নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ধর্মীয় অনুশীলন

প্রতীকী ছবি

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ধর্মীয় অনুশীলন

 সানা উল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার

নারীর প্রতি যৌন ও অযৌন সহিংসতার পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নারী নিপীড়নের শিকার হচ্ছে ঘরে ও বাইরে। নারীর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধে শুধু আইনই যথেষ্ট নয়, বরং প্রয়োজন বহুমুখী উদ্যোগ, যা ইসলামী আইন ও সমাজব্যবস্থায় দেখা যায়।

ইসলামের দৃষ্টিতে ধর্ষণ

ইসলামী দণ্ডবিধিতে ধর্ষণ তাজির তথা সংশোধনমূলক কোনো অপরাধ নয়, বরং তা কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

ধর্ষণ হলো জোরপূর্বক সম্ভ্রমহানি, যা ব্যভিচারের চেয়েও গুরুতর। শরিয়তের দৃষ্টিতে জোরপূর্বক সম্ভ্রমহানি ‘মুহারাবা’র অন্তর্ভুক্ত। কোরআনে মুহারাবার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করে তাদের শাস্তি হচ্ছে—

১. তাদের হত্যা করা হবে (ফাঁসি),

২. অথবা শূলে বিদ্ধ (গুলি) করা হবে,

৩. অথবা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলা হবে,

৪. অথবা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৩)

সুতরাং ইসলামী আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হলো প্রাণদণ্ড।

রাসুল (সা.)-এর যুগে একবার এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগ করা হলে ধর্ষককে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। (তিরমিজি, হাদিস : ৪৫৪)
ধর্ষকের বিরুদ্ধে বর্তমানে নতুন প্রবর্তিত মৃত্যুদণ্ডের আইনও শরিয়তসিদ্ধ হবে বলে ঐকমত্য পোষণ করেছেন অনেক মুহাক্কিক। (আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, ৭/২৯৪)

সহিংসতা বন্ধে ধর্মীয় অনুশীলন

ধর্ষণসহ নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে নিম্নোক্ত ইসলামী বিধান অনুশীলন করা যেতে পারে।

১. আইনের শাসন : আইনের যথোপযুক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।

অপরাধী যত প্রভাবশালী হোক না কেন, ইসলাম তার শাস্তি নিশ্চিত করতে বলে। কেননা এতেই মানুষের কল্যাণ। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিবেকসম্পন্ন লোকেরা! তোমাদের জন্য কিসাসের মধ্যে জীবন রয়েছে। আশা করা যায়, তোমরা এই আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার ব্যাপারে সতর্ক হবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৯)
২. ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষাদান : নৈতিকতার চর্চা পরিবার থেকেই শুরু হওয়া উচিত।

এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চশিক্ষা—সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত নৈতিকতার ওপর বিশেষ ক্লাস ও প্রশিক্ষণ থাকা উচিত।
৩. পোশাকে শালীনতা অবলম্বন জরুরি।

৪. শিশু, শিক্ষার্থী ও মেয়েদের ক্ষেত্রে তাদের গার্ডিয়ানদের সজাগ-সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

৫. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে পর্নোসাইট, আপত্তিকর কনটেন্ট যুক্ত নাটক-সিনেমা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।

৬. সন্তানদের মোবাইল-ল্যাপটপ বা সোশ্যাল সাইট মা-বাবা বা লিগ্যাল গার্ডিয়ানদের গোচরে ব্যবহার করা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. সন্তানদের বন্ধুদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখতে হবে এবং তাদের অবাধ চলাচলে শর্তারোপ করতে হবে।

৮. ফ্রি মাইন্ডের নামে অবাধ চলাফেরার প্রতি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে হবে।

৯. সর্বোপরি ইসলামে বিধৃত মাহরাম ও নন-মাহরাম নীতি পুরোপুরি মেনে
চলতে হবে।