সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কেবিনে রোগী ভর্তির কার্যক্রম শুরু

সংগৃহীত ছবি

সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কেবিনে রোগী ভর্তির কার্যক্রম শুরু

অনলাইন ডেস্ক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কেবিনে রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের উপস্থিতিতে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) হাসপাতালের সপ্তমতলায় কেবিনে এ রোগী ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। একই সঙ্গে সুপার স্পেশলাইজড হাসপাতালের তৃতীয়তলায় কার্ডিওভাস্কুলার ও স্ট্রোক সেন্টারে হাসপাতালের প্রথম ৫০ জন রোগীর সফলভাবে এনজিওগ্রামসহ স্টেন্টিং বা রিং বসানোর কার্যক্রমের বিষয়ে উপাচার্যকে অবহিত করেন সংশ্লিষ্টরা।

অনুষ্ঠানে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সপ্তমতলায় ফিতা কেটে কেবিনে রোগী ভর্তির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন উপাচার্য।

এসময় অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি স্বপ্নের প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি ইচ্ছে, কোনো মানুষকে যাতে দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে না হয়। তার আগে আমাদের জানতে হবে কোন কোন কারণে রোগীরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যায়। রোগীরা ক্যানসার চিকিৎসার জন্য বাইরে যায়, আমরা সেটি এখানে চালু করতে চাই।

রোগীরা হার্টের চিকিৎসার জন্য বাইরে যায়, লিভারের চিকিৎসার জন্য যায়। এসব চিকিৎসাও এখানে দেওয়া হচ্ছে। আমরা আগামীতে হেয়ার ইমপ্ল্যান্ট, স্টেমসেল থেরাপি, বন্ধ্যাত্বদূরীকরণে কাজ করবো। শিশু হৃদরোগের জন্য রোগীরা বাইরে যায়। এর চিকিৎসা এখানে দেওয়া হবে।

অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা, নার্সদের আচার-আচরণ অন্যদের থেকে আলাদা। তারা আলাদাভাবে নিজেদের একটি অবস্থান তৈরি করেছেন। এ হাসপাতালের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, একজন চিকিৎসক এক রোগীকে কমপক্ষে ১০ মিনিট সময় দেবেন এবং ২০ জনের বেশি রোগী দেখবেন না। এমন করে সেবা দেওয়া হলে রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকরা কথা বলার সুযোগ বেশি পাবেন। চিকিৎসকরা রোগীদের বেশি কাউন্সেলিং করার সুযোগ পাবেন। আমাদের এখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে রোগীরা যথাযথ সেবা পায় বলেই এত ভিড়। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের সেবায় সন্তুষ্ট বলেই রোগীরা সকাল থেকে চিকিৎসকদের জন্য অপেক্ষা করেন।

রোগীদের সঙ্গে কেমন আচারণ করা উচিত সে সম্পর্কে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, রোগীদের সঙ্গে মিষ্টি ভাষায় কথা বলা উচিত। রোগীদের ‘মা’, ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করা উচিত। রোগীরা নানান কথা বলবেন, কিন্তু তাতে বিরক্ত হওয়া যাবে না। রোগীরা অনেক কথাই বলেন, চিকিৎসকরা সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে রোগীর সেবা দিয়ে থাকেন।

এসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. ফজলুর রহমান, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফারুক হোসেন, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক ক্যাথল্যাব ইনচার্জ সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রসুল আমিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ কুমার কুন্ডু, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দেবাশীষ বৈরাগী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের অবকাঠামোর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই বছর ২৭ ডিসেম্বর এই হাসপাতালে ৫টি সেন্টারে ১৪টি বিভাগের বহির্বিভাগ থেকে বিশেষজ্ঞ সেবা প্রদান শুরু হয়। এরই মধ্যে গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত এ হাসপাতাল থেকে বহির্বিভাগ থেকে ২৬ হাজার ৯৯ জন রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ সেবা নিয়েছেন। ৫ জুলাই ২০২৩ সালে এই হাসপাতালে অন্তঃবিভাগ চালু হয়। গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত অন্তঃবিভাগ থেকে জেনারেল ওয়ার্ডে ১২৩ রোগী, করোনারি কেয়ার ইউনিটে ৭২ রোগী সেবা নিয়েছেন। অন্তঃবিভাগ চালুর পর কার্ডিওভাস্কুলার সেন্টারের হৃদরোগ বিভাগে ৫০ রোগীর দেহে একই সঙ্গে করোনারি এনজিওগ্রাম ও স্টেন্টিং বা রিং সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ১ আগস্ট দেশে প্রথমবারের মতো শিশুর দেহে সফল কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। জাতীয় শোক দিবসে সফলভাবে কিডনি প্রতিস্থাপনও করা হয় এই হাসপাতালে। ২১ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত এ হাসপাতাল থেকে এমআরআই এক হাজার ৪৯টি, সিটি স্ক্যান ৬১৪টি, বিএমডি ১৮টি, আল্ট্রাসনোগ্রাম ১৮১টি, এক্সরে ২২টি সম্পন্ন করা হয়েছে। ল্যাব সার্ভিস বিভাগে মোট ৫২ হাজার ৪৪২টি টেস্ট সম্পন্ন করা হয়েছে।

এছাড়াও, কার্ডিওভাস্কুলার অ্যান্ড স্ট্রোক সেন্টার থেকে ইসিজি ৬৮৯টি, ইটিটি ৩১টি, ইকো কার্ডিওগ্রাফি ২৫৬টি, সিএজি ২৩টি, সিএজি ইউথ পিসিআই ২০টি, ডিএসএ ২১টি, পিসিআই ৬টি সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়া হেপোটোবিলারি, হেপাটোলোজি অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার থেকে ইআরসিপি ১০টি, এন্ডোস্কপি ৮১টি, কোলোনোস্কপি ৪টি ও কিডনি ডিজিস অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার থেকে ২২টি ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হয়েছে। গত ৫ জুলাই থেকে ২০ আগস্ট সন্ধ্যা পর্যন্ত এ হাসপাতাল থেকে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার সেন্টারে ৫টি ওটি, হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়াটিক অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার থেকে ৭টি ওটি, ইমারজেন্সি অ্যান্ড ট্রমা সেন্টার থেকে ২টি ওটি, কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টার থেকে ৩টি সফল কিডনি প্রতিস্থাপনসহ একটি কিডনির ওটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।

News24bd.tv/AA