এবার লাগাতার কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি 

সংগৃহীত ছবি

এবার লাগাতার কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি 

আরেফিন শাকিল 

সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসাবে এবার লাগাতার কর্মসূচিতে যাচ্ছে বিএনপি। রাজশাহীর পথসভায় রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আজ সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা দেবে বিএনপি।  

নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা জানান, হামলা-বাধা আসবে ধরে নিয়েই এবার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা তো গেলো এক বছর ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন করছি।

কোথাও কিন্তু আমাদের লোকজন ঝামেলা করেনি, তবুও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি দল হামলা করেছে। আমাদের বেশ কয়েকজন নেতা মারাও গেছে। তবুও আমরা হিট করার নির্দেশ দিইনি। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন।
নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে। তাদেরও তো ধরে রাখতে হবে। ’

সর্বশেষ ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখের কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিএনপি হোঁচট খায়। দলের দায়িত্বশীল অনেক নেতাই সেদিনের কর্মসূচিতে যায়নি। সে জন্য পদ হারান ছাত্রদল সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ। মৌখিকভাবে সর্তক করা হয় আরও কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ পদধারী নেতাকে। ফলে, লাগাতার কর্মসূচি বাস্তবায়নে এবার হার্ডলাইনে বিএনপি।  

সূত্র জানায়, লাগাতার কর্মসূচি শুরু হবে চলতি মাসের ১৯ তারিখ থেকে টঙ্গী ও কেরানীগঞ্জে গণমিছিলের মাধ্যমে। ২১ সেপ্টেম্বর ভৈরব বাজার থেকে সিলেট পর্যন্ত রোডমার্চ। ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় পেশাজীবীদের র্যালি। ২৩ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী ও উত্তরায় র্যালি এবং বরিশাল থেকে পটুয়াখালী রোডমার্চ। এরপর একদিন বিরতি দিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর নয়াবাজার ও আমিনবাজারে পর্যন্ত হবে গণমিছিল।  

২৬ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগে রোডমার্চ। ২৭ সেপ্টেম্বর গাবতলী ও ফতুল্লায় র্যালি করবে স্থানীয় বিএনপি। ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় নারীদের র্যালি। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর কৃষক-শ্রমিকদের র্যালি। ১ অক্টোবর ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জ রোডমার্চ। ৩ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম রোডমার্চ। বিএনপির সবশেষ স্থয়ী কমিটির বৈঠকে এই কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। এসব দিনে এক দফা দাবিতে কর্মসূচি পালব করবে  যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোও।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিউজ টোয়েন্টিফোরকে বলেন, ‘বিরোধী মতের ওপর সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করে আমরা কর্মসূচি রেডি করছি। পরে কী কর্মসূচি আসবে সেটা সরকারের দমন-পীড়নের ওপর নির্ভর করছে। ’ 

তিনি জানান, বিএনপি মধ্য-অক্টোবর পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। এরপর তফসিল ঘোষণা বন্ধের দাবিতে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।  

বিএনপি নেতারা বলছেন, লাগাতার কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সরকার তাদের দাবি মানতে বাধ্য হবে। এছাড়া বিএনপির আন্দোলনে জনসমর্থন দেখানো ও সরকারের দমন-পীড়নের বিষয়ে বিদেশির দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এসব কর্মসূচি গুরুত্ব দিয়ে পালন করার পরিকল্পনা বিএনপির।  

এ জন্য কমিটি পূর্ণগঠন ও কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির জন্য জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছেন তারা। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সরকার দাবি না মেনে নির্বাচন করে ফেলতে পারলে, আরও পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করবে। আর তাতে মুখ থুবড়ে পড়বে বিএনপি। দল থেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বেন অধিকাংশ নেতাকর্মী। অস্তিত্ব সংকটে পড়বে জিয়া পরিবারের রাজনীতি। পাশাপাশি বিএনপির হাইকমাণ্ডকে ভাবাচ্ছে, সদ্য নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএম।  

দলের ভিতের আলোচনা আছে, দল দুইটিতে বিএনপি থেকে নিষ্ক্রিয় ও বহিষ্কৃত নেতারা যোগ দিতে পারেন। যারা এক সময়ে দলে প্রভাবশালী ছিলেন। তারা এখন নিজের এক সময়ের অনুসারীদের দিয়ে দলে ভাঙন ধরাতে পারেন। যারা বর্তমান নিয়মে আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবেন। এমন সব বাস্তবতায়  চলমান আন্দোলনের এবার সফল সমাপ্তি চান তারেক রহমান ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতারা।  

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল, ভোট হতে পারে ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি।

news24bd.tv/আইএএম