আল্লাহ লজ্জাশীলদের ভালোবাসেন

প্রতীকী ছবি

আল্লাহ লজ্জাশীলদের ভালোবাসেন

অনলাইন ডেস্ক

ইসলামের দৃষ্টিতে লজ্জাশীলতা মহৎ একটি মানবগুণ। তা নারী-পুরুষ সবার জন্যই অপরিহার্য। মানবিক বোধ অনুসারে কোনো কাজকে ধর্মীয় বা নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যে যতটুকু মন্দ বিবেচনা করে, সে চায় তার মন্দ কাজটা ততটাই গোপন থাকুক। কেউ জেনে গেলে সে মনে মনে সংকুচিত হয়।

এ সংকোচবোধের নামই লজ্জা।

আল্লাহ লজ্জাশীলদের ভালোবাসেন

মানবচরিত্রের এ গুণটি আল্লাহর নিকট খুবই পছন্দনীয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বনি আদম, আমি তো তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকবে এবং যা সৌন্দর্যস্বরূপ। আর তাকওয়ার পোশাক, তা উত্তম।

’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৬)

কোনো কোনো তাফসিরবিদের মতে, এখানে তাকওয়ার পোশাক বলতে ‘লজ্জাশীলতা’ বোঝানো হয়েছে। (তাফসিরে আলুসি)

মুসা (আ.) যখন মাদয়ান শহরে শুয়াইব (আ.)-এর পশুকে পানি পান করান। শুয়াইব (আ.) কন্যাদ্বয় থেকে মুসা (আ.)-এর বিবরণ শুনে তাঁকে ডেকে আনতে এক কন্যাকে পাঠান। কন্যার লজ্জাশীল চলন আল্লাহর কাছে এতই পছন্দ হয় যে তার বর্ণনা কোরআনে উল্লেখ হয়েছে—‘তখন নারীদ্বয়ের একজন লজ্জাজড়িত চরণে তার কাছে এলো এবং বলল...। ’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৫)

নবীপত্নীর লজ্জা

আমাদের নবীজি (সা.) অত্যধিক লাজুক ছিলেন, তেমনি তাঁর স্ত্রীরাও অনেক লাজুক ছিলেন। আয়েশা (রা.)-এর একটি হাদিস দ্বারা বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায় যে তাঁরা কতটা লাজুক ছিলেন। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি যখন সেই ঘরে প্রবেশ করতাম যেখানে রাসুল (সা.) শুয়ে আছেন, তখন আমি আমার চাদর খুলে রাখতাম। আমি মনে মনে বলতাম, তিনি তো আমার স্বামী, আর অন্যজনও আমার পিতা। কিন্তু যখন ওমর (রা.)-কে এখানে তাঁদের সঙ্গে দাফন করা হলো, আল্লাহর কসম, তখন থেকে আমি যখনই ওই ঘরে প্রবেশ করেছি, ওমর (রা.)-এর কারণে লজ্জায় শরীরে চাদর পেঁচিয়ে রেখেছি। (মুসনাদে আহমদ) সুবহানাল্লাহ, একটা মানুষ কতটা লজ্জাশীল হলে মৃত মানুষের সঙ্গেও পর্দা করেন।

লজ্জা ঈমানের অঙ্গ

পবিত্র হাদিস শরিফে লজ্জাকে ঈমানের অঙ্গ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ঈমানের সত্তরটিরও বেশি শাখা আছে, তন্মধ্যে সর্বাগ্রে হলো এই ঘোষণা যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই; আর সর্বনিম্ন হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জা হলো ঈমানের একটি শাখা। ’ (মুসলিম : হাদিস : ৫১)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানের স্থান জান্নাত। পক্ষান্তরে নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অঙ্গ, দুশ্চরিত্রের স্থান জাহান্নাম। (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৯)

নবীজি (সা.) লজ্জাশীলতার প্রতি উম্মতকে এতটাই গুরুত্বারোপ করেছেন যে তিনি তাকে ইসলামের মূল চরিত্র বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রতিটি দিনেরই একটি চরিত্র আছে। ইসলামের মূল চরিত্র হলো লজ্জাশীলতা। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৮১)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘তুমি যখন নির্লজ্জ হয়ে পড়বে তখন যা ইচ্ছা তা-ই করো। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬১২০)

লজ্জাশীলতা যার মধ্যে যতটুকু থাকে, কোনো অন্যায় করতে সে ততটাই সংকোচবোধ করে। ফলে সহজেই সে বেঁচে যায় বহু অন্যায় ও অসামাজিক কাজ থেকে। লজ্জাশীলতার কারণেই মন্দ কাজ পরিহার করে চলতে হয় সুন্দর ও ন্যায়ের পথে। প্রিয় নবীজি (সা.)-এর কী অর্থপূর্ণ সরল বাণী—‘লজ্জাশীলতা শুধু কল্যাণ নিয়ে আসে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬১১৭)

আনাস (রা.) থেকে হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নির্লজ্জতা ব্যক্তিকে ত্রুটিপূর্ণ করে। আর লাজুকতা তার শ্রীবৃদ্ধি করে। (তিরমিজি হাদিস : ১৯৭৪)

বেহায়াপনা কিয়ামতের আলামত

লজ্জাশীলতার বিপরীত চরিত্র হলো বেহায়াপনা, যা কখনো কোনো খাঁটি মুমিনের মধ্যে থাকতে পারে না। এটা ঈমানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বেহায়াপনা কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন। কিয়ামতের আগে বেহায়াপনা বাড়ার কথা হাদিসে আছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর একটি হলো, বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা। ’ (মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ৭৫১৮)

অন্য বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উম্মতের ক্রান্তিকালীন এমন অবস্থা আসবে যে পুরুষ পথিমধ্যে জনসম্মুখে নারীসঙ্গম করবে, তখন যে ব্যক্তি তাদের এ কথা বলবে—‘যদি তুমি এই দেয়ালের পেছনে তাকে নিয়ে সরে যেতে’ সে ব্যক্তি হবে ওই যুগের সবচেয়ে বড় ওলি-বুযুর্গ ও ভদ্র মানুষ। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৬১৮৩)

লজ্জাশীল হয়েও প্রয়োজন পূরণ সম্ভব

হ্যাঁ, কল্যাণের পথে অথবা দ্বিনি-দুনিয়াবি কোনো প্রয়োজন পূরণে লজ্জাশীলতা বাধা হওয়া উচিত নয়। সাহাবায়ে কেরাম পবিত্রতাসংক্রান্ত খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করতেন। তিনিও নিঃসংকোচে জবাব দিতেন। অথচ হাদিসের ভাষ্য অনুসারে, তিনি ছিলেন পর্দানশীন কুমারীর চেয়েও বেশি লাজুক। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪১৮০)

এতে বোঝা গেল যে স্বাস্থ্যসচেতনতার নাম দিয়েও লজ্জা ত্যাগ করার সুযোগ নেই। কেননা রাসুল (সা.), সাহাবায়ে কেরাম এবং পূর্বাপর হাজার বছর ধরে সভ্য পৃথিবীতে নারী-পুরুষ লজ্জাশীলতা ঠিক রেখেই সব প্রয়োজন পূরণ করেছে। বর্তমানেও বিশ্বের কোটি কোটি পর্দানশীল মা-বোনেরা লজ্জাশীলতা বহাল রেখেই সব প্রয়োজন পূরণ করছেন।

 

 

এই রকম আরও টপিক