ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের স্বরূপনগরে নৃশংসভাবে এক বাংলাদেশি তরুণীকে খুনের অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি। তার বাড়ি বাংলাদেশের ঢাকার শ্যামপুরে।
প্রথমে হাত-পা বেঁধে অকথ্য নির্যাতন, এরপর গলার নলি কেটে তাকে খুন করা হয়।
গত মঙ্গলবার সকালের দিকে বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগর থানার গোবিন্দপুর গ্রামে একটি মাঠের মধ্যে ওই অজ্ঞাত পরিচয় তরুণীর হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অর্ধদগ্ধ লাশ উদ্ধার হয়। প্রথমে সেটি দেখতে পান গ্রামের মানুষ। খবর জানাজানি হতেই ঘটনাস্থলে এসে স্বরূপনগর থানার পুলিশ ওই গলাকাটা তরুণীর লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় শাড়াপুল গ্রামীণ হাসপাতালে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি বসিরহাট জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গলার নলি কেটে খুন করা হয় ওই তরুণীকে। তরুণীকে যাতে শনাক্তকরণ করতে অসুবিধা হয়, সেই কারণে একটি ওড়না (দোপাট্টা) দিয়ে তরুণীর মুখে বেঁধে তাতেই আগুন লাগিয়ে মুখ পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় ছোট বাঁশ দিয়ে তার হাত-পা একসঙ্গে বাঁধা ছিল। গ্রামবাসীরা যখন ওই লাশ দেখতে পান, সে সময় ওর গায়ে পরিহিত ওড়না থেকে রীতিমতো ধোঁয়া বের হচ্ছিল।
প্রথমে ওই তরুণীর নাগরিকত্বের পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও পরে জানা যায়, তিনি বাংলাদেশি নাগরিক। এমনকি শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বসিরহাট জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়, ‘নিহত ওই তরুণী বাংলাদেশি নাগরিক। ’
পুলিশ সুপার ড. জোবি থমাস জানান, মঙ্গলবার সকালে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে সরুপনগর থানার গোবিন্দপুর গ্রামে আমরা একটা অজ্ঞাত পরিচয় লাশ উদ্ধার করি। সেটি এক তরুণীর অর্ধদগ্ধ লাশ ছিল। এরপর আমরা একটা খুনের মামলা করি এবং তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শুরু করতেই ওই তরুণীর পরিচয় জানা যায়। তিনি একজন বাংলাদেশি নাগরিক, তার নাম সুমাইয়া আক্তার বৃষ্টি, তার বাড়ি বাংলাদেশের ঢাকার শ্যামপুরে। ’
পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমরা জানতে পারি ওই তরুণী মুম্বাইতে একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন। ওর সাথে পরিচয় আছে এমন একটি দালালের সন্ধান আমরা পেয়েছি। ওই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছি। স্বরূপনগরের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির নাম নাছির আলী মোল্লা। বৃহস্পতিবার রাতে বিথারী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর সাথে অন্য কোনো লোক জড়িত ছিল কি না, এগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ’
আজই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বসিরহাট মহকুমা আদালতে তোলা হবে। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পরবর্তী জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জেলা পুলিশের তরফে ১৪ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আবেদন করা হবে বলেও জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
খুনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ সুপার জানান, এখনো সেটি পরিষ্কার নয়। অভিযুক্তকে নিজেদের হেফাজতের নিয়ে আরও তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত ময়নাতদন্তে রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। তবে প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, ওই তরুণীর কাছে থাকা অর্থ ও গহনা লুট করার জন্যই তাকে খুন করা হয়েছে। কারণ, তার বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিল। সেই সময় তার হাতে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ও গহনা ছিল এবং লাশের কাছ থেকে অন্য জিনিস পাওয়া যায়নি। ’
নিহত ওই তরুণী ভিসা নিয়ে বা নাকি ভিসা ছাড়া এসেছিলেন তাও এখনো পরিষ্কার নয়। সেটাও তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। পুলিশ সুপার জানান, আমরা ওই তরুণীর ব্যাপারে আরো খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করছি। এর পাশাপাশি তাদের পরিবারের সাথেও যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং তাদের পরিবারের লোককে সমস্ত নথিপত্র নিয়ে আসতে বলা হবে। সেই সমস্ত নথিপত্র যাচাই করেই এসব ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
news24bd.tv/কেআই