বিএনপি নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান-তল্লাশি, কী বলছে পুলিশ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? 

ফাইল ছবি

বিএনপি নেতাদের বাসায় বাসায় অভিযান-তল্লাশি, কী বলছে পুলিশ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? 

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহাসমাবেশে ঘোষিত হরতালকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ। ইতিমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভোররাতে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গ্রেপ্তার অভিযান চলছে অন্যান্য বড় ও প্রভাবশালী নেতাদের বাসায়ও। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় তল্লাশী চালিয়েছে পুলিশ।

অভিযান চলছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায়ও।

ফখরুল আটক
রোববার (২৯ অক্টোবর) সকালে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে গুলশান থেকে আটক করা হয়। আজ সকাল নয়টায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) তার বাসা থেকে নিয়ে যায়। তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ডিবির তুলে আনার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান নিউজ টোয়েন্টিফোরকে  বলেছেন, তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি। পরে যদি আমরা তেমন কিছু পাই, তদন্তের পর, তখন বলা যাবে। এ মুহূর্তে আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছি।

আমীর খসরুর বাসায় পুলিশ
সকাল নয়টার দিকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বনানীর বাসায় দুটি ফ্ল্যাটে পুলিশ তল্লাশি চালায়। তবে সে সময় তিনি বাসায় ছিলেন না।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে ইসরাফিল খসরু সাংবাদিকদের বলেন, সকালে ডিবি সদস্যরা এসে তার বাবাকে খুঁজতে তল্লাশি চালান। তারা বাসার প্রতিটি কক্ষ খুঁজে দেখেন।  

তিনি জানান, ডিবি সদস্যরা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পাসপোর্ট এবং তার স্ত্রীর মুঠোফোন নিয়ে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট পর সেগুলো ফেরত দেন।

ইসরাফিল আরও বলেন, তার বাবা কোথায় আছেন, তা ডিবি সদস্যরা জানতে চেয়েছেন। পুলিশ তাদের জানিয়েছে দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে তল্লাশি চালানো হয়েছে।

মির্জা আব্বাসের বাসায় পুলিশ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বাসায় প্রবেশ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। রোববার (২৯ অক্টোবর) দুপুর ২টায় তার শাহজাহানপুরের বাসায় প্রবেশ করে তারা। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মির্জা আব্বাসের বাসার সামনে সাদা পাোশাকে পুলিশের অবস্থান

এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, রাত থেকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের রাজধানীর শাহজাহানপুরের বাসা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছে।

এদিকে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশ সদস্যকে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ, বিস্ফোরণ ও পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ প্রায় আট শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করেছে পুলিশ। রোববার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে।

ইশরাককে না পেয়ে ছোট ভাইকে নিয়ে গেছে পুলিশ
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের গুলশানের বাসভবনে অভিযান চালায় পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এ সময় তাকে না পেয়ে ছোট ভাই ইশফাক হোসেন ও গাড়িচালক রাজিবকে নিয়ে যায় পুলিশ।

ইশফাক হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

রোববার (২৯ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।

শামসুদ্দিন দিদার জানান, দুপুর ১২টা থেকে ইশরাকের গুলশান-১ নম্বরের বাসায় তল্লাশি শুরু করে ডিবি পুলিশ। এ সময় তাকে না পেয়ে তার ছোট ভাই এবং গাড়িচালককে ডিবি ধরে নিয়ে যায়।

আলালের লালমাটিয়া ও বনানীর বাসায় তল্লাশি
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ছেলের লালমাটিয়ার বাসায় তল্লাশি চালিয়েছে ডিবি পুলিশ। আলালকে না পেয়ে বাসার প্রতিটি রুম তল্লাশি চালায় পুলিশের সদস্যরা। রোববার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এরপর দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আলালের বনানীর বাসায় যায় ডিবি পুলিশ।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বাসায় পুলিশের তল্লাশি। ছবি : সংগৃহীত

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জানান, লালমাটিয়ায় ছেলের বাসার পর এখন তার বনানীর বাসায় ১৪ থেকে ১৫ জন ডিবি পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছেন। প্রতিটি রুম তছনছ করা হচ্ছে।

বিএনপির নেতাদের বাসায় তল্লাশি ও অভিযানের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কিছু জানা নেই। ডিবি পুলিশ এটা বলতে পারবে। অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ডিবির কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলছেন
পুলিশ হত্যাকাণ্ড, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, পুলিশ হাসপাতালে হামলা ও ভাঙচুর, এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আলাদা আলাদা মামলা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।  

আজ দুপুরে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গতকাল শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে যা যা ঘটেছে, তাতে আলাদা আলাদা মামলা হবে বলে জানান মন্ত্রী।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, হামলাকারীদের ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পুলিশ হত্যাকাণ্ড, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, ‘পুলিশ হাসপাতালে হামলাসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনার দায় মির্জা ফখরুল ইসলামসহ বিএনপি নেতারা এড়াতে পারেন না। সভা চলাকালীন হামলা চালানো হয়েছে। ’

যা বলছে ডিএমপি কমিশনার 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, গতকাল একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিল। সেখানে পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা গাইবান্ধা থেকে একজন ও ঢাকার ডেমরা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। খোঁজ নিয়ে ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে- দুজনই বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। তাদের বিভিন্ন সময় মিছিল মিটিংয়ে দেখা গেছে।

হাবিবুর রহমান বলেন, এই নৃশংস ঘটনার যেন ন্যায় ও যোগ্য বিচার হয়, এজন্য যা যা কিছু করা দরকার ডিএমপির পক্ষ থেকে করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের পর ছবি মিলিয়ে দুজনকে শনাক্ত করে গাইবান্ধা থেকে একজন এবং ঢাকার ডেমরা থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

এ পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত ও কাদের ইন্ধন রয়েছে, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

নয়াপল্টনের অবস্থা
এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। বাঁশের মাধ্যমে ব্যারিকেড দিয়ে কার্যালয়ের সামনের অংশকে ক্রাইম সিন ঘোষণা করা হয়েছে। কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হচ্ছে না।

সকালে নয়াপল্টনে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়য়ের প্রধান ফটকের সামনে ‘ক্রাইম সিন’ উল্লেখ করে কর্ডন টেপ দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছে সিআইডি। তার দুই পারে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অসংখ্য পুলিশ সদস্য।

এর আগে শনিবার বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীসহ আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল সমাবেশ করেছে। এসময় পুলিশি বাধার মুখে বিএনপির নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। ধাওয়া খেয়ে নেতাকর্মীরা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে নয়াপল্টন ও পুরানা পল্টন মোড় এবং আশপাশের অন্যান্য স্থানে বিএনপি-পুলিশ-আওয়ামী লীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। এসব ঘটনায় বিএনপির বহু নেতাকর্মীর পাশাপাশি পুলিশ ও সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন।  

এ সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। আমিনুল নামে এক পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যাও করা হয়। এ ঘটনায় পল্টন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে।

news24bd.tv/AA