স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশ বিকল্প উদ্যোগ গ্রহণ করছে কী? 

প্রতীকী ছবি

স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশ বিকল্প উদ্যোগ গ্রহণ করছে কী? 

প্রতিবছরই তামাকমুক্ত পৃথিবী গঠনে বিশ্বব্যাপি নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছে, ক্ষতিকারক হ্রাসগুলিকে অগ্রাধিকার করেছে এবং নিরাপদ বিকল্পগুলি অবলম্বন করেছে, তবুও বাংলাদেশ যেন ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

যুক্তরাজ্য, ফিলিপাইন ও জাপানের মতো দেশগুলোতেও তামাক দ্বারা উদ্ভূত স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলায় ও ক্ষতিহ্রাসে বিজ্ঞানভিত্তিক নানা ধরণের নীতিমালা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মতে, তামাকের বিকল্প হিসেবে বিজ্ঞানভিত্তিক নিরাপদ বিকল্পগুলো ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং সে অনুযায়ী সকলের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে প্রচলিত তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমানোর দিকে সকলের মনোযোগী হওয়া উচিত।

 

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া, যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ৬৭ শতাংশই ধূমপায়ী ছিলো যা বিশ্বের সর্বোচ্চ বলে ধরা হয়, নিরাপদ বিকল্পগুলোকে বৈধকরণ করে তামাকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের তাদের শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছে। ৩১শে আগষ্ট প্রকাশিত ইন্দোনেশিয়ান মিডিয়া ভিআইভিএ-এর (ভিভা) একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় সংসদ (ডিপিআর) সম্প্রতি “২০২৩ সালের ১৭নং স্বাস্থ্য আইন” পাস করেছে৷ এ আইনটি পাশের মাধ্যমে ই-সিগারেটকে আসক্তিযুক্ত পদার্থ হিসেবে লিপিবদ্ধ করে এই শিল্পকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া সলিড এবং লিকুইড তামাকজাত পণ্যগুলোকে আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে এর ব্যবহারকারীদের শুধু বৈধতায় প্রদান করছে না এটা ধূমপায়ীদের নিরাপদ বিকল্প খুঁজেতে সাহায্য করছে।

তবে এই ব্যাপারে বাংলাদেশের চিত্র একেবারে উল্টো।

২০১৯ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার সকল ভ্যাপিং ডিভাইসের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে। মূলত, ইউ.এস. ই-সিগারেট ও ভ্যাপিং সম্পর্কিত ফুসফুসের নানা ধরণের জটিলতার উদ্বেগ থেকে এই সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে এই পণ্যগুলোকে ভেজাল ও অবৈধ পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তবে, নিরাপদ বিকল্পগুলোর উপর এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিবেচনা করতে হবে যে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞাগুলো কি আসলেই কোনো কাজে আসতে পারে? গতানুগতিক সিগারেটে আসক্ত মানুষের জন্য ভ্যাপিং এক আশীর্বাদস্বরুপ। তামাকের ক্ষতিকারক টক্সিনের সেবন কমিয়ে ধূমপান থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি যা অনেক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু, এই বিকল্পগুলোর উপর আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞা এই সুযোগটিকে আজীবনের জন্যে বন্ধ করে দিতে পারে।

মাহাবুবা আফরিন

এছাড়াও, আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সরঞ্জামাদির অপ্রাপ্যতা এবং অন্যান্য বিকল্পগুলোর প্রাপ্যতাও সীমিত থাকার কারণে ধূমপান ত্যাগে চেষ্টারত ব্যাক্তিবর্গের কাছে এই নিষেধাজ্ঞা বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, কিছু ব্যক্তির জন্য তামাক পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া সম্ভবপর নাও হতে পারে, তাদের জন্য এই নিরাপদ বিকল্পগুলো হতে পারে একমাত্র পন্থা যা অন্ততপক্ষে তামাকের ব্যবহারকে রোধ করবে।  

দুনিয়াব্যাপী সকলে যেখানে বিজ্ঞান-ভিত্তিক সমাধানের পথ খুঁজছে, বাংলাদেশ সেখানে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। নিরাপদ বিকল্পকে অবৈধ ঘোষণা করলে বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একধাপ পিছিয়ে যাবে। যদিও নিরাপদ বিকল্পগুলোকে নিষিদ্ধ করা একটি কার্যকর পদক্ষেপ বলে মনে হতে পারে, তবে যারা ধূমপান ত্যাগ করার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য এটি বিপর্যয়কর হতে পারে। যে কারণে ধূমপানের ঝুঁকি গুলোকে কমানোর জন্য ধূমপায়ীদের নিরাপদ বিকল্পগুলোকে গ্রহণ করার সুযোগ দিতে হবে।

বাকি বিশ্ব যেমন বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে, বাংলাদেশ যেখানে বিপরীতদিকে দাঁড়িয়েছে। নিরাপদ বিকল্পগুলিকে নিষিদ্ধ করা একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ বলে মনে হতে পারে, তবে যারা ধূমপান ত্যাগ করার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য এটি বিপর্যয়কর হতে পারে। নিরাপদ বিকল্পগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের এই অবস্থান ক্ষতি কমানো। এবং বিশ্বব্যাপী তামাক মহামারীর বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে সফলতার সুযোগ নষ্ট করে দেয়।

পুরো বিশ্ব আমাদের দেখছে। আমরা আশা করবো, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য এবং ধূমপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কম ক্ষতিকর বিকল্পগুলোর বিজ্ঞানলব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে তাদের প্রস্তাবিত নীতিমালাগুলো পূনর্মূল্যায়ন করবে।

লেখক, মাহাবুবা আফরিন : ডক্টরাল শিক্ষার্থী, হিরোশিমা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।

news24bd.tv/A

সম্পর্কিত খবর