আত্মশুদ্ধি ও কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চলছে নানামুখী কার্যক্রম। বন্দীদের আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারাগারে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন কারখানা, মিনি গার্মেন্ট, শিক্ষালয়সহ নানা কর্মক্ষেত্র। জানা গেছে, এসব কারখানা থেকে উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করে তার ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া হচ্ছে কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত বন্দীদের। যাতে করে জেল থেকে ফিরে তাকে হতাশায় ভুগতে না হয়।
কারার উর্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নত দেশে জেলখানা এখন সংশোধোনাগারে পরিণত হয়েছে। তাই আমরাও চেষ্টা করছি কারাগারকে সংশোধনাগারে রুপান্তর করতে। যার কারণে কারাগারে ‘রেনেসাঁস’ নামক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
জানা গেছে, কারাগারের তৈরি শাড়ি, লুঙ্গি, নারী-পুরুষ-শিশুদের জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য বাজারে বিক্রি হয়। এসব পণ্য থেকে আয়ের একটি বড় অংশ (সরকারি নিয়ম অনুযায়ী) পারিশ্রমিক হিসেবে বন্দীদের দেয়া হয়। যা তারা পরিবারের খরচের জন্য পাঠিয়ে থাকেন। আবার যাদের পরিবারে তার টাকার প্রয়োজন নেই তিনি জমিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে জেল থেকে বের হয়ে ওই টাকা দিয়েই নিজের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রিয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ বলেন, কারাগার নিয়ে মানুষের নেগেটিভ ধারণা রয়েছে। তবে দিন বদলাচ্ছে, পৃথিবীও বদলাচ্ছে। উন্নত দেশগুলো এখন কারাগারকে সংশোধোনাগারে পরিণত করছে।
তিনি বলেন, কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগে. জেনা. এ এস এম আনিসুল হকের নেতৃত্বে আমরাও সেটা করছি। তিনি বলেন, বন্দীদের মধ্যে মাদক, চুরি, ছলচাতুরী, যৌতুক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি অপেক্ষাকৃত লঘু অপরাধে আটক পাঁচশতাধিক বন্দী নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। যাতে জেল শেষে বাড়ীতে ফিরে তারা নিজেরা এসব কর্ম করে চলতে পারেন।
এছাড়া প্রশিক্ষিত বন্দীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি চাকরি প্রদান, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অপরাধী পুনর্বাসন সমিতিসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তা দিয়ে সেলাই মেশিন, রিকশা, ভ্যান কিনে দেয়া হচ্ছে।
সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ আরো বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে রয়েছে মিনি গার্মেন্ট, জুতার তৈরির কারখানা, হস্তশিল্পসহ ছোট বড় কয়েকটি কারখানা। এখানে তৈরি পণ্য বাজারজাত করা হচ্ছে। এখান থেকে আয়ের প্রায় ৫০ ভাগ লভ্যাংশ দেয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বন্দী শ্রমিকদেরকে।
বন্দীদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার জন্য গণশিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষা, মাদকাসক্তি, যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ বিরোধীসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাদের আত্মোপলব্ধির জন্য মেডিটেশনও চলছে। বিনোদনের জন্য রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, দাবা, লুডু, ক্যারামসহ বিভিন্ন ইনডোর গেমস, টেলিভিশন, বিনোদন ও শিক্ষামূলক প্রদর্শনী উপভোগ, বিতর্ক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পত্রিকা, ম্যাগাজিন পাঠ এবং পাঠাগার ব্যবহার।
তিনি বলেন, এসব কাজে কারাগারে যথেষ্ট জনবল নেই। তবে সবাই দাগী আসামিও নয়। অনেক ভালো শিক্ষিত ব্যক্তি নানা কারনে কারাগারে আসেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাও প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে থাকেন। কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক প্রায় ১০ হাজার বন্দীর মধ্যে ১ হাজার বন্দী বিভিন্ন মোটিভেশনাল ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ২০৪১ সালের উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জেলও বসে নেই। তবে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়লে এবং কারাগারের দিকে আরো নজর দিলে দ্রুতই কারাগারগুলো সংশোধনাগারে পরিণত হতে পারে।