গার্মেন্টস মালিকদের বেতন কাঠামো প্রস্তাব অযৌক্তিক: শ্রম প্রতিমন্ত্রী

গার্মেন্টস মালিকদের বেতন কাঠামো প্রস্তাব অযৌক্তিক: শ্রম প্রতিমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, নতুন বেতন কাঠামোতে শ্রমিকদের জন্য ১০ হাজার ৩৯৯ টাকার যে প্রস্তাব মালিকরা করেছে তা অযৌক্তিক। আগামী ৭ নভেম্বর নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে মজুরি বোর্ডের নতুন সভা হবে। সেখানে যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসে তাহলে প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হতে হবে।  এ সময় শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায়  রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

আপনারা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারছেন কি না— জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। আগামী ৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের বৈঠক রয়েছে। সেখানে আশা করি চূড়ান্ত হতে পারে।

যদি না হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিয়ে যাওয়া হবে। আশা করি শেষ ভরসাস্থল প্রধানমন্ত্রী মালিক-শ্রমিকদের ডেকে একটি সিদ্ধান্ত দেবেন।

মালিকরা নতুন যে বেতন কাঠামোর প্রস্তাব দিয়েছেন তা যৌক্তিক মনে করেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মোটেও না। বর্তমান বাজারে একজন শ্রমিক দুই বেলা ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে এমন একটি বেতন কাঠামো করতে হবে। সেটা না হলে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট হবে না। তাই বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, এর আগেও যে কয়কটি মজুরি বোর্ড হয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছিল। এবারও হয়তো তার হস্তক্ষেপে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে যেতে পারব।

মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ২০১৮ সালে গঠিত মজুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ৮ হাজার টাকা এবং বার্ষিক ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার বিধান করা হয়। গত পাঁচ বছরে ইনক্রিমেন্টের কারণে বেতন বৃদ্ধি পেয়ে শ্রমিকদের বেতন ১০ হাজার ৪০০ টাকার কাছাকাছি হওয়ার কথা, সে কারণে বর্তমান মজুরি বোর্ডে পোশাক মালিকদের পক্ষ থেকে ন্যূনতম মজুরির যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেটি অযৌক্তিক। তাই শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ডে প্রস্তাব দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে সায় দিয়েছেন। মজুরি নির্ধারণে মজুরি বোর্ড আগামী বৈঠকে উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্তে আসতে পারে। তারা ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন।  

অতীতের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে গ্রহণযোগ্য মজুরি নির্ধারণের নির্দেশ দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।

মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, তৈরি পোশাক থেকে দেশের সিংহভাগ রপ্তানি আয় আহরণ হয়ে থাকে। সেই রপ্তানি খাত (গার্মেন্টস শিল্প) ধ্বংস হোক, এটা শ্রমিকরা চান না। কারখানায় শ্রমিক আগুন দেয় না, এটা আমি বিশ্বাস করি না। বিএনপি আজ মজুরি ২৩ হাজার টাকার প্রস্তাব দিয়েছে। অথচ তারা ক্ষমতায় থাকার সময় শ্রমিকের মজুরি মাত্র ১ হাজার ৬৬২ টাকা ছিল। আজ তারাই পেছনে থেকে আন্দোলনের নামে কারখানা ভাঙচুর করছে, আগুন দিচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন ‘মাছের মায়ের মায়া কান্নার মতো অবস্থা। ’

গত ২২ অক্টোবর বোর্ডের কাছে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা করার প্রস্তাব দেয় শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি। একই দিন শ্রমিকপক্ষের প্রস্তাবের বিপরীতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি ন্যূনতম মজুরি মাত্র ২ হাজার ৪০০ টাকা বাড়িয়ে ১০ হাজার ৪০০ টাকার প্রস্তাব দেয়। আর সাধারণ শ্রমিকদের পক্ষ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বিবেচনায় এনে মজুরি ২৩ থেকে ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছিল। সেইসব প্রস্তাবও লিখিত আকারে নিম্নতম মজুরি বোর্ডের কাছে জমা হয়। আর বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) শ্রমিকদের জীবন-মান মূল্যায়ন করে ন্যূনতম মজুরি ১৭ হাজার ৫৬৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

news24bd.tv/আইএএম