বিমান বিধ্বস্তে নিহত কে এই প্রিগোজিন?  

সংগৃহীত ছবি

বিমান বিধ্বস্তে নিহত কে এই প্রিগোজিন?  

অনলাইন ডেস্ক

রাশিয়ায় উত্তরাঞ্চলে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে দেশটির ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন নিহত হয়েছেন। ওই বিমানে মোট ১০ জন ছিলেন, যাদের সবাই মারা গেছেন।

নিহত ভাগনার প্রধান প্রিগোজিন আসলে কে। কীভাবে তিনি পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন আর কীভাবেই বা নিজের এমন প্রভাববলয় এবং পাশবিকতা চালানোর কুখ্যাতি অর্জন করলেন?

ইউক্রেনে রাশিয়ার চলমান যুদ্ধে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন ছিলেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তিনি ও তার বাহিনী। ছিলেন পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তিনিই হয়ে উঠেন পুতিনের সবচেয়ে বড় শত্রু।

বুধবার রাশিয়ার তেভের অঞ্চলে বিমান বিধ্বস্তে দুর্ঘটনার শিকার প্রাইভেট জেটটি মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গে যাচ্ছিল।

তেভের অঞ্চলের উত্তর-পশ্চিমের খুজেনকিনো গ্রামের কাছেই এ বিমান দুর্ঘটনা ঘটে।

প্রিগোজিনের বেড়ে ওঠা সেন্ট পিটার্সবুর্গে। এই সেন্ট পিটার্সবার্গেই জন্ম রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। ১৯৭৯ সালে প্রিগোশিন প্রথম যখন অপরাধী সাব্যস্ত হন, তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮। চুরির দায়ে আড়াই বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। অর্থাৎ পরবর্তী সময়ে যদি আবার একই অপরাধ করেন তাহলে কারাভোগ করতে হবে। এর দুই বছর পরই চুরি ও ডাকাতির দায়ে তাঁকে ১৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯ বছর প্রিগোজিনকে কারাভোগ করতে হয়েছিল।

কারাভোগ শেষে ব্যবসা শুরু করেন প্রিগোজিন। সেন্ট পিটার্সবার্গে কয়েকটি দোকান দিয়ে হট ডগ বিক্রি শুরু করেন তিনি। ব্যবসা বেশ ভালো চলতে শুরু করে। এর কয়েক বছর পর নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে শুরু হয় অরাজকতা। এই সময়ে কৌশলে শহরে একটি বিলাসবহুল রেস্তোরাঁ খোলেন তিনি। এই সময় থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গের বিত্তবান, ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা শুরু হয় প্রিগোজিনের। পরে সেটা শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে রাশিয়ায় প্রভাব আছে, এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করে।

পিটার্সবার্গে প্রিগোজিনের রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে একটির নাম ছিল নিউ আইল্যান্ড। ভাসমান এ রেস্তোরাঁটি নেভা নদীতে ভেসে বেড়াত। পুতিনের বেশ পছন্দের রেস্তোরাঁ ছিল এটি। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পুতিন তাঁর বিদেশি অতিথিদের এই ভাসমান রেস্তোরাঁয় আনতেন। এভাবে পুতিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন প্রিগোজিন।

এক সাক্ষাৎকারে প্রিগ্রোজিন বলেছিলেন, ‘অতিথিদের নিজের হাতে খাবার প্লেট দিতে আমার কোনো সমস্যা যে নেই, তা দেখেছিলেন পুতিন। জাপানের প্রধানমন্ত্রী মোরিকে নিয়ে যখন তিনি আমার রেস্তোরাঁয় আসেন সেবার তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল। ’

২০০০ সালের এপ্রিল মাসে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিরো মোরি সেন্ট পিটার্সবার্গ সফর করেছিলেন। তার কিছুদিন আগে ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার শাসনভার নিয়েছেন। ব্যক্তিগত উদ্‌যাপনেও প্রিগোজিন ছিলেন পুতিনের প্রিয়পাত্র। ২০০৩ সালে এই নিউ আইল্যান্ডে নিজের জন্মদিন উদ্‌যাপন করেছিলেন পুতিন।

এরও কয়েক বছর পরের কথা। প্রিগ্রোজিনের মালিকানাধীন একটি ক্যাটারিং কোম্পানি কনকর্ড ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহ করার দায়িত্ব পায়। ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহের মধ্য দিয়ে ‘পুতিনের পাচক’ পরিচিত পান প্রিগোজিন।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল দোনবাসে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পর প্রিগোজিন একজন নির্মম সেনাপতি হিসেবে আবির্ভূত হন। তিনি গড়ে তুলেন ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ। এই বাহিনী ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে লড়াই করে। বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার স্বার্থের পক্ষে কাজ করেছে।

২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর পর পূর্ব ইউক্রেনের সলেদার শহর দখলের রুশ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ওয়াগনার যোদ্ধারা। এটি বাখমুত থেকে কয়েক মাইল উত্তর-পূর্ব দিকে। তবে গত কয়েক মাস ধরে প্রিগোজিন রাশিয়ার সেনাবাহিনী, সেনাপ্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনা করে আসছেন। মে মাসে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন বাখমুত থেকে তার যোদ্ধাদের প্রত্যাহার করা হবে। এর আগে কয়েক মাস ধরে পর্যাপ্ত গোলাবারুদ না পাওয়ার অভিযোগ করে আসছিলেন তিনি।

তিনি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরুর পরই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সমালোচনায় রুশ সরকারের অনেকেই ক্ষুব্ধ এবং তাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

সূত্র: বিবিসি, সিএনএন 
  

এই রকম আরও টপিক