ময়নাতদন্তে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু’, পিবিআই তদন্তে ‘হত্যা’

ময়নাতদন্তে ‘পানিতে ডুবে মৃত্যু’, পিবিআই তদন্তে ‘হত্যা’

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মনির হোসেন ওরফে মনি (১৯) নামে এক কলেজছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্ত রিপোর্টে পানিতে ডুবে মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেও পিবিআই তদন্তে সেই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টেগেশন (পিবিআই)।

হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তারও করেছে পিবিআই। আর দুজন পলাতক রয়েছে।

গ্রেপ্তাররা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য নিশ্চিত করেন সিরাজগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম।

গ্রেপ্তাররা হলো- শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া গ্রামের মৃত হাফিজের ছেলে আবদুল কাদের (১৯) ও রূপপুর গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে মাহবুব হাসান রিমন।

নিহত মনির হোসেন মনি রূপপুর পুরানপাড়া গ্রামের রিকশা শ্রমিক হারুন ছেলে ও মাওলানা সাইফউদ্দিন এহিয়া ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল।

পিবিআই পুলিশ সুপার রেজাউল করিম বলেন, ২০২২ সালের ১০ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার দুদিন পর ১২ নভেম্বর করতোয়া নদী থেকে ভিকটিম মনির হোসেন ওরফে মনিরের ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করে শাহজাদপুর থানা-পুলিশ।

এ ঘটনায় ২১ নভেম্বর নিহতের বাবা হারুন অর রশিদ অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ হিসেবে পানিতে ডুবে উল্লেখ করা হয়। থানা-পুলিশও মৃত্যুর একই কারণ উল্লেখ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে আদালতে বাদী নারাজির আবেদন করলে বিচারক অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে আদেশ দেন।

পিবিআই মামলার তদন্তকালে গোয়েন্দা রিপোর্ট ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আবদুল কাদের এবং মাহবুব হাসান রিমনকে গত ১৩ আগস্ট আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করে বলেন, মনির হোসেনের সঙ্গে তাদের চারজনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তারা প্রায়ই একসঙ্গে মাদকসেবন (গাঁজা) করতেন। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বন্ধুরা মিলে থানার ঘাট ব্রিজের পাশে নদীর ধারে বসে মাদকসেবন করেন। এসময় মনির হোসেনের কাছে সবাই মাদকের টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে চারজন মিলে মনিকে মারপিট করলে মনির নিস্তেজ হয়ে পড়ে। পরে হত্যাকে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রমাণা করার জন্য তাকে নৌকায় তুলে করতোয়া নদীতে ফেলে পালিয়ে যায়। ১৪ আগস্ট আবদুল কাদের ও গত ১৬ আগস্ট মাহবুব হাসান রিমন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাজ্জাদুর রহমান জানান, ময়নাতদন্ত রিপোর্টে মৃত্যুর কারণ হিসেবে পানিতে ডুবে উল্লেখ করায় থানা-পুলিশও  পানিতে ডুবে মৃত্যু হিসেবেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তদন্তে গাফিলতি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, পুলিশতো তদন্ত সংস্থা নয়, পিবিআই হলো তদন্ত সংস্থা। উচ্চতর তদন্তের কারণে আসল সত্য উদঘাটন হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গামাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার জানান, ময়নাতদন্তে গাফিলতি রয়েছে কিনা ময়নাতন্তে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক টিম বলতে পারবেন। বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হবে।