তাওবার বিস্ময়কর ঘটনা

প্রতীকী ছবি

তাওবার বিস্ময়কর ঘটনা

উম্মে আহমাদ ফারজানা

হাদিস শরিফে একজন খুনির তাওবা করার বিস্ময়কর একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। ঘটনাটি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের নয়। এটি বনি ইসরাঈলের ঘটনা। আর এ কথা বলা বাহুল্য যে হাদিসে বর্ণিত সব ঘটনা অবশ্যই সত্য।

এতে সন্দেহ ও সংশয়ের লেশমাত্র নেই। বনি ইসরাঈলের একজন ব্যক্তি ৯৯ জন মানুষ হত্যা করে তৎকালীন দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করল। অতঃপর তাকে একজন খ্রিস্টান পাদরির কথা বলা হলো। সে তাঁর কাছে এসে বলল যে সে ৯৯ জন মানুষ হত্যা করেছে।

এ অবস্থায় তার জন্য তাওবার কোনো সুযোগ আছে কি? পাদরি বলল, নেই। ফলে লোকটি পাদরিকেও হত্যা করল। এভাবে তাকে হত্যা করে সে এক শ সংখ্যা পূর্ণ করল। অতঃপর পৃথিবীর অন্য কোনো শ্রেষ্ঠ আলেমের সন্ধান করল।

তাকে একজন আলেমের কথা বলা হলো। সে তাঁর কাছে গিয়ে বলল যে সে এক শ মানুষ হত্যা করেছে, এখন তার জন্য তাওবার কোনো সুযোগ আছে কি? আলেম বললেন, ‘হ্যাঁ, আছে। তার ও তার তাওবার মধ্যে কোন জিনিস প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল? তুমি অমুক জায়গায় চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদত করছে। তুমিও তাদের সঙ্গে ইবাদত করো। আর তোমার দেশে ফিরে যাবে না। কেননা ওটা খারাপ জায়গা। লোকটি নির্দেশিত জায়গার দিকে চলতে থাকল।

অর্ধেক পথ অতিক্রম করলে তার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলো। সে তার বক্ষদেশ দ্বারা সে স্থানটির দিকে ঘুরে গেল। মৃত্যুর পর রহমতের ও আজাবের ফেরেশতার মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতা বলল, এ লোকটি নিখাদ তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। পক্ষান্তরে আজাবের ফেরেশতা বলল, লোকটি তো কখনো কোনো ভালো কাজ করেনি। এমন সময় অন্য এক ফেরেশতা মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের কাছে আগমন করলেন। তখন তারা তাকেই এ বিষয়ের সালিস নিযুক্ত করল। তিনি বলেন, ‘তোমরা উভয় দিকের জায়গার দূরত্ব মেপে দেখো। যে দিকটি নিকটবর্তী হবে, সে দিকেরই সে অন্তর্ভুক্ত হবে। ’

আল্লাহ তাআলা সামনের ভূমিকে আদেশ করলেন, তুমি মৃত ব্যক্তির নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং পেছনে ফেলে আসা স্থানকে আদেশ দিলেন, তুমি দূরে সরে যাও। অতঃপর জায়গা পরিমাপের পর যেদিকের উদ্দেশ্যে সে যাত্রা করেছিল, তারা তাকে সেদিকেরই এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী পেল। ফলে তাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো এবং রহমতের ফেরেশতা তার জান কবজ করল। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৭০)

শিক্ষা

আলোচ্য হাদিস থেকে জানা যায়—

১.  আল্লাহর রহমত থেকে কখনো নিরাশ হওয়া যাবে না।

২.  আল্লাহর রহমত থেকে কাউকে হতাশ করা যাবে না।

৩.  পাহাড় সমান পাপ হলেও মহান আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করে দিতে পারেন।

৪.  খাঁটি অন্তরে তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে এলে যে কারো তাওবা আল্লাহ কবুল করেন।

৫.  মূর্খ ব্যক্তি কোনো সমস্যায় পড়লে কোরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে অভিজ্ঞ কোনো আলেমের কাছে জিজ্ঞেস করে তার সমস্যার সমাধান করে নেবে।

৬.  কোনো বিষয়ে যথাযথভাবে না জেনে সিদ্ধান্ত দেওয়া যাবে না।

এই রকম আরও টপিক