সাবেক স্বামীর পরিকল্পনায় অপহৃত হন এনবিআরের নারী কর্মকর্তা: র‍্যাব

সংগৃহীত ছবি

সাবেক স্বামীর পরিকল্পনায় অপহৃত হন এনবিআরের নারী কর্মকর্তা: র‍্যাব

অনলাইন ডেস্ক

সাবেক স্বামীর পরিকল্পনায় অপহরণ করা হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেই নারী কর্মকর্তাকে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার প্রধান আসামি ও তাঁর সহযোগীদের দেওয়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পেয়েছে র‍্যাব। র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাব-১ ও র‍্যাব-৩-এর যৌথ অভিযানে গতকাল শুক্রবার রাতে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মামলার প্রধান আসামি মো. মাসুম ওরফে মাসুদ, সহযোগী আব্দুল জলিল ওরফে পনু ও মো. হাফিজ ওরফে শাহিন।

 

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।  

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, এনবিআরের ওই নারী কর্মকর্তার সাবেক স্বামীর নাম হারুন-অর রশিদ। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তাঁর স্ত্রীর ওপর ক্ষোভ ছিল।

সেই ক্ষোভ থেকেই তিনি সাবেক স্ত্রীকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনায় ব্যবহার করা হয় ওই নারীর সাবেক গাড়িচালক মাসুদকে। মাসুদের নেতৃত্বে অপহরণ মিশনে অংশ নেন সাতজন।  

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী সাবেক স্বামী হারুনের মাধ্যমে হাতিরঝিল এলাকায় ৫০ হাজার টাকায় একটি বাসা ভাড়া করা হয়। তবে অপহরণের রাতে ওই বাসায় নেওয়া সম্ভব না হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকার একটি গ্যারেজে নেওয়া হয়। সেখানে গাড়িতেই ওই নারী কর কর্মকর্তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। পরদিন মাদারটেক এলাকায় যাওয়ার পর সেখানে ওই নারী কর্মকর্তার চিৎকারে এলাকাবাসীর হাতে আটক হন তিনজন। পালিয়ে যান মাসুদসহ চারজন।  

এ ঘটনায় ওই নারী কর্মকর্তা ঢাকার রমনা থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। মামলার প্রধান আসামি করা হয় মো. মাসুদকে। মাসুদ গত জুলাই মাসে ওই নারীর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন। গত ১ আগস্ট তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।  

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ নম্বর ফটক থেকে অপহৃত হন ৪৮ বছর বয়সী ওই নারী কর্মকর্তা। তখন তিনি মাইক্রোবাসে করে মগবাজার থেকে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন। এ সময় কয়েক ব্যক্তি মাইক্রোবাস থামিয়ে চালককে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে গাড়ি থেকে চালককে নামিয়ে মাইক্রোবাসসহ ওই নারীকে অপহরণ করেন তাঁরা।  

জনাকীর্ণ এলাকা থেকে প্রকাশ্যে একজন সরকারি কর্মকর্তাকে অপহরণের ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো খোঁজ ছিল না। পরদিন বেলা ২টার দিকে ওই নারী কৌশলে একটি গাড়ি থেকে নেমে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন ঢাকার সবুজবাগ এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন।  

এলাকাবাসী কর্তৃক আটক তিনজনকে ওই নারীর করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় রমনা থানার পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সাইফুল ইসলাম, আবু বকর সিদ্দীক ও ইয়াছিন আরাফাত ওরফে রাজু। একই ঘটনায় জড়িত শান্ত পলাতক রয়েছেন।  

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মাসুদ আগে ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ছিলেন বলে জানিয়েছেন। গত ১ আগস্ট তাঁকে শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরিচ্যুত করা হয়। গ্রেপ্তার মাসুদের মধ্যে ভুক্তভোগীর প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও আক্রোশ তৈরি হয়।  

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার মাসুদ জানান, তাঁকে চাকরিচ্যুতির পর ভুক্তভোগীর প্রথম স্বামী হারুন অর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। ভুক্তভোগী নারী কর কর্মকর্তাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকার একটি বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য মাসুদকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখান হারুন। এ জন্য মাসুদকে অগ্রিম ৭০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। মাসুদের নেতৃত্বে সাতজন অপহরণে অংশ নেন। গত ১৫ আগস্ট রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় গ্রেপ্তার মাসুদ তাঁর পরিচিত হাফিজ, পনু, রাজু, সাব্বির, সাইফুল ও শান্তকে পরিকল্পনার কথা জানান ও সবাইকে টাকা ভাগ করে দেন। তাঁরা রাজধানীর বেইলি রোড এলাকা থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণের সিদ্ধান্ত নেন। ভুক্তভোগীর বর্তমান গাড়িচালকের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত হাফিজের সুসম্পর্ক থাকায় ভুক্তভোগীর অবস্থান গাড়িচালকের কাছ থেকে জেনে মাসুদকে জানান।  

গ্রেপ্তার মাসুদ জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবকে জানান, নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণের পরই বিষয়টি প্রথম স্বামী হারুনকে জানানো হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আগেই ৫০ হাজার টাকায় হাতিরঝিলে ভাড়া করা একটি বাসার ঠিকানা নেওয়ার কথা জানান হারুন। কিন্তু সেখানে বাসার মেইন গেট বন্ধ পাওয়ায় ভুক্তভোগীকে নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়িতে করে ঘুরে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।  

কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মাসুদের দেওয়া তথ্যমতে বাসায় ঢুকতে না পারায় সাবেক স্বামী হারুন ভুক্তভোগী নারীকে রাতে অন্যত্র রাখার নির্দেশ দিলে মাসুদ গাড়িসহ রাত ১২টার দিকে কাঁচপুর এলাকায় পরিচিত একটি গ্যারেজে নিয়ে যান। সেখানে নেওয়ার পথে অপহৃত নারীকে নির্যাতন করা হয়, প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। তাঁর কাছে থাকা নগদ দেড় লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়।  

১৮ আগস্ট দুপুরে খাওয়ার সময় হলে মাসুদ, রাজু ও সাব্বির খাবার আনতে যান এবং পনু, সাইফুল ও শান্ত গাড়ির বাইরে পাহারায় থাকেন। এ সময় সুযোগ বুঝে ভুক্তভোগী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে আটক করে। মাসুদ, পনু ও শান্ত পালিয়ে যান। পরে পুলিশ এসে ভুক্তভোগীকে হেফাজতে নেয় এবং সাইফুল, সাব্বির ও রাজুকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের কাছ থেকে ভুক্তভোগীর ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন উদ্ধার করে।  

নারী কর কর্মকর্তাকে অপহরণের মূল পরিকল্পনাকারী সাবেক স্বামী হারুন কোথায় জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, ‘তিনি মগবাজারের বাসাতেই অবস্থান করছেন বলে জেনেছি। ’ 

অপহরণে তাঁর সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েও কেন এখনো তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানলে জানতে পারেন। তবে র‍্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তারের পর মামলার মূল আসামি মাসুদ আজ সকালে নারী কর কর্মকর্তা অপহরণে মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক স্বামী হারুনের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। হারুনের নাম মামলার এজাহারে নেই। যে কারণে প্রাপ্ত তথ্য তদন্ত সংস্থাকে জানানো হবে। তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে।

News24bd.tv/AA