নিজ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বানরটিকে বাঁচানো গেল না

সংগৃহীত ছবি

নিজ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বানরটিকে বাঁচানো গেল না

অনলাইন ডেস্ক

বৈদ্যুতিক শক খেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সেই বানরটিকে বাঁচানো গেলো না। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হেফাজতে থাকা অবস্থায় বানরটি মারা যায়।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে বানরটি উদ্ধার করে সিভাসুতে আনা হয়। এরপর টানা পাঁচদিন চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং জেলা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয় বানরটিকে।

বানরটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য।

বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকেই বানরটির অবস্থার অবনতি ঘটে। প্রথম তিনদিন বানরটি এদিক-ওদিক ছোটাছুটি ও নিজ থেকে খাবার গ্রহণ করলেও বৃহস্পতিবার থেকে নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়। এমনকি নিস্তব্ধ অবস্থায় খাঁচায় শুয়ে থাকে এটি।

তার দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা কর্মীদেরও তেমন কোনো সাড়া দিচ্ছিল না সে। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বানরটিকে নেওয়া হয় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিভাসু)। কিন্তুু চিকিৎসক না থাকায় বানরটির চিকিৎসা দিতে কিছুটা দেরি হয়।

সেখানে বানরটিকে পরপর দুটি স্যালাইন দেওয়া হয়। তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন সিভাসুর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। চিকিৎসা শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর বানরটিকে পুনরায় নগরের ষোলশহরে অবস্থিত বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগে নিয়ে আসা হয়।

সেখানকার কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাতে বানরটির শরীরে স্যালাইন লাগানো ছিল। চিকিৎসকের পরামর্শ মতে আমরা তরল খাওয়ানোর চেষ্টা করি। কিন্তুু সে কোনোধরনের খাবার নেয়নি। সকাল থেকেও একদম সাড়াশব্দ নেই। পরে দুপুর সাড়ে ১২টায় আমরা তার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হই। ’

তিনি আরও বলেন, বিকেলে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ক্যাম্পাসেই বানরটিকে মাটিচাপা দেওয়া হবে।

স্থানীয়রা জানান, ২০ দিন আগে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পাহাড় থেকে লোকালয়ে নেমে আসে বয়স্ক একটি পুরুষ বানর। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, বাজারসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরতে থাকে এটি। স্থানীয়রা বানরটিকে নিয়ম করে খাবার-দাবারও দিচ্ছিলেন। প্রতিদিন সকাল ৯টায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনেই বসে থাকতো বানরটি। বিকেলে হাসপাতালের আশপাশের বন-বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতো।

গত ২৬ আগস্ট এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে গিয়ে সীতাকুণ্ড বাজারের একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিতে শক খেয়ে মারাত্মক আহত হয় বানরটি। স্বেচ্ছাসেবীদের কেউ কেউ এটিকে ধরে চিকিৎসা দিতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। তারপরের কয়েকদিন বানরটির আর দেখা মেলেনি। সবশেষ গত শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) বানরটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। পরে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশনায় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বানরটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেন।

কিন্তু পরের দিন রোববার ও তৃতীয় দিন সোমবারও বানরটি হাসপাতালে হাজির হয়। দুই দফায় বানরটির ড্রেসিং করিয়ে দেন সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা। পরে খবর পাঠানো হয় সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে। খবর পেয়ে সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাহমিনা আরজু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লাইভস্টক এক্সটেনশন অফিসার (এলডিডিপি) প্রিয়াংকা চৌধুরীসহ চিকিৎসকদের একটি টিম নিয়ে হাসপাতালে হাজির হন।

ওইসময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মী, স্থানীয় যুবকদের সহযোগিতায় বানরটিকে ধরে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন তারা। কিন্তুু ক্ষতের আকার বড় ও গুরুতর হওয়ায় এটির উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্যকে বিষয়টি জানান।

ওইদিন দুপুরের পর দীপান্বিতা ভট্টাচার্যের পাঠানো টিম বানরটিকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসেন। এরপর বানরটিকে চিকিৎসার জন্য নগরীর ওয়ারলেসে অবস্থিত চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। বানরটিকে ড্রেসিং শেষে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের দপ্তরে পাঠানো হয়।

সেখানে একটি কাঠের খাঁচায় বানরটিকে রাখা হয়। তিনজন কর্মী এটির দেখাশোনায় নিয়োজিত ছিলেন। পরে আরও দুদিন সিভাসুতে চিকিৎসা দেওয়া হয় বানরটিকে। বৃহস্পতিবার বিকেলে বানরটির অবস্থার অবনতি হয়। আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের হেফাজতে মারা যায় বানরটি।

news24bd.tv/AA