নদীতে ছুড়ে ফেলে নবজাতক হত্যা; পিতা গ্রেপ্তার

প্রতীকী ছবি

নদীতে ছুড়ে ফেলে নবজাতক হত্যা; পিতা গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক

কুড়িগ্রাম-রংপুর সড়কের তিস্তা সেতু থেকে নদীতে ছুড়ে ফেলে নবজাতক পুত্র সন্তানকে হত্যার দায়ে ঘাতক পিতা লাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত ২৭ অক্টোবর বিকেলে তিস্তা ব্রিজে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।  

পুলিশ জানায়, জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝার ইউনিয়নের রাবাইটারী এলাকায় লালমিয়া ছামিরন দম্পতি ৩ বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্কে বিয়ে হয়।

সে সময় লাল মিয়ার পরিবার তাদের বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ তেতুলতলা এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন।  

এরই মধ্যে চলতি বছরের ২২ অক্টোবর ছামিরন তার বাবার বাড়িতে একটি ফুটফুটে ছেলে সন্তান প্রসব করেন। জন্মের পর থেকে তার স্বামী ওই সন্তানের পিতৃত্ব অস্বীকার করে আসছিলেন। এমন অবস্থায় স্ত্রী ছামিরন প্রতিবাদ করলে গত ২৭ অক্টোবর বিকেলের দিকে স্বামী লাল মিয়া পূর্ব পরিকল্পিতভাবে নবজাতকের ডিএনএ পরীক্ষার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে স্ত্রীকে মোটরসাইকেলযোগে রংপুর এর উদ্দেশে রওনা দেন।

 

সেদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিস্তা ব্রিজের মাঝখানে স্বামী লাল মিয়া মোটরসাইকেল থামিয়ে নবজাতককে তার মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর কথা বলে বিরতি নেয়। দুধ খাওয়ানোর এক পর্যায়ে ছামিরন বুঝে ওঠার আগেই তার স্বামী লাল মিয়া আকস্মিকভাবে নবজাতককে তার কোল থেকে জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্রিজের উপর থেকে তিস্তা নদীতে ফেলে দিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেলযোগে রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়।  

এ ঘটনায় হতভম্ব ছামিরন আর্তনাদ ও কান্নাকাটি করলে উপস্থিত লোকজন কাউনিয়া ফায়ায় সার্ভিসকে ফোন দিলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নবজাতকে খোঁজাখুজি করেও কোনো সন্ধান পাননি। পরে ছামিরন হতাশাগ্রস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার পথে তার খুনী স্বামীকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার কথা ভাবে। পরে ছমিরন মোবাইলে সুকৌশলে তার স্বামীকে তার কাছে আসতে বলে।  

এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৮ অক্টোবর রাতে ঘাতক লাল মিয়া ছামিরনের কাছে আসলে ছামিরন সুকৌশলে তাকে সঙ্গে নিয়ে কচাকাটার বলদিয়া ইউনিয়নের শাহিবাজার গ্রামে তার ভাইয়ের শ্বশুর আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে। খবর পেয়ে কচাকাটা থানা পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে এসে ঘাতক স্বামীকে গ্রেপ্তার করে। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লাল মিয়া সন্তানকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে বলে জানায় পুলিশ।

এ ঘটনায় একটি নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু হয় এবং আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন লাল মিয়া।  

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমীন জানান, পিতা কর্তৃক নিজ নবজাতক পুত্র সন্তানকে হত্যা, এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। ঘাতক পিতা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন।