দর্শনার্থীর টাকার লোভে ঘুমের অষুধ খাইয়ে কুমির হত্যার অভিযোগ

দর্শনার্থীর টাকার লোভে ঘুমের অষুধ খাইয়ে কুমির হত্যার অভিযোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাট শহরতলীতে হযরত খানজাহান (রহ.) মাজার দীঘিতে মিঠা পানি প্রজাতির সর্বশেষ পুরুষ কুমির মারা গেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খানহাজানের দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোনে মাজার শরীফের খাদেম মোস্ত ফকিরের পুকুরে মাদ্রাজী পুরুষ কুমিরটি মরে ফুলে ভেসে ওঠে।

বর্তমানে মাজার দীঘিতে থাকা দুটি কুমিরের একটি মারা যাবার খবর ছড়িয়ে পড়লে শতশত মানুষ সেখানে জড়ো হয়। মিঠাপানি প্রজাতির একটি কুমির প্রায় দেড়শত বছর বেঁচে ধাকলেও এই কুমিরটি বয়স হয়েছিল মাত্র ৩০ বছর।

খানজাহান (রহ.) মাজার শরীফের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির বলছেন, দর্শনার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতে খাদেম মোস্ত ফকির কুমিরটি তার পুকুরে আটকে রেখে অধিক পরিমাণ ঘুমের অষুধ খাইনোর ফলেই কুমিরটি মারা গেছে। এ ঘটনার পর গ্রেপ্তার এড়াতে খাদেম মোস্ত ফকির পালিয়ে গেছে। খানজাহানের (রহ.) দীঘির কুমিরকে হত্যা করা হয়েছে, মাজার শরীফের প্রধান খাদেমের এমন অভিযোগের পর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের তত্ত্বাবাধানের মাদ্রাজী ওই কুমিরটির মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে দীঘি থেকে তীরে তোলা হয়েছে। মারা যাওয়া এই কুমিরটি দুবছর আগে কিছুটা অসুস্থ্য হয়ে পড়লে দুবছর আগে সুন্দরবন বিভাগ ও জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসায় পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে ওঠে।

১৪ শতকের প্রথম দিকে নিজের শাসনামলে হযরত খানজাহান এই দিঘিতে ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’ নামে দুটি কুমির নিজ হাতে দীঘিতে ছাড়েন বলে কথিত আছে। সাড়ে ছয়শত বছর ধরে বংশপরাম্বরা মাজার দীঘি সর্বশেষ কুমির ধলাপাহাড় ২০১৫ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি মরা যায়। এরপর হযরত খানজাহান (রহ.) মাজারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ২০০১ সরকার ভারতের মাদ্রাজ ক্রোডাইল ফার্ম থেকে ৭টি মিঠাপানি প্রজাতির কুমির এনে এই দীঘিতে ছাড়া হয়।

এনিয়ে ৬টি মাদ্রাজী কুমির মারা গেল। এখন পিলপিল নামে মাত্র একটি মেয়ে কুমির রইল এই ধীঘিতে।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এক এম আজিজুর রহমান জানান, খানজাহান (রহ.) মাজার দীঘির কুমির আটকে রেখে অধিক পরিমাণ ঘুমের অষুধ খাইয়ে মেরে ফেলা হয়েছে, মাজার শরীফের প্রধান খাদেম শের আলী ফকির এমন অভিযোগের পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নির্দেশে কুমিরটির কুমিরটির মরদেহের ময়নাতদন্ত করতে দীঘি থেকে তীরে
তোলা হয়েছে। এঘটনার পর যার পুকুরে কুমিরটি মরে ফুলে ভেসে ওঠে সেই খাদেম মোস্ত ফকির পালিয়ে গেছে। তাকে খোঁজা হচ্ছে।

হযরত খানজাহানের দীঘির মার যাওয়া কুমিরটির ময়নাতদন্ত দরৈর প্রধান ও খুলনা বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা, লুৎফর রহমান জানান, মারা যাওয়া পুরুষ ওই কুমিরটি দুবছর আগে কিছুটা অসুস্থ্য হলে চিকিৎসার পর পুরোপুরি সুস্থ্য হয়েছিল। মিঠাপানি প্রজাতির একটি কুমির প্রায় দেড়শত বছর বেঁচে ধাকলেও এই কুমিরটি বয়স হয়েছিল মাত্র ৩০ বছর। ধারণা করা
হচ্ছে তিনদিন আগে কুমিরটি মারা গিয়ে ফুলে ভেসে ওঠে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের পরই কুমিরটির মৃত্যুর সঠিক করা জানা সম্ভব হবে। ময়ানাতদন্তের আলামত সংগ্রেহের পর কুমিরটির মরদেহ মাজার এলাকায় মাটিচাপা দিয়ে রাখা হবে।
 

এই রকম আরও টপিক