ভারত যখন চাঁদে পৌঁছেছে এবং জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে, তখন পাকিস্তান বিশ্বের কাছে অর্থ ভিক্ষা করছে বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের স্বেচ্ছা-নির্বাসিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। একই সঙ্গে পাকিস্তানের চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য দেশটির সাবেক সেনা জেনারেল ও বিচারকদের দায়ী করেছেন তিনি।
গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানের অর্থনীতিতে ভয়াবহ পতন চলছে। যা দেশটির দরিদ্র জনসাধারণের জীবনযাপনের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
সোমবার সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) এক দলীয় বৈঠকে নওয়াজ শরিফ বলেন, ‘আজ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী দেশে দেশে তহবিল ভিক্ষা করতে যাচ্ছেন, যখন ভারত চাঁদে পৌঁছেছে এবং জি-২০ সম্মেলন করছে। ভারতের এসব অর্জন কেন পাকিস্তান করতে পারেনি। এর জন্য কে দায়ী?’
তিনি বলেন, অটল বিহারী বাজপেয়ী যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, তখন ভারতের রিজার্ভ ছিল মাত্র এক বিলিয়ন ডলার।
নগদ অর্থ সংকটে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দ্বারস্থ হয়েছে পাকিস্তান। গত জুলাইয়ে পাকিস্তানে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট দিয়েছে আইএমএফ। দেশটির অস্থিতিশীল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার সরকারি প্রচেষ্টায় সমর্থন জানাতে ৯ মাসের জন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই অর্থ দিয়েছে সংস্থাটি।
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ চার বছরের স্বেচ্ছা নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে আগামী ২১ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। দেশটির আগামী নির্বাচনে তার রাজনৈতিক দল পিএমএল-এনের রাজনৈতিক প্রচারণার নেতৃত্ব দিতে তিনি দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন।
২০১৮ সালে পাকিস্তানের বহুল আলোচিত আল-আজিজিয়া মিলস ও অ্যাভেনফিল্ড দুর্নীতি মামলায় নওয়াজকে দোষী সাব্যস্ত করে দেশটির আদালত। এই মামলায় লাহোরের কোট লাখপাত কারাগারে সাত বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন তিনি। কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার পর আদালতের অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর লন্ডনে যান নওয়াজ শরিফ।
সেই সময় তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে বলা হয়েছিল, ইমরান খানের সরকার ও তার সমর্থকরা নওয়াজ শরিফকে বিষ প্রয়োগের চেষ্টা করেছে। যে কারণে তিনি কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে লন্ডনের হার্লি স্ট্রিট ক্লিনিক ও লন্ডন ব্রিজ হাসপাতালে চার মাস ধরে চিকিৎসা নেন তিনি।
চলতি বছরের জুনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও সিনেটে সংশোধিত জাতীয় নির্বাচন আইন-২০২৩ অনুমোদন পায়। এর ফলে নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের একতরফা ক্ষমতা পায় পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। একই আইনে নির্বাচনে দণ্ডিত কোনও প্রার্থীকে নির্বাচন কমিশনের অযোগ্য ঘোষণা করার মেয়াদ পাঁচ বছর করা হয়।
দেশটির বিরোধী রাজনীতিকরা বলছেন, কেবল নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী আইনে সংশোধন আনা হয়েছে। এর ফলে নওয়াজ শরিফ ছাড়াও দেশটির নবগঠিত রাজনৈতিক দল ইস্তেহকাম-ই-পাকিস্তান পার্টির (আইপিপি) পৃষ্ঠপোষক জাহাঙ্গীর খান তারিন উপকৃত হবেন উল্লেখ করে আইনটির সমালোচনা করেন তারা।
পাকিস্তানের সংবিধানের ৬২(১)(এফ) অনুচ্ছেদের অধীনে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় আগে নওয়াজ ও তারিনকে নির্বাচনে আজীবনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছিল।
গত বছরের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে পিটিআই প্রধান ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দেশটির ক্ষমতায় আসে পিএমএল-এন নেতৃত্বাধীন জোট। পিএমএল-এন ক্ষমতায় ফেরার পরপরই শরিফ পরিবারের সদস্যদের অন্যান্য মামলা থেকেও খালাস দেওয়া হয়।
পিএমএল-এন বলছে, আগামী মাসে লাহোরে ফেরার আগে নওয়াজ শরিফের জন্য আগাম জামিন নিশ্চিত করবে দল। একই সঙ্গে দলটির প্রতিষ্ঠাতাকে জমকালো অভ্যর্থনার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
নওয়াজ শরিফ ২০১৭ সালের সামরিক ও বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষে তীব্র সমালোচনা করেছেন। দেশটির এই দুই বিভাগ তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য দায়ী বলে অভিহিত করেছেন নওয়াজ।
শরীফ তার আবেগঘন বক্তৃতায় বলেছেন, যে ব্যক্তি (নওয়াজ) দেশকে বিদ্যুতের লোডশেডিং থেকে মুক্ত করেছেন, তাকে চারজন বিচারক বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ও আইএসআইয়ের প্রধান জেনারেল ফয়েজ হামিদ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে ছিলেন বলেও অভিযোগ করেছেন পিএমএল-এনের এই প্রধান।
‘(সাবেক) প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসার ও বিচারক আসিফ সাঈদ খোসা সাবেক সেনাপ্রধান ও গোয়েন্দা প্রধানের মূল হাতিয়ার ছিলেন। তাদের অপরাধ হত্যার চেয়েও বড়। তাদের ক্ষমা করা হলে তা জাতির প্রতি অবিচার হবে। তারা ক্ষমার যোগ্য না,’ তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসব কথা বলেছেন নওয়াজ শরিফ।
সূত্র: পিটিআই।
news24bd.tv/AA