বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে শক্তভাবে মাঠে রয়েছে। আওয়ামী লীগও সংবিধানের বাইরে যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে জাতীয় নির্বাচন সামনে চলে আসছে। তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হয় তা নিয়ে আছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
বাংলাদেশের এবারের নির্বাচন নিয়ে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে দেশি-বিদেশি শক্তিগুলো অনেক বেশি সক্রিয়। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে বাধাদানকারী সরকার ও বিরোধী দলের রাজনীতিক এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের ওপর ভিসা নীতি প্রয়োগ শুরু করেছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হারুন-অর-রশীদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমার মনে হয় না রাজনীতি সংঘাতের দিকে যাবে। বিএনপি হয়তো অবস্থান-ঘেরাও, হরতালের মতো কর্মসূচি দিতে পারে। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে সমঝোতা হলে পরিস্থিতির নাটকীয় পরিবর্তন হতে পারে। ’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাচনে যাওয়া ছাড়া বিএনপির বিকল্প নেই। কারণ, তাদের এক দফার আন্দোলনে সফল হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ’
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের চূড়ান্ত সফলতা পাওয়া তাঁদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে অক্টোবরে আন্দোলনের শেষ পর্যায়ের কর্মসূচি শুরু হতে পারে। আর আওয়ামী লীগ বিএনপিকে এককভাবে রাজপথ দখলে রাখতে দেবে না। এরই মধ্যে নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে মাঠে আছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপির চলমান কর্মসূচি আগামী ৫ অক্টোবর শেষ হবে। এর পর ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ধারাবাহিক কর্মসূচি দিতে পারে দলটি। সেই কর্মসূচি কেমন হবে তা নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘জনগণের শঙ্কা ভোটাধিকার নিয়ে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না তা নিয়ে। জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে চায়। কিন্তু তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। জনগণের এই শঙ্কা কাটাতে আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলনে আমরা জনগণের সমর্থন পাচ্ছি। ’
আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন প্রতিহত করতে চাইছে। তারা রাজপথে সন্ত্রাস, নাশকতা করে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। আমরা এর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় মাঠে থাকবো। ’
দুর্গাপূজার আগে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত রোড মার্চ, পদযাত্রা, সমাবেশসহ ঢাকাকেন্দ্রিক নানা কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনে নেমে যেতে পারে দলটি।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি ধীরে ধীরে সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, সংসদ ভবন, বিচারঙ্গণ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করার মতো কর্মসূচি দিতে পারে। প্রয়োজনে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচিও আসতে পারে বলে নেতারা ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আন্দোলনের মাঠ থেকে তাঁরা আর সরবেন না। ধারাবাহিক কর্মসূচি চলবে। তিনি বলেন, সরকার দাবি না মানলে আমাদের আন্দোলনও কঠোর হবে। ’
আওয়ামী লীগের দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪ অক্টোবর দেশে ফিরবেন। এ দিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গণভবন পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানো হবে। ৭ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ উপলক্ষে সেখানে বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এতে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।
বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বিকেলে দলের যৌথ সভা হবে। তাতে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ, ঢাকার পার্শ্ববর্তী সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত থাকবেন।
দলের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত কর্মসূচির পাশাপাশি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পরিস্থিতি বুঝে বিশেষ কর্মসূচি পালন করা হবে। ঢাকা মহানগর ঘিরে বিশেষ পরিকল্পনা থাকবে আওয়ামী লীগের। প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।
news24bd.tv/আইএএম