দক্ষিণ এশিয়ায় বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিতে পারে বিএসএমএমইউ

সংগৃহীত ছবি

দক্ষিণ এশিয়ায় বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিতে পারে বিএসএমএমইউ

অনলাইন ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার জনসাধারণের রোগ নির্ণয় ও রোগতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার লক্ষ্যে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দিতে সক্ষম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনের বৈজ্ঞানিক সামিটে অংশগ্রহণ করে এ কথা বলেন বাংলাদেশের চিকিৎসকরা। নিউ ইয়র্ক সময় বুধবার সকাল ১০টায় বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের পাঁচ জন চিকিৎসক ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

বাংলাদেশের গবেষকরা চিকিৎসা গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বায়ো ব্যাংকের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

ভৌগোলিক কাঠামোতে বায়ো ব্যাংকটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠার পক্ষে নানান যুক্তি তুলে ধরেন। কারণ বাংলাদেশে একটি জনবহুল দেশ। এ দেশে নানান জাতির জনগোষ্ঠী বাস করছে। বাংলাদেশে নানান ধরনের সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে।
সরকার অনেক রোগ নির্মূল করতে সমর্থ হয়েছে। ভৌগোলিক কাঠামোগত কারণে বাংলাদেশে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা সহজতর ও ফলপ্রসূ হবে। এখানে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা গেলে প্রচুর ডাটা খুব সহজে হাতের নাগালে পাওয়া যাবে। সরকারের নানান উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোর একটি মজবুত ভিত্তি রয়েছে।  

বাংলাদেশে সরকার প্রান্তিক পর্যায়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য নানান ধরনের অবকাঠামো ও প্রতিষ্ঠান করেছে; যেগুলো বায়োব্যাংকের জন্য খুবই উর্পযুক্ত উপাদান হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও স্বাস্থ্য গবেষণায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএসআইআর ও ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় যৌথ উদ্যোগে দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট উদ্ভাবন করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যার সফল ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালও দেওয়া হয়েছে। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েই করা উচিত। এই বৈজ্ঞানিক সামিটে অংশ নেওয়া চিকিৎসক গবেষকরা এ প্রস্তাবকে ইতিবাচক গ্রহণ করেছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, ‘হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার অব বাংলাদেশ : অপরটিনিস ফর বিএসএমএমইউ টু লিড ট্রান্সন্যাশাল রিসার্চ ইন দ্য রিজন’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।  

উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশ নানান বর্ণ গোত্রের ১৭ কোটি মানুষ রয়েছে। আগে বাংলাদেশে নানান ধরনের রোগের প্রার্দুভাব ঘটেছে। যা দেশের চিকিৎসকরা সহজেই নির্মূল করতে সমর্থ হয়েছে। এখানে পোলিও রোগ, ফাইলেরিয়া, কালাজ্বর, রাত কানা রোগ ছিল। এসব রোগ নির্মূল করা হয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ইপিআই সেন্টারের মাধ্যমে ভিটামিন এ ক্যাপসুলসহ নানান রোগের টিকা দানের ফলে বাংলাদেশ থেকে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা গেছে। ফসল উঠানোর সময চাষিদের চশমা ব্যবহারে উৎসাহ ও চশমা প্রদান করার ফলে চোখের কর্নিয়া আলসার রোধ করা হয়েছে।

শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যাবস্থায় একটি শক্তিশালী কাঠামো রয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রামীণ মানুষ খুব সইজেই চিকিৎসকের কাছে আসতে পারেন। কারণ বাংলাদেশে জাতীয়, ডিভিশনাল, জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরেও সারাবিশ্বে প্রশংসিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক- ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য দিচ্ছে। এ কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ডায়াবেটিসে রোগের ওষুধ মেড ফরমিনসহ ৩২ ধরনের ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছে। এছাড়া দেশে অনেক মেডিকেল কলেজ রয়েছে। যেখান থেকে সহজেই গবেষণার জন্য ডাটা সংগ্রহ করা যাবে। এসকল স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য গবেষণার শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় তো রয়েছে। সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা গেলে পাশ্ববর্তী দেশের মানুষও উপকৃত হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিদেশি চিকিৎসক উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ভর্তি হয়েছেন। এই বায়োব্যাংক দক্ষিণ এশিয়ার মাধ্যে বাংলাদেশেই করা উচিত বলে মনে করি।  

জাতিসংঘ ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনের বৈজ্ঞানিক সামিটের চেয়ারম্যান ডেকল্যান কিরানী, নেপালের কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজের প্যাথলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাইলেশ প্রধান, ইন্দোনেশিয়ার ইপিডোমোলোজির গবেষক রাহমাহ আউলিয়া যাহরা, দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষক ডা. চো যাই ইউল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শারবিন্দু কান্তি সিনহা প্রমুখ ভার্চুয়ালি অংশ গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটির সার্বিক সমন্বয় ও সঞ্চালনা করেন আইরিশ-বাংলাদেশি ক্যানসার গবেষক ড. আরমান রহমান।

news24bd.tv/আইএএম