তেঁতুলিয়ায় উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত ১ হাজার ২৪২ শিক্ষার্থীর

তেঁতুলিয়ায় উচ্চশিক্ষা অনিশ্চিত ১ হাজার ২৪২ শিক্ষার্থীর

সরকার হায়দার, পঞ্চগড়

পঞ্চড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে।  শিক্ষকদের গুরুত্বহীনতা, অসচেতন অভিভাবক এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনা কমিটির কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে শিক্ষা সংস্কারক ও সচেতন মহল। ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর স্থানীয়দের মাঝে এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে এবার ৭৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

ফেল এবং জিপিএ ৩ দশমিক ৫ এর নিচে হওয়ায় তেঁতুলিয়ার ১ হাজার ২৪২ জন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষায় অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ বছর তেঁতুলিয়া উপজেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ৮০৭ জন। মোট পাশ করেছে ১ হাজার ৩৪৫ জন। সবচেয়ে বেশি ফলাফল খারাপ হয়েছে মানবিক বিভাগে।
ইংরেজী এবং গণিত বিষয়ে ফেল করেছে বেশি। মানবিক বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১ হাজার ২২৯ জন। এদের মধ্যে পাশ করেছে ৮২৪ জন। ফেল করেছে ৪০৫ জন।

এই বিভাগে মাত্র একজন ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে। জিপিএ ৫ সহ ৩ দশমিক ৫ অর্জন করেছে ১৩৮ জন। এই বিভাগে ৬৮৬ জন শিক্ষার্থী ৩ দশমিক ৫ এর নিচে অর্জন করায় তাদের উচ্চ শিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একইভাবে যারা ফেল করেছে তাদেরও উচ্চ শিক্ষা অনিশ্চিত। বিজ্ঞান বিভাগে ৫৬২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। পাশ করেছে ৫১০ জন। জিপিএ ৫ সহ ৩ দশমিক ৫ অর্জন করেছে ৪২৩ জন। জিপিএ ৩ দশমিক ৫ এর নিচে ৮৭ জন এবং ফেল করেছে ৫২ জন। বাণিজ্য বিভাগে পরীক্ষা দিয়েছে ১৬ জন। পাশ করেছে ১১ জন। ফেল করেছে ৫ জন। জিপিএ ৩ দশমিক ৫ এর নিচে অর্জন করেছে ৭ জন। সব বিভাগ মিলিয়ে ফেল এবং জিপিএ ৩ দশমিক ৫ এর নিচের সংখ্যা ১ হাজার ২৪২ জন। এদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির কারিকুলাম অনুযায়ী ৩ দশমিক ৫ এর নিচের ফলাফল অর্জনকারীরা ভর্তি  পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে ফেল করা শিক্ষার্থীদের আরও সচেতন হয়ে পরের বার পরীক্ষা দিতে হবে। যারা ৩ দশমিক ৫ এর নিচে পেয়েছে তাদের উচ্চ মাধ্যমিকে আরও ভালো রেজাল্ট করতে হবে বলে মনে করছেন শিক্ষা সচেতনরা।  

তেঁতুলিয়ায় পাশের হার ৭৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এই উপজেলায় নারী শিক্ষার্থীরা তুলনামূলক ভালো ফলাফল করেছে।

এমন ফলাফলের জন্য শিক্ষক মহল অবিভাভক এবং শিক্ষার্থীদের দায়ী করেছেন। হারাদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান জানান, শিক্ষার্থীরা ঠিক মতো ক্লাসে আসে না। প্রতি ক্লাসে ৪০ শিক্ষার্থী ভর্তি করার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। সেই তুলনায় শিক্ষক কম। অনেক বিদ্যালয়ে শাখা নাই। শাখা খুলতে নানা জটিলতা। শিক্ষার্থীরা টিফিনের পর ক্লাসে আসে না। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের নানা কাজে ব্যস্ত রাখে। শিক্ষার্থীরা আয় উপার্জনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। অভিভাবক মহল সচেতন নন। এসব কারণেই ফলাফল খারাপ হচ্ছে।

ডিমাগজ গ্রামের অভিভাবক আহসান হাবিব জানান, শিক্ষকবৃন্দের গুরুত্ব নেই । তারা নিয়মমাফিক ক্লাস নেন। দায়বদ্ধতা নেই। সবচেয়ে বেশি দোষ তাদের। তারা গা ছেড়ে দিয়েছেন এমন একটা ব্যাপার বিরাজ করছে। ভজনপুর ডিগ্রী কলেজের উপধাক্ষ্য আব্দুল খালেক বলেন, ফলাফলের হার দেখলে ভালো মনে হলেও ভেতরের অবস্থা খুবই ভয়ানক। অনেক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে দ্রুত উত্তরণ ঘটাতে হবে। প্রত্যেক স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের জরুরি উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, যারা ফেল করেছে তাদের জন্য বিশেষ ক্লাসের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ফলাফল ভালো করার জন্য উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে। আমরা সব স্কুল এবং মাদ্রাসা শিক্ষক অভিভাবকদের ডাকব। তাদের নিয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আগামীতে ফলাফল যাতে আরও ভালো হয় তার জন্য সব উদ্যোগ নেওয়া হবে।

news24bd.tvতৌহিদ