১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ছিল স্বাধীন দেশকে মেরে ফেলার চক্রান্ত: শেখ পরশ

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ছিল স্বাধীন দেশকে মেরে ফেলার চক্রান্ত: শেখ পরশ

অনলাইন ডেস্ক

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড সাধারণ কোনো হত্যাকাণ্ড নয়। এই হত্যাকাণ্ড ছিল সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে জন্মের পরেই মেরে ফেলার দেশি-বিদেশি চক্রান্ত। এ কথা বলেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।

তিনি বলেছেন, ১৫ আগস্টের হাতে গোনা কিছু খুনি, জুনিয়র অফিসারদের বিচার সম্পন্ন হলেও এ ঘটনার নেপথ্যে ষড়যন্ত্র উন্মোচনের বিকল্প নেই।

কারণ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্র এবং তারপরের পদক্ষেপগুলো সম্পূর্ণ পর্যালোচনা ও নিরীক্ষার লক্ষ্যে একটি স্বাধীন জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন এখন একান্ত জরুরি।

আজ শুক্রবার (১১ আগস্ট) বিকেল ৩টায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ অফিস ভবন অডিটোরিয়ামে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা যুবলীগের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব এর ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ পরশ।

এতে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন। সভাপতিত্ব করনে, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের সহসভাপতি জাফর ইকবাল ও সঞ্চালনা করেন, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক তাসবিরুল হক অনু।

শেখ পরশ বলেন, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। সুতরাং স্বাধীন জাতীয় তদন্ত কমিশনের কাজও অনেক কঠিন। তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত জরুরি একটা কাজ; এই কঠিন কাজটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। কঠিন এ কারণে বলছি যে, ১৯৭৫ সালের পর থেকে লম্বা সময় খুনিরাই দেশ শাসন করেছে, এই জিয়াউর রহমানরা দেশ শাসন করেছে। তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার অনেক তথ্য গায়েব করেছে। এই গায়েব করে দেওয়াও সেই সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের নীলনক্সার অংশ। অতএব, আমাদের এমন তদন্ত কমিশন দরকার, যারা যে কোনো কঠিন মুহূর্তে পিছপা হবেন না। যে কোনো চাপ মোকাবিলা করতে পারবে।

যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, এই তদন্ত কমিশন কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য না; রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না, বরঞ্চ জাতিকে সম্পূর্ণরূপে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য। আমাদের প্রজন্মের সত্য জানার অধিকার আছে, যাতে আমরা সাদাকে সাদা বলতে পারি এবং কালোকে কালো। খুনি জিয়াউর রহমানদের পেছনে দেশে-বিদেশে কে বা কারা কাজ করছে, তা উন্মোচিত হওয়া দরকার।

তিনি আরও বলেন, ইতিহাস যতই গৌরবময় বা কলঙ্কময় হোক, তা নতুন করে লেখা যায় না। অতএব, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে ক্ষতি হয়েছে, তার পূরণ কোনোদিন সম্ভব নয়। তবে ইতিহাসের সত্য উদঘাটন ও নির্মোহ উপলব্ধি জাতিকে উপকৃত করবে। সে কারণেই জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কুশীলবদের খুঁজে বের করা জরুরি জাতীয় কর্তব্য। ইতিহাসের সত্য উন্মোচন করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমাদের এই জরুরি কর্তব্য পালন করতে হবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রকৃত অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করার জন্যই অতীতের ক্ষতগুলো পরীক্ষা করে দেখা দরকার। তা সম্ভব হলেই কেবল একদিকে যেমন সেই প্রেক্ষাপটে সদ্য স্বাধীন দেশের মূল চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকগুলো অনুধাবন করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নাগরিকের জন্য জাতীয় ইতিহাসের নির্ভেজাল সত্য উন্মোচিত হবে।

আগস্ট হত্যাকাণ্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না মন্তব্য করে শেখ পরশ বলেন, যারা মারণাস্ত্র হাতে সেদিনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিল, তাদের পেছনে খুনি জিয়াউর রহমানসহ আরও দেশি ও বিদেশি কুচক্রী মহল ছিল। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিল। সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাভাবিক যাত্রাপথ কণ্ঠকাকীর্ণ করতে চেয়েছিল। অতএব, এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য কুশীলবদের চিহ্নিত করার আর কোনো বিকল্প নেই।

সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনা। নৌকার বিকল্প নৌকা। বঙ্গবন্ধু’র রূপরেখা অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন বিধায় দেশ আজ উন্নত-সমৃদ্ধ, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে।

তিনি আরও বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে যুবলীগের নেতা-কর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনার জন্য কাজ করতে হবে।

অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, রাজনীতির মাঠে বিএনটি-জামায়াতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে, যুদ্ধে জয়লাভ করতে হলে অনুপ্রবেশকারী নয়, খাঁটি কর্মী দরকার। সামনে আমাদের কঠিন দিন, ১৫ আগস্টের হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে, ২১  আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী তারেক রহমানের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলাকারী বিএনপি-জামায়াতের দোসর জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়তে হবে। তারা খুনি তারেক রহমানের সন্ত্রাসী বাহিনী, তারা অস্ত্র চালাতে জানে, সারা বাংলাদেশে তারা অস্ত্রের মহড়া চালাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করেই আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে আবারও জয়ী করতে হবে।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, দপ্তর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, কার্যনির্বাহী সদস্য রাজু আহমেদ ভিপি মিরান, ইঞ্জিনিয়ার মুক্তার হোসেন চৌধুরী কামাল, কেন্দ্রীয় সদস্য মো. সাইদুর রহমান জুয়েল, শেখ মো. রবিউল ইসলামসহ কেন্দ্রীয়, মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতৃবৃন্দ।