বাংলাদেশে সংঘাতময় নির্বাচনের আশঙ্কা: আইসিজি

সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশে সংঘাতময় নির্বাচনের আশঙ্কা: আইসিজি

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংঘাতময় হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে  ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির মধ্যে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নির্বাচন বিতর্কিত বা নির্বাচনে কারচুপি হলে তা থেকে বড় ধরনের আন্দোলন দানা বাধতে পারে বলে মনে করছে আইসিজি।

শুক্রবার (২০ অক্টোবর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ক্রাইসিস গ্রুপ এই পূর্বাভাস দিয়েছে। প্রতিবেদনে এও বলা হয়, নির্বাচন ভালো না হলে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলো আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তা বা প্রতিনিধিদের ওপর ভিসা বিধি-নিষেধের মতো আরও নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।

তবে এর ফলে ভারত ও চীনের ওপর বাংলাদেশ সরকারের নির্ভরতা আরও বাড়তে পারে বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

(ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ ব্রাসেলসভিত্তিক একটি অলাভজনক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতের পাশাপাশি সম্ভাব্য সংকটগুলো নিয়ে পূর্বাভাস ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে তারা। তাদের সেই পূর্বাভাস, প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণগুলো বিশ্বে দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনে নির্ভরযোগ্য বার্তা হিসেবে বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান বিবেচনা করে।

)

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার মতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে সরকার ভারত ও চীনের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়বে—এমন আশঙ্কার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এই আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্রেরও আছে। আবার বাংলাদেশ সরকার যেন চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে না যায় সে বিষয়ে ভারতেরও দৃষ্টি আছে। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের চাপ কাটাতে বাংলাদেশের চীনকে প্রয়োজন। আবার ভারতের ওপর বাংলাদেশ সরকারের নির্ভরতাই বাংলাদেশকে খুব বেশি চীনের দিকে ঝুঁকতে দেবে না বলে মনে করা হয়।


চলতি অক্টোবর থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত যেসব দেশ সম্ভাব্য সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে তারও তালিকা করেছে ক্রাইসিস গ্রুপ। সেই তালিকায় বাংলাদেশেরও নাম আছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, জানুয়ারিতে বাংলাদেশে সম্ভাব্য নির্বাচন সামনে রেখে বা নির্বাচনের পর সম্ভাব্য সহিংস পরিস্থিতি দেখা যেতে পারে।

ক্রাইসিস গ্রুপ বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের বিষয়ে বিরোধীদের দাবি মানবে না। বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ও অব্যাহত থাকবে। তাই নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধতে পারে। আক্রান্ত হতে পারেন নির্বাচনের প্রার্থীরাও। এ সময় সরকারবিরোধী আন্দোলনে আরো সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে ইসলামী দলগুলো।

ক্রাইসিস গ্রুপের ধারণা, নির্বাচনে কারচুপির আশঙ্কায় বিরোধী দলগুলো ভোট বর্জন করতে পারে। তারা সহিংস হয়ে উঠতে পারে। নির্বাচনের পর পরিস্থিতি খুব বিশৃঙ্খল হয়ে উঠলে সামরিক হস্তক্ষেপের মতো ঘটনাও দেখা যেতে পারে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুকি-চিন ন্যাশনাল  ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে সরকারের অস্ত্রবিরতি স্থায়ী না-ও হতে পারে। কেএনএফ প্রতিপক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আবারও সংঘাতে জড়াতে পারে।

জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার মতো নতুন উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে নিষ্ক্রিয় করতে পরিচালিত সামরিক অভিযানে প্রমাণ হয় সেখানে তাদের উপস্থিতি ছিল। আগামী দিনে সেখানে উত্তেজনা বাড়তে পারে।

আরাকান আর্মির মতো মিয়ানমারভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ক্রাইসিস গ্রুপ। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন নিয়ে স্থবিরতা ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আরো সংকট সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার প্রভাব প্রতিবেশী ভারতের সীমান্তবর্তী অশান্ত রাজ্যগুলোতেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর ফলে সেখানকার বিবদমান সশস্ত্র ও নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়তে পারে। এর শিকার হতে পারে বেসামরিক জনগণ।

বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার—ত্রিদেশীয় সীমান্ত এলাকায় অস্থিরতায় এই তিন দেশের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যে বড় পরিসরে সম্পৃক্ততায় উৎসাহিত হতে পারে বলে মনে করছে ক্রাইসিস গ্রুপ।

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) এবং এর প্রতিদ্বন্দ্বী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মতো অপরাধী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও সংঘাত রোহিঙ্গা শিবিরজুড়ে দেখা যেতে পারে। তাদের কাছে সাধারণ রোহিঙ্গারা জিম্মি হয়ে পড়তে পারে।

ক্রাইসিস গ্রুপের আরো আশঙ্কা, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে দাতাদের অনাগ্রহে খাদ্যসংকট তীব্র হতে পারে। আরসাও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করতে পারে।

ক্রাইসিস গ্রুপ ধারণা করছে, তহবিল ঘাটতির কারণে জাতিসংঘকে আগামী দিনে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য সহায়তা আরো কমাতে হতে পারে। এর সুযোগ নিয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হতাশাগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের তাদের দলে টানতে পারে।

news24bd.tv/আইএএম