চিকিৎসক পরিচয়ে সুমনার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ, বিএমডিসিতে আবেদন

সংগৃহীত ছবি

চিকিৎসক পরিচয়ে সুমনার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ, বিএমডিসিতে আবেদন

অনলাইন ডেস্ক

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের সুমনা ইসলাম। তার বিরুদ্ধে চিকিৎসক পরিচয়ে নানা অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে। তিনি রাজধানীতে থেকে এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তার বিএমডিসি সদস্যপদ থাকলে সেটি বাতিল করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জমা পড়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি)।

সুমনার বিরুদ্ধে জমা অভিযোগ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুমনা ইসলাম ডাক্তার পরিচয় দিলেও তিনি কোনো চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তা ছাড়া কোনো কাজ বা ব্যবসা না করলেও তিনি অর্ধ কোটি টাকার গাড়িতে ঘোরাফেরা করেন ও বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে থাকেন বলে জানা যায়। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিয়ের নামে প্রতারণা, অন্য নারীদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে জোর করাসহ আরও অনেক অভিযোগ।

সম্প্রতি মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল থেকে ডিগ্রি নিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরিরত মালিহা মাহজাবিন নামে এক ভুক্তভোগী নারী সুমনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে অভিযোগ দিয়েছেন।

বিএমডিসিতে প্রেরণ কার আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ডা. সুমনা ইসলাম নামে এক প্রতারক নারীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি রাশিয়ার পিপলস ফ্রেন্ডশিপ ইউনিভার্সিটি থেকে ডিগ্রি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ডাক্তার হিসেবে চাকরি করেন বলে পরিচয় দেন আমাকে। তিনি সরকারি চাকরি নিয়ে দিতে পারবেন বলে আমাকে দেখা করতে বলতেন। আমি সরল বিশ্বাসে তার সঙ্গে দেখা করি। অনেক বড় বড় কর্মকর্তার সঙ্গে ও প্রধানমন্ত্রীর একজন আত্মীয়ের সঙ্গে তার অনেক পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা আছে বলে তিনি জানান। তাদের সঙ্গে তার ছবি দেখে আমি বিশ্বাস করি। আমাকে সীমান্ত স্কয়ারে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে বলেন। তার সঙ্গে অনেক ছেলে বন্ধু থাকত। আমাকেও তিনি তার বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ট হতে বলতেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, সুমনা ডাক্তার পরিচয় দিলেও তার অনেক আচরণ এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন আমার কাছে খুব রহস্যজনক মনে হওয়ায় আমি খোঁজখবর নেওয়ার জন্য ঢাকা মেডিকেলে আমার পরিচিতদের মাধ্যমে খবর নিয়ে দেখি এই নামে কোনো ডাক্তার নেই। পরবর্তীতে তার একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু তরিকুলের মাধ্যমে জানতে পারি তার মিথ্যাচার ও প্রতারণার মাধ্যমে বিলাসী জীবন-যাপনের কথা। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, সুমনা ইসলাম ডাক্তার পরিচয় বহন করে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুমনা ইসলামের বাড়ি পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামে। তার বাবার নাম নুরুল ইসলাম। তিনি পেশায় ছিলেন একটি সরকারি অফিসের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। তিনি কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। সুমনার বড় ভাই মৃত রেজাউল ইসলাম পিরোজপুর জেলা ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। বাবা ও ভাই মারা যাওয়ার পরে তাদের পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়। এর পরেই মূলত শুরু হয় সুমনার প্রতারণার পথে পা বাড়ানো।

এদিকে বিয়ের নামে বহু পুরুষকে ফাঁদে ফেলে অর্থসম্পদ লুট করার অভিযোগ রয়েছে সুমনা ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও জমি দখল ও ভাঙচুরের অভিযোগে মামলাও রয়েছে সুমনার বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালে জিয়ানগরে মাদ্রাসার ভবন ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার ৫ দিন পর ৭৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলার সাক্ষী উপজেলার নলবুনিয়া গ্রামের আ. হালিম খলিফ ওরফে বাবুল পণ্ডিত বাদী হয়ে পিরোজপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে রেজাউল ইসলাম ও সুমনা ইসলামসহ ১৬ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ঘটনাটি তখনকার সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

মালিহা মাহজাবিন তার অভিযোগের বিষয়ে বলেন, আমি সরল বিশ্বাসে তার কথায় ভরসা করেছিলাম। কিন্তু পরে দেখি তিনি আসলে একজন প্রতারক। বিভিন্নজনের সঙ্গে তার ছবি দেখিয়ে তিনি এভাবে  সহজ সরল মানুষরে সঙ্গে প্রতারণা করে বেড়ান। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি বিএমডিসিতে অভিযোগ দিয়েছি। আমি  তার প্রতারণার বিচার চাই।

এ সব অভিযোগের বিষয়ে  চিকিৎসক পরিচয় দেয়া সুমনা ফোনে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো মিথ্যা। আমি এমন কোনো কাজ করিনি।

তবে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সদস্যপদ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমার সদস্যপদ এবং কোথায় প্রাকটিস করি এ সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে চাই না।

News24bd.tv/