‘পীরচাঁনের পালা’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ২১ সেপ্টেম্বর

সংগৃহীত ছবি

‘পীরচাঁনের পালা’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ২১ সেপ্টেম্বর

অনলাইন ডেস্ক

নরওয়ের নাট্যকার হেনরিক ইবসেনের নাটক ‘পিয়ের গিন্ট’ আশ্রয়ে বাংলাদেশের নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হকের নাটক ‘পীরচাঁনের পালা’। শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের ২৮তম নতুন প্রযোজনা। রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির মঞ্চায়ন হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ২১  ও  শুক্রবার ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায়।

নাটক নির্মাণ প্রসঙ্গে শব্দ নাট্যচর্চা কেন্দ্রের প্রাণপুরুষ এবং নির্দেশক খোরশেদুল আলম বলেন, হেনরিক ইবসেন আশ্রয়ে সৈয়দ শামসুল হকের রচনা ‘পীরচাঁনের পালা’য় আমি নির্মাণ পর্বে প্রাচ্য-পাশ্চত্যে, ঐতিহ্য- আধুনিকতা, প্রাজ্ঞতা-বিনোদন এই ত্রয়ের মেলবন্ধন ঘটানোকে প্রাধান্য দিয়েছি।

আশা করছি দর্শককে তাল-লয়-সুরে সময়টাকে উপভোগ্য করে তুলতে পারব।

এ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র পল্লী বাংলার যুবক পীরচাঁন– যার জীবন আশৈশব বঞ্চনায় পূর্ণ। জন্মেই হারালেন পিতাকে, ভিটে মাটির তিন ভাগের দেড় ভাগ কেড়ে নিলো যমুনার বান। বাকি দেড় আনা খাজনা বকেয়ার কারণে দেওয়ানের কাছে বন্দি।

শেষ অবলম্বন তার দারিদ্র‍্য নিমজ্জিত ক্ষয়িষ্ণুপ্রায় মা আসিয়া। মা আসিয়া ভাবে তার পুত্র পীরচাঁন যখন ভালোই বাসে মাতব্বর কন্যা সোহাগীকে তখন তাদের বিয়ের মধ্যে দিয়ে মাতব্বরের ধন সম্পদ আহরণের কারণে তাদের অবস্থার উন্নতি হবে। তাদের নিরন্ন পেটে অন্ন জুটবে, পরনে বস্ত্র আসবে, জুটবে মাথা গুজবার মত ঠাঁই।  

কিন্তু, সেই স্বপ্ন পূরনের মাঝে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যায় জোতদার আসমত। আসমত বিয়ে করে সোহাগীকে। পীরচাঁন বাধা দিতে গেলে আসমতের লাঠিয়ালদের আঘাতে সে মিশে যায় কাদামাটিতে। জীবন এবং মৃত্যুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে তার শৈশব কৈশোরের কল্পনা আজ বাস্তব হয়ে গেল। পীরচাঁন কায়াবতী, ছায়াবতী আর মায়াবতী পরীদের ডানায় ভর করে উড়াল দিয়ে কামরূপ কামাখ্যায় পৌঁছে পরীরাজ্যের আতিথিয়েতা পায়।  

রাজা তার কন্যার সাথে পীরচাঁনকে বিয়ে দিতে চাইলে পীরচাঁন শুধু যে রাজকন্যা ও অর্ধেক রাজত্ব চেয়ে বসে তাই নয় বরং পরীরাজ্য ছেড়ে সে তার মায়ের কাছে এবং মাতৃভূমিতে ফিরতে চায়। রাজা যতই বলে পরীস্থানের স্বর্গসুখ ফেলে কেন পীরচাঁন তার দুঃখ আর অনাহারের দেশে ফিরবে!

 সর্বত্র যেখানে অন্যায় অবিচার সেখানে তার কেন ফেরা দরকার। প্রত্যুত্তরে পীরচাঁন বলে– হোক তা দুঃখের কিংবা অনাহারের, তবু সেটিই স্বদেশ আমার।  

 হোক শুধুই অন্যায়-অবিচার, তবু সেটিই গন্তব্য আমার। পরীরাজ্য থেকে যাওয়ার শর্তে রাজি না হওয়ায় পীরচাঁন পুনঃ ফিরে আসে আসমতের লাঠিয়ালদের আঘাতে লুটিয়ে পড়া কাদামাটির প্রান্তরে। পীরচাঁন কল্পনার জগতের মোহ কাটিয়ে বাস্তবে ফিরে মায়ের দরিদ্র নিষ্পেষিত কষ্টের জীবনে আনতে চায় অর্থের মুক্তি। বনে গিয়ে কাঠ কাটে যেন হাটে বিক্রি  করে পয়সা পায়।   সেখানে সে দেখা পায় পলায়িত ও লুকায়িত তার পূর্বেকার ভালোবাসা সোহাগীকে। পৈশাচিক কামুক আসমতের হাত থেকে মুক্তি আর পীরচাঁনকে খুঁজে পেতে তার এই পলায়নবৃত্তি।  

পীরচাঁন জঙ্গলের গহীনে সোহাগীকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে। সে চায় কাঠ বিক্রির টাকায় খাজনার টাকা পরিশোধ করে মাকে তার ভিটে মাটি ফিরিয়ে দিয়ে একটু সুখি করতে। পীরচাঁন এগিয়ে চলে কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। দেওয়ান ও তার লাঠিয়াল পীরচাঁনের মা আসিয়াকে মেরে ক্ষত-বিক্ষত করে দূর তেপান্তরে ফেলে রাখে। মুমুর্ষ মা আসিয়ার পাশে শেষ পর্যন্ত পুত্র পীরচাঁন পৌঁছাতে পারলেও মায়ের অন্তিম পিপাসায় এক ফোটা পানি দিতে ব্যর্থ হয় পীরচাঁন। পীরচাঁনের মা মারা যায়।  

পীরচাঁনের কল্পনা, বাস্তব সব একে একে ভেঙ্গে যায়। এত পথ– তবু পীরচাঁনের যাবার কোন পথ নাই আজ। যে কারণে নাটক ‘পীরচাঁনের পালা’য় পীরচাঁনের অন্তিম উচ্চারণ–‘যাই আমি কোন পথে, কোথায় যে যাই–যেখানে যাই আমি, নাই আশা নাই’।

news24bd.tv/AA