কখন-কীভাবে গাজায় অভিযান চালাতে পারে ইসরায়েল?

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সৈন্যদের সঙ্গে কথা বলছেন

কখন-কীভাবে গাজায় অভিযান চালাতে পারে ইসরায়েল?

অনলাইন ডেস্ক

দুই সপ্তাহ আগে ইসরায়েলের সীমান্তে ঢুকে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে গাজায় বিরতিহীনভাবে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে প্রশ্ন উঠছে ইসরায়েলের স্থল অভিযান নিয়ে।

বিশ্ববাসী জানতে চায় গাজায় ইসরায়েল স্থল অভিযান পরিচালনা করবে কি না। যদি করেও সেটা কখন, কীভাবে। খবর আল-জাজিরা।

যুদ্ধের ব্যাপারে ইসরায়েলের রাজনীতিবিদরা খুবই শক্ত অবস্থানে।

তারা মনে করছেন, যুদ্ধ বন্ধ করতে কেনো প্রভাবক কাজ করতে পারে তা অকল্পনীয়। বিতর্ক পাশে সরিয়ে ইসরায়েলের রাজনৈতিক দলগুলো একত্র হয়েছে। তারা সবাই হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে চায়।

তাদের ট্যাকটিক্যাল ও স্ট্র্যাটিজিক্যালবিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও প্রায় সব ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ গাজায় স্থল অভিযানের সমর্থন করে। ৭ অক্টোবরের হামলার বিরুদ্ধে তারা যেকোনো মূল্যেই প্রতিশোধ নিতে চায়। তবে এতে রক্ত ঝরছে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের। এখন তাদের মূল ইচ্ছা হলো গাজার ভেতরে প্রবেশ করা ও হামাস যোদ্ধাদের হত্যা করা।

ইসরায়েল কীভাবে এই স্থল অভিযান পরিচালনা করবে এবং এর জন্য কী অপেক্ষা করছে?
ট্যাকটিক্যালভাবে পরাজিত হওয়া যেকোনো সেনাবাহিনীর জন্য তাৎক্ষণিক পাল্টা হামলা পরিচালনা করা কঠিন। তাই হামলার জন্য প্রস্তুতি নিতে ইসরায়েলের পরিকল্পনা, সরঞ্জাম, সৈন্য মোতায়েন, সরবরাহ ঠিক রাখা দরকার, যা অনেকটা সময়সাধ্য ব্যাপার।

বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য সূত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে ইসরায়েল সামরিক সরবরাহের নিরাপত্তার ওপর জোর দিচ্ছে। এজন্য তাদের প্রয়োজন হতে পারে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস। যেমন যেকোনো নতুন হামলার ক্ষেত্রে তাদের আকাশ পথে হামলায় যে বোমা ব্যবহার করা হয় সেগুলোর মজুত বাড়াতে হবে।

একটি সূত্র দাবি করছে ইসরায়েল বোমাসহ নানা ধরনের সামরিক সরঞ্জাম নিজেরা উৎপাদন করলেও লজিস্টিক কমান্ডারদের চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত অস্ত্র নেই। এজন্য দেশটিকে দ্রুত সামরিক সরঞ্জামের সরবরাহ বাড়াতে হবে।

জেনারেলরা জানেন মজুত ও সরবরাহের পরিস্থিতি কখনই আদর্শ হবে না। কখন দেরি না করে পদক্ষেপ নিতে হবে সে ব্যাপারেও তারা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ইসরায়েলের সেনাবাহিনী সম্ভাবত অভিযান চালানোর প্রস্তুতির কাছাকাছি।

ইসরায়েলের রাজনীতিবিদরা এরই মধ্যে তাদের নখ কামড়ানো শুরু করেছেন এবং অভিযান এখনো শুরু না করায় সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করছেন। কিন্তু তারা জানানে, বিশেষ করে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু, সময়টি তাদের পক্ষে নয়।

৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় যখন বেসামরিক ইসরায়েলি নিহত হয় ও বেশ কিছু মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসা হয় তখন ইসরায়েল বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে সমর্থন পায়। যদি সে সময়ই তারা স্থল অভিযান শুরু করতে পারতো তাহলে গাজায় স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সমর্থন পেতো দখলদার বাহিনী।

কিন্তু গাজায় স্থল অভিযান না চালিয়ে আকাশ পথে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে বহু বেসামরিক ফিলিস্তিনি হতাহত হয়। অব্যাহত থাকে তাদের বোমা হামলা। আর এতেই ইসরায়েলের প্রতি বিশ্বজুড়ে সমর্থন কমেছে।

প্রতিদিনই এখন দাবি তোলা হচ্ছে এই বর্বরতা বন্ধ করতে হবে। ইসরায়েলের হামলায় চার হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। তাদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই শিশু।

হামলা চালানো হয়েছে একটি হাসপাতালেও। সেখানে পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত হয়। এরপরই বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ আরও দ্বিগুণ হয়। এতে ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, তাদের প্রতি বিশ্ব সমর্থন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দ্রুত অভিযান শুরু করতে হবে। যদিও তাদের সামরিক বাহিনী শতভাগ প্রস্তুত নয়।

স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে ইসরায়েলি বাহিনীকে হামাসের হাতে বন্দিরা কোথায় আছে সে বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার তথ্য-উপাত্ত যাচাই বাছাই করছে। কিন্তু তারা জানেন এ ব্যাপারে তারা পর্যাপ্ত সময় পাবেন না।

কখন এই স্থাল অভিযান শুরু হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে প্রধান প্রস্তুতি শেষ। যেকোনো সময় তাদের স্থল হামলা শুরু হতে পারে। হামলার ধরন কেমন হবে তাও বোঝা যাচ্ছে। এটি স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে সমন্বিতভাবে হতে পারে। বিশেষ করে মধ্যরাতের দিকে।

news24bd.tv/A