বিএনপি নেতা দুলু কারাগারে, ১১ জন রিমান্ডে

সংগৃহীত ছবি

বিএনপি নেতা দুলু কারাগারে, ১১ জন রিমান্ডে

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর বাড্ডা থানায় নাশকতার অভিযোগে করা এক মামলায় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হায়দার তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মামলায় আরও ১১ জন বিএনপি নেতা কর্মীকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।  

যাদের রিমান্ডে দেওয়া হয়েছে তারা হলেন ভোলা জেলা যুবদলের সভাপতি জামাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন, মাকছুদুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, আবির ইসলাম সাত্তার, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে মামুন, শিমুল মিয়া, সোহেল, মোস্তাক হোসেন মুন্না, আব্দুল মান্নান শেখ বাবু ও শাহীনূর রহমান।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) গুলশান জোনাল টিমের এসআই রিপন মিয়া বিএনপির ১১ নেতা কর্মীকে ৫দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন এবং দুলুকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।  

একই সময় দুলুর জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী। অন্য ১১ জনের পক্ষে রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিনের আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।  

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গত ১৭ অক্টোবর বাড্ডা থানা এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে বাড্ডা থানাধীন বৈঠাখালী ৩০ ফিট রাস্তার মাথায় গ্রিন টাওয়ারের নিচ তলায় কিছু সংখ্যক লোক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার জন্য সমবেত হয়েছে বলে সংবাদ পায় পুলিশ।

রাত ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে ওই স্থানে পৌঁছামাত্র পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এ আসামিরাসহ এজাহারনামীয় পলাতক ও অজ্ঞাত আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। আক্রমণের ফলে এসআই মানিক কুমার সিকদার গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

এএসআই আল মামুন পারভেজ ও কনস্টেবল মোতাহার হোসেনসহ সঙ্গীয় অন্যান্য অফিসারদের এলোপাতাড়ি কিলঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থান জখম করে। আরও বলা হয়, ঘটনাস্থলে তারা অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর আহ্বানে সমবেত হয়েছিলেন।  

জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেন, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করে দেশে অরাজকতার মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টসহ সরকার পতনের লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক লোক ঢাকায় সমবেত করে। এ কারণে ১১ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।  

দুলু সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, তার আহ্বানে বিএনপির অন্যান্য নেতা কর্মীরা সমবেত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এ কারণে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুলুকে কারাগারে আটক রাখা প্রয়োজন।  

দুলুসহ ১২ জনকে শুনানির সময় আদালতে হাজির করা হয়। আইনজীবীদের শুনানির একপর্যায়ে দুলু আদালতের কাছে কথা বলার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দেওয়ার পর দুলু বলেন, ‘আমি অসুস্থ। ক্যানসারের রোগী। চিকিৎসক বলেছেন চার বছর বাঁচবেন। এরমধ্যে এক বছর পার হয়েছে। ’ 

দুলু আদালতকে আরও বলেন, ‘প্রতিমাসে একবার কেমোথেরাপি নেন। ওই কেমোথেরাপি আমেরিকা থেকে আনতে হয়। টাকা না থাকার কারণে গত মাসে আমেরিকা থেকে কেমোথেরাপি আসেনি। এ কারণে নিতে পারেননি। এখন এসেছে। কিন্তু কেমোথেরাপির নেওয়া অনেক খরচের বিষয়। তার কাছে টাকা নেই। তাই নেওয়া হচ্ছে না। এক সপ্তাহের মধ্যে তাকে কেমোথেরাপি নিতে হবে। ’ 

আইনজীবীরা তখন বলেন, একজন মৃত্যু পথযাত্রীকে কারাগারে পাঠানো ঠিক হবে না। এ ছাড়াও এই মামলাটা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানি করার জন্য পুলিশ এই মামলা সৃষ্টি করেছে। দুলুসহ সব আসামিদের জামিন চান আইনজীবীরা। অন্যান্য আসামিদের রিমান্ডের বিষয়ে আইনজীবীরা বলেন, ‘একটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। ’ 

দুলুসহ বিএনপি নেতা কর্মীদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন, তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ প্রমুখ।  

রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন আদালতে বাড্ডা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা মো. রাকিব।  

গতকাল ১৭ অক্টোবর রাত সাড়ে ১০টার দিকে দুলুকে গুলশানের বাসা থেকে তুলে নিয়ে মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। অন্যান্য ১১ জনকেও গত মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।

news24bd.tv/A