গ্রামীণ সংস্কৃতি চর্চা ও ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করছে ‘কৃষকের বাতিঘর’

সংগৃহীত ছবি

গ্রামীণ সংস্কৃতি চর্চা ও ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করছে ‘কৃষকের বাতিঘর’

অনলাইন ডেস্ক

প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষিসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে কাজ করছে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন ‘কৃষকের বাতিঘর’। স্থানীয় একদল তরুণ-তরুণী নিয়ে গঠিত এ সংগঠন কৃষকদের আধুনিক কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও প্রাণ-প্রকৃতি সচেতন হয়ে চাষাবাদের জন্য সহায়তার পাশাপাশি তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে শিক্ষা-সংস্কৃতির আলো।

সংগঠনটি একদিকে যেমন কৃষকদের সঠিক নিয়মে চাষ, সার ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে, ঠিক তেমনি কাজ করছে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও কৃষ্টি রক্ষায়। বিশেষ করে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধূলা এবং সংস্কৃতিগুলোকে নতুন করে তুলে ধরছেন সকলের সামনে।

কৃষকের বাতিঘরের কার্যক্রমে দেখা যায়, সংগঠনটি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে। সে লক্ষ্যে সংগঠনটি এ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমও গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- গ্রামীণ খেলাধুলার উন্নয়নে সহায়তা; সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও উৎসবের আয়োজন; ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।

মিরপুর উপজেলার কুশাবাড়ীয় ধলসা গ্রামের কৃষক হাসমত আলী বলেন, ‘সামাজিক পরিবর্তনের ফলে মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি ব্যস্ত।

এর ফলে মানুষ এখন ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান এবং উৎসবগুলোতে অংশগ্রহণের মতো সময় পাচ্ছে না। আবার শহরে কিছুটা হলেও গ্রাম পর্যায়ে সেরকম আয়োজন হচ্ছেও না। ফলে গ্রামের মানুষ অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে। কৃষকের বাতিঘরের উদ্যোগে গ্রামে এখন সংস্কৃতির কিছু আয়োজন হয়। ফলে আমরা বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছি। এতে আমাদের শিল্প-সংস্কৃতি চর্চার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। ’

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় কৃষকের বাতিঘরের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে চিথলিয়া গ্রামের কৃষক মো. পলাশ বলেন, ‘সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার করার জন্য উদ্যোগ প্রয়োজন। ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান এবং উৎসবগুলো আয়োজন ও তাতে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। কৃষকের বাতিঘর গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য কাজ করছে। এতে আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করি। ’

কৃষক এবং এলাকার জনগন জানান, আধুনিকায়নের ফলে গ্রামীণ জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মানুষ এখন আর গ্রামে বসবাস করতে চায় না। তারা শহরে বসবাস করদে আগ্রহী। ফলে গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রসার ঘটছে না। আবার শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মানুষ এখন আর গ্রামীণ খেলাধুলা ও বিনোদনের প্রতি আগ্রহী নয়। তারা আধুনিক খেলাধুলা ও বিনোদন উপভোগ করতে পছন্দ করে। কৃষকের বাতিঘর সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে বিভিন্ন বিষয়ের উপর বায়োস্কোপ, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উপলক্ষ্যে গ্রামীন খেলাধূলার আয়োজন করে, যা সত্যিই উপভোগ্য।  

সংস্কৃতি অঙ্গনে কৃষকের বাতিঘরের কার্যক্রম নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, প্রযুক্তির প্রসার গ্রামীণ লোকসংস্কৃতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। মানুষ এখন মোবাইল ফোন, টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদির মাধ্যমে আধুনিক সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হচ্ছে। ফলে তারা গ্রামীণ সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। সেই জায়গায় কৃষকের বাতিঘরের কার্যক্রম গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা ও ঐতিহ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সংগঠনটির কার্যক্রমে গ্রামের খেলাধূলা এবং ঐতিহ্য সংস্কৃতির উন্নয়ন হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য একটি আশার আলো।

সার্বিক বিষয়ে কৃষকের বাতিঘরের প্রতিষ্ঠাতা হোসাইন মোহাম্মদ সাগর বলেন, একটি সুন্দর জাতি গঠনের জন্য আমাদের মানবিক হওয়া প্রয়োজন। আর মানুষের মধ্যে মানবতা জাগিয়ে তোলে ঐতিহ্য-সংস্কৃতি। সেই জায়গাটি থেকে আমরা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিল্প-সংস্কৃতি চর্চা ও ঐতিহ্য রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি। আর বাঙালির তো হাজার বছরের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির ইতিহাস আছে। সেদিক থেকে আমরা মনে করি প্রান্তিক পর্যায়ে শুরু করলেও একদিন এটি আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

news24bd.tv/A