আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে সাইকেলে ৪ হাজার কিমি পাড়ি

সংগৃহীত ছবি

আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে সাইকেলে ৪ হাজার কিমি পাড়ি

অনলাইন ডেস্ক

জ্ঞান অর্জনের জন্য সাইকেলে করে চার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনির একজন যুবক। মূলত ইসলামিক অধ্যয়নের জন্য মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে দীর্ঘ এই পথ সাইকেলে পাড়ি দিয়েছেন তিনি।

মামাদু সাফায়উ ব্যারি নামের ওই যুবক শেষমেষ মিশরে তার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরেছেন। এমনকি পেয়েছে পূর্ণাঙ্গ বৃত্তিও।

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক জ্ঞান অর্জনের সংকল্পে উজ্জীবিত হয়ে মামাদু সাফায়উ ব্যারি নামের গিনির এক যুবক পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে সাইকেলে করে চার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মিশরে পৌঁছেছেন এবং দেশটির মর্যাদাপূর্ণ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন।

মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে, ২৫ বছর বয়সী এই যুবক সাইকেলে করে তার দুঃসাহসী এই সফরের সময় তিনবার আটক হয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত নিজের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হন। তবে তার সেই কষ্ট মোটেই বৃথা যায়নি।

মিশরের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি কেবল ভর্তিই হননি বরং পূর্ণাঙ্গ স্কলারশিপও পেয়েছেন মামাদু।

খালিজ টাইমস বলছে, ব্যক্তি জীবনে এক সন্তানের বাবা ব্যারি মিশরের রাজধানী কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ কোর্সে ভর্তির লক্ষ্যে চলতি বছরের মে মাসে গিনিতে নিজের বাড়ি থেকে বের হন। টাইমস হায়ার এডুকেশন অনুসারে, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটি বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি। এছাড়া এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ইসলামী শিক্ষার জন্য মর্যাদাকর কেন্দ্র বলেও পরিচিত।

ব্যারি বিবিসিকে বলেন, তিনি জানতেন যে- তিনি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় এই কোর্সটিতে অধ্যয়নের ব্যয়ভার বহন করতে পারবেন না কিন্তু তারপরও কেবল একটি সাইকেল নিয়ে চার মাসের যাত্রা শুরু করেন। গিনি থেকে মিশরের পথে তিনি রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যুত্থান এবং সহিংসতায় বিপর্যস্ত পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ পাড়ি দেন। তার সাইকেলে পাড়ি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, টোগো, বেনিন এবং চাদও রয়েছে।

ব্যারি বলছেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দেশগুলোর মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করা খুব কঠিন, কারণ বর্তমানে এসব দেশে নিরাপত্তা খুব অনিশ্চিত। মালি এবং বুরকিনা ফাসোতে লোকেরা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকত যেন আমি খারাপ মানুষ। সর্বত্রই আমি সামরিক বাহিনীকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় দেখেছি। ’

গিনির এই যুবক বলছেন, মিশরে আসার পথে তিনি তিনবার আটক হয়েছেন। এর মধ্যে দুইবার বুরকিনা ফাসোতে এবং টোগোতে আটক হয়েছিলেন একবার। চাদে পৌঁছানোর পর ব্যারি সেখানকার এক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেন।

ওই সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যারির দুর্দশার কথা তুলে ধরেন এবং এরপরই গিনির এই শিক্ষার্থীটির জন্য কার্যত সাহায্যের ঢেউ শুরু হয় বলে বিবিসি জানিয়েছে।

চাদের লোকেরা অর্থ সংগ্রহ শুরু করে এবং শেষপর্যন্ত ব্যারির মিশরের ফ্লাইট টিকিট কেনার মতো যথেষ্ট তহবিল জোগাড় সম্ভব হয়। আর এতেই সুদানের মধ্য দিয়ে সাইকেল চালানো থেকে রক্ষা পান ব্যারি। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মুখে পড়েছে সুদান। তাই দেশটিতে ভ্রমণ করা খুবই বিপজ্জনক।

খালিজ টাইমস বলছে, দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে গত ৫ সেপ্টেম্বর মামাদু সাফায়উ ব্যারি মিশরে তার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান এবং ইসলামিক স্টাডিজ কোর্সে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত হন। আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের ডিন ড. নাহলা এলসেইডি তাকে বৃত্তিও প্রদান করেন।

আল আজহার ইউনিভার্সিটি ফেসবুকে ব্যারির সাথে তাদের একটি ছবি শেয়ার করেছে এবং বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী।

ড. নাহলা বলছেন, ‘আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সকল দেশ থেকে শিক্ষার্থীদের এখানে অধ্যয়নের সুযোগ দেয, তাদের যত্ন নেয় এবং অনুদান দিয়ে থাকে। ’

news24bd.tv/aa