ঝুলে আছে মহাসমাবেশের অনুমতি, কঠোর অবস্থানে র‍্যাব-পুলিশ

ঝুলে আছে মহাসমাবেশের অনুমতি, কঠোর অবস্থানে র‍্যাব-পুলিশ

মো. ইস্রাফিল আলম

সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীও এ দিন ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এ দিন বিএনপির শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ, গণফোরাম, এলডিপিসহ আরও অনেকগুলো দল সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার রাস্তায় থাকবে বলে জানিয়েছে। এতগুলো দল একসঙ্গে ঢাকার মতো একটি জনবহুল শহরে সমাবেশ করলে তা বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি অচলাবস্থা তৈরি করতে পারে— এমন আশঙ্কায় দলগুলোর সমাবেশের অনুমতি দেওয়া নিয়ে চিন্তায় পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

তারা এখনো পর্যন্ত কোনো দলকে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি। আর পুলিশ-র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, জনগণের যান-মালের নিরাপত্তায় ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে তারা নিরাপত্তার চাঁদরে মুড়িয়ে দেবো পুরো ঢাকা।   

যান-মালের নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে র‌্যাব-পুলিশ

বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফ করেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। ২৮ তারিখে সমাবেশ ঘিরে নিরাপত্তা নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার চেষ্টা করবে র‌্যাব।

বাহির থেকে কেউ যেন নাশকতার চেষ্টা করতে না পারে, কোনো রাষ্ট্রবিরোধী চক্র নাশকতা করতে না পারে- সে ব্যাপারে গোয়েন্দা বাহিনী কাজ করছে। চেকপোস্ট থাকবে, কেউ যেন নাশকতার বস্তু নিয়ে ঢুকতে না পারে।  

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমাবেশে ঘিরে কেউ যেন নাশকতা করতে না পারে, এ জন্য পুলিশ তৎপর আছে। পুলিশের চেকপোস্টসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। কেউ যেন অস্ত্র, বিস্ফোরক, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতে না পারে, সে জন্য আমাদের নিয়মিত চেকপোস্ট হয়। যেকোনো সমাবেশেই সিকিউরিটি থ্রেট চিন্তা করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। থ্রেট অ্যাসেসমেন্ট পর্যালোচনা করে আমরা নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে থাকি৷ আগামী সমাবেশেও থ্রেট অ্যানালাইসিস করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনো ধরনের নৈরাজ্যকে প্রতিহত করা হবে। ’

এদিকে, বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ সামনে রেখে জনগণের জানমাল রক্ষায় অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে র‌্যাব। ঢাকার প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানো হবে। ’

অনুমতি পাবে না জামায়াত

রাজধানীর মতিঝিলে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। কিন্তু দলটির নিবন্ধন না থাকা এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ইতিহাস থাকায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানা গেছে।  

এ ব্যাপারে আজ বুধবার (২৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর শাপলা চত্বরে জামায়াতের ডাকা সমাবেশের অনুমিত দেওয়া হয়নি। জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাই তাদের সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, তারা (জামায়াত নেতারা) যদি সমাবেশের নিয়মকানুন মেনে চলে তাহলে তারা সমাবেশ করতে পারে। এখন তারা যদি জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি নেয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বসে থাকবে না।  

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন

এর আগে জামায়াতের সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, জামায়াতকে সমাবেশের কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। তাদের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা হচ্ছে।

এর পরই গণমাধ্যমে বার্তা পাঠায় জামায়াত। যেখানে বলা হয়, ‘জামায়াতে ইসলামী সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকা মহানগরীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেওয়া নয়।  

শর্ত সাপেক্ষে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেবে ডিএমপি

সমাবেশের বাকি আর মাত্র দুই দিন, তবে বিএনপিও এখনো সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি। নিরাপত্তা শঙ্কায় তাদের নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কি না এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি।    

বিএনপির সমাবেশের বিষয়ে বুধবার (২৫ অক্টোবর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে বিএনপিকে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। বিএনপি সংবিধানিক ফ্রেমওয়ার্কারের বাইরে কিছু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবে।  

বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কি না এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, তাদের কোথায় সামাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে— এটা ডিএমপি কমিশনার জানাবে। তারা সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীদের ঢাকায় আনবে বলে শুনছি। সে রকম যদি হয়, তাহলে এত লোক ঢাকায় এলে একটা অন্য ধরনের পরিস্থিতি হতে পারে। সে জন্য আমাদের কমিশনার সাহেব তাদের কোথায় সমাবেশটা করতে দেবেন, সেটা কমিশনার সাহেব বুঝবেন। তিনি সেভাবেই সিদ্ধান্ত দেবেন।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান

বিএনপির সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকা দুই কোটি জনসংখ্যার নগরী। আমাদের কাছে যে আবেদন এসেছে তার প্রতিটি রাজপথকেন্দ্রিক। রাজপথকেন্দ্রিক জনসভা হলে জনগণের চলাচল বিঘ্নিত হয়। আমাদের সব সময় চেষ্টা থাকে নগরীর জনসাধারণের শান্তি ও স্বস্তি অক্ষুণ্ণ রেখে বাকি কাজগুলো যেন আমরা করতে পারি। সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু বিচার বিশ্লেষণ রয়েছে। ঝুঁকি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষণ রয়েছে। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট থানার ওসি-এসি-ডিসিরা বাস্তবতা পরীক্ষা করে আমাদের কাছে রিপোর্ট এলে এরপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, অনুমতি দেওয়া হবে কি না।  

সমাবেশের অনুমতি পায়নি আওয়ামী লীগও

বিএনপি ও তাদের শরিক দলগুলোর ২৮ অক্টবরের মহাসমাবেশের পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। তারা রাজধানীর গুলিস্তানে মহাসবেশের অনুমতি চেয়েছে ডিএমপির কাছে। তবে তাদেরও এখনো অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।  

অন্যান্য দলের অবস্থান

সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নিয়েছে বিএনপির শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরাম-পিপলস পার্টি, এলডিপি, এনডিএম, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দল। তারাও আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে আলাদাভাবে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। সমমনা দলগুলো ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতি সভা করেছে। আগামী শনিবার তারাও রাজপথে বড় শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উল্লেখ্য, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে পদযাত্রা, সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। কিন্তু সরকার তাদের কোনো দাবিকে পাত্তা না দিয়ে সংবিধানের অধীনে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছে। এদিকে নির্বাচনও ঘনিয়ে আসছে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এমতাবস্থায় বড় ধরনের কর্মসূচির বিকল্প নেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে। সেই বিবেচনায় আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেয় বিএনপি।  

news24bd.tv/আইএএম