ভাত চাওয়ায় ছেলের লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত মা!  

সংগৃহীত ছবি

ভাত চাওয়ায় ছেলের লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত মা!  

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আখিরন নেছা। তাঁর হাত, পা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত। মানুষ গেলেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছেন শতবর্ষী বৃদ্ধা। তাঁর চাহনিতে শুধুই অসহায়ত্বের ছাপ।

চোখেমুখে আতঙ্ক আর ভয়ের আশঙ্কাও রয়েছে। কী হয়েছে জানতে চাইলে তাঁর দু’চোঁখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। পাশে বসে মা সম্বোধন করে কী হয়েছে জানতে চাইলেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। বুধবার দুপুরে ভাত খেতে চাওয়ায় ছেলে মন্টু মণ্ডল মারধর করেন তাকে।
আখিরন নেছা ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলার হরিশপুর গ্রামের মৃত মঙ্গল মণ্ডলের স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, বিধবা আখিরন নেছার তিন ছেলে। ছোট ছেলে সেন্টু মণ্ডল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক বছর আগে। বড় ছেলে ঠাণ্ডু মণ্ডল অবসরপ্রাস্ত স্কুল শিক্ষক। আর মেজো ছেলে মানোয়ার হোসেন মন্টু মণ্ডল পেশায় কৃষক। ছেলেদের সংসারে পালাক্রমে ১৫ দিন করে খান আখিরন নেছা। বছরখানেক আগে বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে ডান পা ভেঙে যায় তার। আজও জোড়া লাগেনি ভাঙা পায়ের হাড়। হাঁটুর নিচের হাড় ভেঙে বিচ্ছন্ন হয়ে ঝুলে আছে বছর ধরেই। এছাড়া তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ। চলতে ফিরতেও পারেন না শতবর্ষষী অসহায় আকিরন নেছা। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ২৩ বছর আগেই। সেই থেকেই অসহায় জীবনজাবন করছেন তিনি।

প্রতিবেশীদের দাবি, বয়সের ভারে নুহ্য আখিরন নেছা প্রায়ই সন্তানদের অবহেলার শিকার হন। তাঁকে মাঝে মাঝে মারধর করা হয়। এছাড়া তাঁর নিজ নামে রয়েছে ৮ বিঘা জমি। এই জমি লিখে দিতে চাপ দেন মেজো ছেলে মন্টু মণ্ডল। এ নিয়ে প্রায়ই মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। বুধবার দুপুরে ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যরা খাওয়া দাওয়া শেষ করলেও মায়ের খাওয়ার খোঁজ নেননি তারা। ক্ষুধার্থ মা আখিরন নেছা খাবার খেতে চাইলে ক্ষীপ্ত হয়ে তাঁকে গালাগালি করেন সন্তান মন্টু মণ্ডল। মা-সন্তানের বিতণ্ডার একপর্যায়ে মন্টু মণ্ডল ও তার স্ত্রী তারা খাতুন আখের খণ্ড ও লাঠি দিয়ে তাঁকে মারধর করেন। সন্তান ও তার স্ত্রীর এমন অমানবিক নির্যাতনে মুখ, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত হয়। রক্তাক্ত মাকে উঠানে ফেলে রাখে তারা। ভাঙা পা ও অসুস্থ শরীর নিয়ে চলতে ফিরতে না পারায় ছেঁচড়িয়ে রাস্তায় কোনোরকমে রাস্তায় বের হন পাশেই ছোট ছেলের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। তখন প্রতিবেশী ইউপি সদস্য বসির উদ্দিন তাকে উদ্ধার করে পৌঁছে দেন ছোট ছেলের বাসাই।

ইউপি সদস্য বসির উদ্দিন জানান, সন্তানের আঘাতে রক্তাক্ত মাকে দেখতেও আসেনি তাঁর সন্তানরা। তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেনি। পরে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে খবর দিলে পল্লী চিকিৎসক ডেকে এনে চিকিৎসা করান চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে ওই মায়ের দুই সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে স্থানীয়দের সাথে দুর্ব্যবহার করেন বলে জানান এই ইউপি সদস্য।

ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসরাম বাবু মিয়া বলেন, খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। চিকিৎসক ডেকে ওই মায়ের চিকিৎসা করায়। অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। এটি মেনে নেওয়া যাই না। ভাত খেতে চাওয়ায় শতবর্ষী মাকে এভাবে মারধর করা খুবই মর্মান্তিক এবং বেনাদায়ক।

এদিকে এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার আখিরন নেছার বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে তিনি বলেন, প্রায়ই আমার সাথে এমন আচরণ করে মেজো ছেলে মানোয়ার হোসেন মন্টু। ঠিকমতো খেতেও দেয় না। আমি অসুস্থ, আমার চিকিৎসাও করায় না।  

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে মানোয়ার হোসেন দাবি করেন, তিনি তার মাকে মারধর করেননি। উঠানে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।

হরিণাকুন্ডু থানার ওসি আবু আজিফ বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

news24bd.tv/আইএএম