হতশ্রী বাংলাদেশের ভরসা ‘সেই মাহমুদউল্লাহ’

সংগৃহীত ছবি

হতশ্রী বাংলাদেশের ভরসা ‘সেই মাহমুদউল্লাহ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের তুলোধুনা করে প্রোটিয়ারা। চলতি বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটারদের ব্যাটে  আগুন ঝড়ছে। তাদের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বোলাররা।  টাইগারদের বিপক্ষে আজকের ম্যাচের  শুরুতে ব্যাট করে কুইন্টন ডি কক ও হেনরিক ক্লাসেনের ঝড়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা।

৩৮৩ রানের লক্ষ্য খেলতে নেমে শুরুতেই দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বড় লক্ষ্য খেলতে নেমে দলের রান ৩১ রানেই তানজিদ তামিম, নাজমুল শান্ত ও সাকিব আল হাসানের আউটের পর দিশেহারা হয়ে পড়ে টাইগাররা।  এ যেন সেই চিরচেনা বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা।

আফ্রিকান ব্যাটাররা যেখানে টাইগার বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করেছে সেখানে প্রোটিয়া বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারলো না সাকিব-শান্ত-তানজিদরা।

তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে বাংলাদেশি ব্যাটিং লাইনআপ। ব্যতিক্রম শুধু ‘বাতিলের খাতায় ফেলা’ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শান্ত-সাকিবদের আসা-যাওয়ার মধ্যেও এক প্রান্ত আগলে রাখেন মাহমুদউল্লাহ।  রীতিমতো ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে একাই লড়ছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।

এদিন বাংলাদেশের আলোচিত ব্যাটাররা যেখানে রানের দেখাই পাচ্ছিলো না ; বাজে শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসছিল, সেখানে ব্যাটিংয়ে নেমেই একমাত্র মাহমুদউল্লাহ দৃঢ়চিত্তে এক প্রান্ত আগলে করলেন বহুল কাঙ্খিত সেঞ্চুরি। তিন অঙ্কে পৌঁছাতে তিনি খরচ করেছেন ১০৫ বল। মাহমুদুল্লাহর অসাধারণ সেঞ্চুরির উপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ সবকটি উইকেট হারিয়ে ৪৬ ওভার ৪ বলে ২৩৩ রান করতে পেরেছে।  মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত শতকের পরও ১৪৯ রানের পরাজয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে।

ক্রিকেটের বড় আসরে যেখানে পাকিস্তান-ইংল্যান্ডের মত বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের চোখে চোখ রেখে হারিয়েছে আফগানিস্তান। সেখানে যেন বাংলাদেশ এখনো ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষার উপরেই আছে। চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত  টাইগাররা একটি জয় ছাড়া অন্য কোন ম্যাচে ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বীতায় করতে পারে নাই। আফগানদের বিপক্ষে ছাড়া আর কোন ম্যাচেই বোলারদের যেমন হতশ্রীভাব তার চেয়ে বাজে অবস্থা টিমের ব্যাটারদের। ভারতের মাঠে যেখানে বাকি দলের ব্যাটাররা রানের বন্যা বয়ে দিচ্ছে সেখানে যেন রানের খরায় ভুগছে টাইগার ব্যাটসম্যানরা। তার ওপরে বিশ্বকাপের মঞ্চকে যেন বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাটিং অর্ডার পরীক্ষাস্থল বানিয়েছে।

বিশ্বকাপের মঞ্চে ইংল্যান্ডের বিপেক্ষ বাংলাদেশ হারে ১৩৭ রানে। নিউজিল্যান্ড ৪৩ বল হাতে রেখেই বাংলাদেশকে হেসে খেলে উড়িয়ে দিয়ে ৮ ইউকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। একইভাবে ভারত ৫১ বল হাতে রেখেই ৩ ইউকেট হারিয়ে স্রেফ বাংলাদেশকে উড়িয়ে দেয়। আজ প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশ হারে ১৪৯ রানের বিশাল ব্যাবধানে। টাইগাররা বিশ্বকাপে ৬ ইউকেটের একমাত্র জয়টি পেয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। আর সেই আফনরা টাইগারদের সাথে হারের পর যেন জ্বলে উঠে বিশ্বকাপের মঞ্চে। পর পর দুটি ম্যাচে তারা হারিয়েছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানকে। আর সেই জায়গায় দিন দিন যেন আরও নিচের দিকেই যাচ্ছে টিম টাইগাররা। যেখানে টানা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন টাইগারদের আলোচিত ব্যাটাররা সেখানে দলের ইজ্জত বাঁচালেন বাতিলের খাতায় ফেলা সেই মাহমুদুল্লাহই। হতশ্রী ব্যাটিং অর্ডারের মাঝে ব্যাট হাতে সেঞ্চুরির করে সব সমালোচনারই যেন উল্লাসে জবাব দিলেন মাহমুদুল্লাহ।

ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কুইন্টন ডি কক ১৪০ বলে ১৫টি চার ও সাতটি ছক্কার শটে ১৭৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছেন। চারে নামা অধিনায়ক এইডেন মার্করাম ৬০ রান করে আউট হন। শুরুর ৩৬ রানে ২ উইকেট হারানোর পর মার্করামের সঙ্গে ১৩১ রানের জুটি দেন ডি কক।  

বাংলাদেশের বিপক্ষেও বোলারদের রীতিমতো তুলোধুনা করেছে তারা। ডি কক-ক্লাসেন টাইগার বোলারদের নিয়েছেন কঠিন পরীক্ষা।  ডি ককের ১৭৪ রান ও হাইনরিখ ক্লাসেনের ৯০ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের ওপরে ভর করে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে বিশাল সংগ্রহ দাড় করিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সাকিব-হাসানদের তুলোধুনা করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রান সংগ্রহ করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।  

এদিন ডেথ ওভারে প্রোটিয়া ব্যাটারদের ভয়ংকর রূপ দেখলেন সাকিব-মোস্তাফিজ-শরিফুলরা। ৩৮ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ৩ উইকেটে ২১৭। এরপর বাংলাদেশের বোলাররা কেবল দুটি ওভার দশের নিচে রান দিয়েছেন।

শেষ ১০ ওভারে ১৪৪ রান তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। কুইন্টন ডি কক তো বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করেছেনই, শেষদিকে হেনরিখ ক্লাসেন সেঞ্চুরিবঞ্চিত হলেও যা ক্ষতি করার করে দিয়েছেন টাইগারদের। সবমিলিয়ে ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৮২ রানে থেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। অর্থাৎ জিততে হলে ৩৮৩ করতে হবে সাকিব আল হাসানের দলকে।

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলেই ক্যাচ দিয়েছিলেন রিজা হেনড্রিকস। দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনারকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

কিন্তু প্রথম স্লিপে দাঁড়ানো তানজিদ হাসান তামিম বলটিকে হাতের তালুতে জমিয়ে রাখতে পারেননি। যার ফলে শুরুতেই ব্রেক থ্রু পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় বাংলাদেশ। অবশ্য ব্রেক থ্রু আসতে খুব বেশি সময় লাগেনি না। সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই সেই একই ব্যাটার রিজা হেনড্রিকসকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন পেসার শরিফুল ইসলাম। শরিফুলের ফুল লেন্থের বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন রিজা। কিন্তু বলের গতি মিস করেন তিনি। সোজা গিয়ে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে সেটি।

দলীয় ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। রিজা হেনড্রিকসের উইকেট নিয়ে শরিফুল যে ড্যান্স দিলেন, তা নিশ্চিত চোখে লেগে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের।

দ্বিতীয় উইকেট পেতেও খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি টাইগারদের। অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে এবার এলবিডব্লিউর শিকার হন আরেক মারকুটে প্রোটিয়া ব্যাটার রসি ফন ডার ডুসেন। মিরাজের স্ট্রেইট বল মিস করেন ডার ডুসেন। বল সোজা আঘাত হানে প্যাডে। জোরালো আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। ৩৬ রানে পড়ে দ্বিতীয় উইকেট। তবে সেখান থেকে কুইন্টন ডি কক আর এইডেন মার্করাম গড়ে দেন শতরানের জুটি। এই জুটি ক্রমেই বড় হচ্ছিল। অবশেষে ১৩৭ বলে গড়া ১৩১ রানের বড় জুটিটি ভাঙেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

মার্করাম লংঅনে তুলে মারতে গিয়েছিলেন সাকিবকে। লিটন দাস নেন সহজ ক্যাচ। ৬৯ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৬০ রান করে সাজঘরে ফেরেন প্রোটিয়া অধিনায়ক। তবে ডি কককে আটকানো যায়নি। এবারের বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের পঞ্চম ম্যাচে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে নেন মারকুটে এই ওপেনার, ১০১ বলে। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের যেটি ডি ককের ২০তম সেঞ্চুরি।

এই ডি কক একাই বলতে গেলে যা করার করে দিয়েছেন। খেলেছেন ১৪০ বলে ১৭৪ রানের ইনিংস। ১৫ বাউন্ডারি আর ৭ ছক্কায় সাজানো তার বিধ্বংসী ইনিংসটি শেষ পর্যন্ত থামিয়েছেন হাসান মাহমুদ। ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট বাউন্ডারিতে ক্যাচ ধরেছেন নাসুম আহমেদ।

news24bd.tv/A