পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) তে ম্যানারস বা শিষ্টাচার শেখানোর নামে নবীন শিক্ষার্থীদের ওপরে নেমে এসেছে র্যাগিং নামের নীরব অত্যাচার।
সিনিয়রদের র্যাগিং অধিকাংশ নবীন শিক্ষার্থীকে ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। কারণ র্যাগিং এর বিষয় প্রকাশ করলে জুনিয়রদের শারীরিক নির্যাতনসহ নানাভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী র্যাগিং এর চাপ সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা গেছে, পাবিপ্রবিতে ১৫ তম ব্যাচের নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। নতুন ব্যাচের ক্লাস শুরুর পর থেকেই ম্যানারস শেখানোর নামে নবীন শিক্ষার্থীদের ওপরে সিনিয়রদের র্যাগিং তৎপরতা শুরু হয়।
শিষ্টাচার শেখানোর নামে যখন তখন নবীন শিক্ষার্থীদের বিভিন্নস্থানে তলব, বকা ঝকা বা কখনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও সিনিয়রদের ভয়ে তা প্রকাশ করতে পারেন না নবীন শিক্ষার্থীরা। আর নবীনদের এই ভয়কে পুঁজি করে পাবিপ্রবিতে র্যাগিং যেনো অলিখিত এক নিয়মে পরিণত হয়েছে।
সম্প্রতি পাবিপ্রবির ইতিহাস বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী শিমু তালুকদার বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি আবাসিক ছাত্রী মেসে র্যাগিং এর শিকার হন। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থী প্রায় সবার জানা থাকলেও অজানা কারণে কেউ এ বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা বলতে চাননি।
র্যাগিং এর শিকার শিমু তালুকদার জানান, সিনিয়র আপুরা তাকে যখন তলব করে তখন সে শারীরিক অসুস্থ থাকার কথা জানালেও রাত ১১টা পর্যন্ত সিনিয়র আপুরা তাকে মেসের ছাদে নিয়ে গিয়ে বকাঝকা করে। একপর্যায়ে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভয়ে ক্যামেরার সামনে কিছু না বললেও তার মতো এমন ঘটনা যেনো অন্য কারও সাথে না ঘটে সে কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিমু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। ভর্তির পর নতুন পরিবেশে এসেই র্যাগিং এর শিকার হওয়া নবীন শিক্ষার্থীদের ওপরে তা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তারা অবিলম্বে র্যাগিং বন্ধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রধান ড. মুহা. হাবিবুল্লাহ ও ছাত্র উপদেষ্টা মো. নাজমুল হোসেন জানান, শিমুর ওপর র্যাগিং এর বিষয়টি তারা সামাজিক মাধ্যম থেকে জেনেছেন। এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে
বিগত কয়েক বছর ধরে চলে আসা র্যাগিং নামে নীরব এই সন্ত্রাস প্রতিরোধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, প্রভোস্টসহ অন্যান্য শিক্ষকদের সমন্বয়ে ' অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি' গঠন করা হলেও আজ পর্যন্ত তা সাধারণ নবীন শিক্ষার্থী বা র্যাগিং এ ভুক্তভোগী কারও উপকারে আসেনি।
পাবিপ্রবির অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির আহবায়ক ড. মো. রাহিদুল ইসলাম জানালেন, শিমু তালুকদারের ওপরে র্যাগিং এর বিষয়টি জানার পরে তারা এ বিষয়ে খবর নিচ্ছেন। ঘটনার সত্যতা পেলে এর সাথে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।