আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর যেন হতদরিদ্রদের গলার কাঁটা

সংগৃহীত ছবি

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর যেন হতদরিদ্রদের গলার কাঁটা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। সারাদেশের ন্যায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় হতদরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য ১০১টি ঘর নির্মাণ করা হয়। তবে এসব সরকারি ঘর পেয়েও ভালো নেই আশ্রয়ণের বাসিন্দারা। অল্প কিছুদিনের মধ্যে দেখা দিয়েছে ঘরে ফাটল।

সেইসঙ্গে বেড়েছে ঋণের বোঝা। ভুক্তভোগীরা বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।  

জানা গেছে, হরিণাকুণ্ডুতে তৈরি করা হয়েছে ১০১টি বিনামূল্যের ঘর। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৩০টি, ২য় পর্যায়ে ১১টি ও ৩য় পর্যায়ে ৬০টি ঘর নির্মাণ করা হয়।

তৃতীয় পর্যায়ের প্রতিটি ঘরের জন্য সরকারি বরাদ্দ ছিল ২ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ঘর নির্মাণ করে সুবিধাভোগী পরিবারগুলোর নিকট ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তরের কথা থাকলেও ঘর নির্মাণে উপকারভোগীদেরকে বিভিন্ন খরচ করতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

জানা যায়, হরিণাকুণ্ডুর ইউএনও সুস্মিতা সাহার নির্দেশে মুজিববর্ষ উপলক্ষে নির্মিত তৃতীয় পর্যায়ের ৬০টি আশ্রায়নের ঘরের মেঝেতে বালি ভরাটের জন্য প্রত্যেক উপকারভোগীকে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়েছে। এছাড়াও তিন মাস ধরে খেতে দিতে হয়েছে নির্মাণ শ্রমিকদের। টিউবওয়েল মেরামত, বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার সম্পূর্ণ খরচও তাদের বহন করতে হয়েছে। এসব খরচ মেটাতে গিয়ে ভূমিহীন অসহায় পরিবারগুলোর কেউ বিক্রি করেছেন গরু-ছাগল, কেউ বা ঘরের টিন। অনেকে ধার দেনা করে ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এইসব খরচ মিটিয়েছেন।

এভাবেই হরিণাকুণ্ডুর অনেক অসহায়-দরিদ্র উপকারভোগীর গলার কাঁটা হয়েছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর। সরকারি ঘর পেয়ে দিন ফেরার পরিবর্তে তারা এখন নিঃস্ব হওয়ার পথে।

হরিণাকুণ্ডুর জোড়াদাহ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের হৃত-দরিদ্র শহিদুল ইসলাম। মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের একটি ঘর পেয়েছেন তিনি। ঘরটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। আট মাস আগে তার ঘরটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু ঘরটি নির্মাণের জন্য তার নিজের খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা।

ভায়না ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামের ৭০ বছরের বৃদ্ধা রিজিয়া খাতুন। ভিক্ষা করে সংসার চলে এই বৃদ্ধার। তাকেও নিজ খরচে ঘরের মেঝেতে মাটি ভরাট করতে হয়েছে। খাওয়াতে হয়েছে নির্মাণ শ্রমিকদের। ঘরে ওয়্যারিং ও বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য গুনতে হয়েছে ২ হাজার টাকা। লোকজনের নিকট থেকে ধারদেনা করে ও ফিতরার টাকা সংগ্রহ করে তাকে এ খরচগুলো মেটাতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

ওই একই গ্রামের আতিয়ার শাহ বলেন,আমি নিঃস্ব মানুষ। গতরে খেটে খায়। ঘরের মেঝেতে আমার নিজ খরচে মাটি তুলতে হয়েছে। ঘরে বিদ্যুতেরও কোন ব্যবস্থা ছিল না। বিদ্যুৎ নিতে আমার তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

একইভাবে ঘরের মেঝেতে নিজ খরচে মাটি ও বালি ভরাট করতে হয়েছে উপজেলার আরশীনগর গ্রামের আছিয়া খাতুন, হাসিবুল ইসলাম, লতা খাতুন, ওহিদুল ইসলাম, আদরী খাতুন, মিল্টন ইসলামের।  

জানা যায়, তৃতীয় পর্যায়ে নির্মিত ৬০ ঘরের উপকারভোগীদেরই তাদের নিজ খরচে মেঝেতে মাটি ও বালি ফেলতে হয়েছে। উপকারভোগী নির্বাচনসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কোন কাজে ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্পৃক্ত করা হয়নি বলে একাধিক চেয়ারম্যান জানান।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুর রহমান জানান, এই প্রকল্পের সকল বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজে তদারকি করেছেন। এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে একমাত্র ইউএনও স্যার সব বলতে পারবেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা জানান, ঘর নির্মাণে বরাদ্দ কম থাকায় উপকারভোগীদের আমি মাটি দিয়ে মেঝে ভরাট করতে বলেছিলাম এটা সত্য। তবে মেঝে ভরাটের জন্য যাতে তাদের খরচ না হয় সে জন্য খাস জমি থেকে মাটি এনে ভরাট করতে বলা হয়েছিল। মেঝেতে তো আমি বালি দিয়ে বলিনি। আর যে কোন ঘরেই তো যখন তখন ফাটল দেখা দিতে পারে। কোটি টাকার ঘরেও তো ফাটল ধরে।

news24bd.tv/SHS