ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে দায়িত্বশীল নেতাদের ভূমিকা নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে বিএনপিতে। দায়িত্বে অবহেলা ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে দলটিতে। যার অংশ হিসাবে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর পদে সংগঠনের সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়।
ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবদলের কমিটিও। এই দুই শাখায় নতুন আহ্ববায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু সেই কমিটিতে রাখা হয়নি যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর অনুসারী উত্তর যুবদলের 'প্রভাবশালী' যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রাজকে।
এছাড়া বাদ পড়েছেন সদস্য সচিব জগলুল পাশা পাপেলও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব নিউজ২৪'কে জানান, আগামী এক মাসে বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু পদে পরিবর্তন আসবে। দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে ঢাকা মহানগর বিএনপির কয়েকজন নেতাকেও। যাদের বিরুদ্ধে দলে অন্তকোন্দল ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে দায়িত্বে অবহেলা ও নিস্ক্রীয়তার প্রমাণ মেলেছে।
তিনি আরও জানান, 'যেহেতু এবার ঢাকা কেন্দ্রীক আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা আমাদের। সেই লক্ষ্যে কমিটি পূণর্গঠন হচ্ছে। যাদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। তারা কেউ নির্ধারিত সময়ে কর্মসূচিতে যাননি, কেউবা ছবি তুলেই চলে যান। এমন আরও অভিযোগে কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে'।
বিএনপি সূত্র জানায়, ২৯ জুলাই রাজধানীর চারটি স্থানে দায়িত্বশীল নেতাদের ভূমিকা পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করছেন দলের হাইকমান্ড। এদের মধ্যে অনেককে ওই দিন ফোন করেও পাওয়া যায়নি। অনেকে নির্দিষ্ট স্থানে না গিয়ে নিজের সুবিধা মতো সময়ে ঝটিকা মিছিল করে দায়িত্ব সারেন। পুলিশের উপস্থিতির সাথে সাথে অনেকেই নেতাকর্মী রেখে পালিয়ে যান। ঢাকা মহানগরীর অনেক নেতার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে লেজুরবৃত্তি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য ফাঁসের অভিযোগও রয়েছে। এসব ঘটনার 'নিরপেক্ষ' তদন্ত করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সে তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দলের হাইকমান্ড সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন। শ্রাবণের মতো ভাগ্যবরণ করতে পারেন অঙ্গ-সংগঠনের আরও দুই শীর্ষ নেতা। অভিযুক্ত বিএনপির মহানগরের নেতাদের করা হচ্ছে সতর্ক। যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে দলের সবশেষ স্থায়ী কমিটির সভায়।
বিএনপির দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দলের আগামী দিনের কর্মসূচিতে সাময়িকভাবে বাদ পড়া নেতাদের উপস্থিতি, গতিবিধি ও পার্টির কমকাণ্ডে তাদের ভূমিকা এখন কেমন হয় তা পযবেক্ষণেও একটি কমিটি করা হয়েছে। 'আমলনামা' সন্তোষজনক হলে আবারও তাদের পদ-পদবিতে যুক্ত করে পুরস্কৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু নেতিবাচক হলে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিএনপির রাজনীতি করার দরজা।
ছাত্রদলের সাবেক একজন সভাপতি বলেন, 'আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এখন দলীয় ইমানী পরীক্ষায় বেশি জোর দিয়েছেন। তিনি সাহসী ও কমিটেড নেতৃত্ব চান, এ জন্য হাডলাইনে। এখন এটার রেজাল্ট কী হয় আল্লাহই জানে'।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মইন খান বলেন, 'কমিটি পূণর্গঠন একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া। এটা সারা বছরই হয়ে থাকে। কাউকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া মানে কিন্তু বাদ দেয়া না। পার্টি হয়তো তাদেরকে অন্য কাজে নিয়োজিত করবে'।
রাজনীতিতে যখন বিএনপির সাবেক নেতাদের নিবন্ধন পেতে যাওয়া 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুভমেন্ট-বিএনএম' নিয়ে নানা আলোচনা তখন নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বিএনপিতে শুদ্ধি অভিযানের ঘটনায় কোথাকার জল কোথায় গিয়ে পড়ে, তাই এখন দেখার বিষয়- বলছেন দলটির তৃনমূলের নেতা-কর্মীরা।
news24bd.tv/TR