে, অন্যদের আল্লাহর পথে আসতে বাধা দেয় এবং সে পথে বক্রতা সন্ধান করে, তারা চরম বিভ্রান্তিতে লিপ্ত। ’ (সুরা : ইবরাাহিম, আয়াত : ৩)

আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য

যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্য, বিভিন্ন কাজে-কর্মে নিজের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে, তাদেরও আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যখন কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা দান করেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর নিজেদের বিষয়ে কোনো এখতিয়ার বাকি থাকে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করলে সে তো সুস্পষ্ট গোমরাহীতে পতিত হলো। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩৬)

প্রবৃত্তির অনুসরণকারী

প্রবৃত্তির অনুসরণ মাত্রই মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। এই প্রবৃত্তির অনুসরণ তাকে একসময় পথহারা করে তোলে। এ জন্য যারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আল্লাহ তাআলা তাদের পথভ্রষ্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যদি তোমার ফরমায়েশমতো কাজ না করে, তবে বুঝবে, তারা মূলত তাদের খেয়াল-খুশিরই অনুসরণ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত হিদায়াত ছাড়া শুধু নিজ খেয়াল-খুশির অনুসরণ করে, তার চেয়ে বেশি পথভ্রষ্ট আর কে হতে পারে? নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দান করেন না। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫০)

যারা জুলুম করে

যারা অন্যায়ভাবে অন্যের ওপর জুলুম-অত্যাচার করে, তারাও পথভ্রষ্ট। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ তাদের এ সুদৃঢ় কথার ওপর স্থিতি দান করেন দুনিয়ার জীবনে এবং আখিরাতেও। আর আল্লাহ জালিমদের করেন বিভ্রান্ত। আল্লাহ (নিজ হিকমত অনুযায়ী) যা চান, তাই করেন। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ২৭)

অপচয়কারী

যারা অপচয় করে, সীমা লঙ্ঘন করে তারাও পথভ্রষ্ট। আল্লাহ বলেন, ‘বস্তুত এর আগে ইউসুফ (আ.) তোমাদের কাছে এসেছিলেন উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি নিয়ে। তখনো তোমরা তার নিয়ে আসা বিষয়ে সন্দেহে পতিত ছিলে। তারপর যখন তাঁর ওফাত হয়ে গেল, তখন তোমরা বললে, তারপর আর আল্লাহ কোনো রাসুল পাঠাবেন না। এভাবেই আল্লাহ প্রত্যেক এমন ব্যক্তিকে পথভ্রষ্টতায় ফেলে রাখেন, যে হয় সীমা লঙ্ঘনকারী, সন্দিহান। ’ (সুরা : আল-মুমিন, আয়াত : ৩৪)

যারা নিরাশায় থাকে

আল্লাহর প্রতি নিরাশা মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এ জন্য যারা আল্লাহর থেকে নিরাশ হয়ে যায় কিংবা হতাশ হয়ে যায়, তাদের আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট হিসেবে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘ইবরাহিম বলল, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে নিজ প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হয়?’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ৫৬)

কঠোর হৃদয়ের অধিকারী

যারা দাম্ভিক, অহংকারী, পাষাণ ও নির্দয় অন্তরের অধিকারী, তাদের আল্লাহ তাআলা পথভ্রষ্ট বলেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষ খুলে দিয়েছেন, ফলে সে তার প্রতিপালকের দেওয়া আলোতে এসে গেছে (সে কি কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের সমতুল্য হতে পারে?) সুতরাং ধ্বংস সেই কঠোরপ্রাণদের জন্য, যারা আল্লাহর জিকির থেকে বিমুখ। তারা সুস্পষ্ট বিভ্রান্তিতে নিপতিত। ’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ২২)

পাপাচারে অভ্যস্ত

যারা পাপ করতে অভ্যস্ত আল্লাহর আনুগত্য করতে চায় না, আল্লাহর আনুগত্য থেকে বিরত থাকে তারাও পথভ্রষ্ট। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ (কোনো বিষয়কে স্পষ্ট করার জন্য) কোনো রকমের উদাহরণ দিতে লজ্জাবোধ করেন না, তা মশা (এর মতো তুচ্ছ জিনিস) হোক বা তারও ওপরে (অধিকতর তুচ্ছ) হোক। তবে যারা মুমিন তারা জানে, এ উদাহরণ সত্য, যা তাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত। কিন্তু যারা কাফির তারা বলে, এই (তুচ্ছ) উদাহরণ দ্বারা আল্লাহর উদ্দেশ্য কী? (এভাবে) আল্লাহ এ উদাহরণ দ্বারা বহু মানুষকে গোমরাহিতে লিপ্ত করেন এবং বহুজনকে হিদায়াত দান করেন। বস্তুত তিনি পাপাচারীদের ছাড়া আর কাউকেও বিভ্রান্ত করেন না। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৬)

অনর্থক ঝগড়া

যারা অহেতুক, অনর্থক ঝগড়া করে তারাও পথভ্রষ্ট। আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হিদায়াতের পর কোনো জাতি গুমরাহ হয় না—যতক্ষণ না তারা বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। এরপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন, ‘এরা তো শুধু বাক-বিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এই কথা বলে, বস্তুত এরা এক বিতণ্ডাকারী সম্প্রদায়। ’ (সুরা : জুখরুফ)। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ৩২৫৩)

এই রকম আরও টপিক