বাজারে সিন্ডিকেট বলে কোনো গোষ্ঠী নেই: পরিকল্পনা মন্ত্রী

বাজারে সিন্ডিকেট বলে কোনো গোষ্ঠী নেই: পরিকল্পনা মন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

পরিকল্পনা মন্ত্রী এম.এ. মান্নান বলেছেন, বাজারে সিন্ডিকেট বলে কোনো সংস্থা বা গোষ্ঠী নেই। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কৌশল আছে, যা প্রায়ই পণ্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। আজ শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে কৃষিজ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছা নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পণ্য পরিবহণে পথে পথে চাঁদাবাজি থাকলেও আগের চেয়ে কম।

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য দ্রুত আমদানি করতে হবে। চাহিদা মোতাবেক পণ্য আমদানিতে আমলাতন্ত্রিকতা করা যাবে না।

মন্ত্রী বলেন, ডিম আমদানির ঘোষণা এসেছিল বহু আগে। কিন্তু এখনো আমদানিকৃত ডিম বাজারে আসেনি।

এক্ষেত্রে কৃষি, বাণিজ্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়কে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পুলিশি অভিযান বা জরিমানা করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সাময়িক। টিসিবিকে জীবিত রেখে শক্তিশালী করার মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। এছাড়াও প্রয়োজনীয় পণ্য সরকারিভাবে মজুদ ও উৎপাদন বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আসছে জাতীয় নির্বাচনকালীন সময়ে চা, চিনিসহ আরো কিছু পণ্যের চাহিদা বাড়ায় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে। তবে তা নিয়ন্ত্রণযোগ্য।  

মন্ত্রী বলেন, আমাদের নবীণ অর্থনীতি, চঞ্চল অর্থনীতি। প্রতিনিয়তই ভোক্তা বাড়ছে। পণ্যের যোগান সুনির্দিষ্ট কিন্তু চাহিদা ক্রমবর্ধমান, যার ফলে মাঝে মাঝেই বাজার অস্থির ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির যৌথ আয়োজনে প্রতিযোগিতাটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
 
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়াম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দানাদার খাদ্য-শস্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাছ, মাংস, ডিম, আলু, আদা, রসুন, শাক সবজি ইত্যাদি উৎপাদনেও আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিজেস্ব চাহিদা পূরণে সক্ষম। তারপরও বাজারে দেশীয় উৎপাদিত পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। ভোক্তা পর্যায়ে যে দামে কৃষিপণ্য বিক্রি করা হয় কৃষকরা তার তিন ভাগের এক ভাগ দামও পায় না। যে আলু কৃষকরা ১০ থেকে ১২ টাকায় কেজি প্রতি বিক্রি করেছে, সেই আলুই কৃষকদের এখন ৪০-৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তাই আমি ন্যায্য দাম না পাওয়াতে কৃষকদের কাছে হাত জোড় করে ক্ষমা চাচ্ছি।  

কৃষিজ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ৭ দফা সুপারিশ করেন। সুপারিশগুলো হলো ১) উৎপাদক পর্যায়ে সমবায় শক্তি জোরদার করা। তাহলে উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে একই সাথে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে না। তখন তারা নিজেরাই নিজেদের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করতে পারবে। ২) পণ্য উৎপাদন, পরিবহন ও বিপনণ ব্যবস্থার ওপর স্থাণীয় প্রশাসনের নজরদারী বাড়িয়ে সাপ্লাই চেইন শক্তিশালী করা। ৩) কৃষকদের ন্যায্য মূল্যে বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রাপ্তির লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের এক চেটিয়া নিয়ন্ত্রণ বদ্ধ করা। ৪) পণ্য পরিবহণে পথে পথে চাঁদা প্রদান বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কেউ চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ত হলে দল থেকে তাকে বহিস্কার করা। ৫) কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, কোল্ড স্টোরেজ, মধ্যস্বত্বভোগীসহ কোনো সিন্ডিকেটের কারণে কৃষিজ পণ্যের দাম বাড়লে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সেইসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। ৬) কৃষি, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে প্রয়োজন সাপেক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুততম সময়ে কৃষিজ পণ্যের আমদানির ব্যবস্থা করা। এবং ৭) কৃষি শ্রমিকের সামাজিক নিরাপত্তা ও নারী কৃষি শ্রমিকরা যেন মজুরী বৈষম্যের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা।

কৃষিজ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাতের সদিচ্ছা শীর্ষক ছায়া সংসদে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইডেন কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক দৌলত আক্তার মালা ও সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।