কাল দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী 

সংগৃহীত ছবি

কাল দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম সার কারখানা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী 

অনলাইন ডেস্ক

উদ্বোধন হতে যাচ্ছে সরকারের অন্যতম বড় মেগা প্রকল্প দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ পরিবেশবান্ধব সার কারখানা ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা। রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সার কারখানাটি উদ্বোধন করবেন।

জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব কারখানাটিতে বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হবে। এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ইউরিয়া সারের চাহিদা মোটানো ও সুলভ মূল্যে কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষে সার কারখানাটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর নরসিংদীর পলাশে স্থাপিত দুটি সার কারখানার সক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেখানে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন, শক্তি সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর নতুন সার কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার।  ২০১৮ সালের অক্টোবরে নরসিংদী জেলায় ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানার কার্যক্রম শুরু হয়।  

এরপর ২০২০ সালে বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাস মহামারি রূপ ধারণ করলে প্রকল্পের ভৌত কাজ সাময়িকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

পরে প্রকল্পের ভৌত কাজ  ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট পুরোদ্যমে শুরু হয়। যার দায়িত্ব পায় সিসি সেভেন নামে একটি চীনা এবং জাপানের মিৎসুবিশি হেভী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।  

এরপর দীর্ঘদিন পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল এ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। দুই প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ২০২৩ এর ডিসেম্বরে এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার দুইমাস আগেই এর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়ে পরীক্ষামূলক সার উৎপাদন করছে কারখানাটি।

১১০ একর জমির ওপর নির্মাণাধীন জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব কারখানাটিতে বার্ষিক ৯ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হবে। এ মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৫ হাজার ৫০০ কোটি ২১ লাখ টাকা। যার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৫৮০ কোটি ২১ লাখ টাকা আর জাপান ও চীনের ঠিকাদারদের যৌথ কনসোর্টিয়াম ব্যাংক অব টোকিও-মিতসুবিশি ইউএফজে লিমিটেড (এমইউএফজি) ও দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন লিমিটেড (এইচএসবিসি) ১০ হাজার ৯২০ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করেন।

ঘোড়াশাল পলাশ ইউরিয়া সার কারখানাটিতে ৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ২টি অত্যাধুনিক স্টিম গ্যাস জেনারেটর রয়েছে। কারখানাটিতে ২৮ (আটাশ) মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। সব সময় কারখানার জন্য দুইটি জেনারেটর ৫০ শতাংশ লোডে চলবে। তাই এ কারখানাটির ২টি স্টিম গ্যাস জেনারেটর ১০০ শতাংশ লোডে চালিয়ে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ন্যাশনাল গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সার কারখানা প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক বলেন, সার কারখানাটি জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। দেশের সারের চাহিদার ৪০ ভাগ পূরণ করবে এ সার কারখানা। এতে করে সারের বিদেশ নির্ভরতা কমবে। বিদেশ থেকে যেখানে প্রতি মেট্রিক টন সার আমদানিতে এক লাখ টাকা খরচ হয় সেখানে এ কারখানাটিতে প্রতি মেট্রিক টন সার উৎপাদনের খরচ মাত্র ২০ হাজার টাকা। এতে বছরে ৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।  প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধোধনের মাধ্যমে দেশ একটি আধুনিক ও উন্নতমানের সার কারখানার মালিক হবে। এটি কৃষিক্ষেত্রে সার উৎপাদনে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। আর দেশের জিডিপিতে ও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

শিল্পমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাতে উদ্ধোধনের মাধ্যমে ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া সারকারখানা বাংলাদেশের মধ্যে সর্ববৃহৎ সার কারখানা যা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিরাট ভূমিকা রাখবে। নতুন সার কারখানাটি কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বাড়ানো  এবং দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।  নিরবচ্ছিন্ন সার সরবরাহ নিশ্চিত করে শিল্প মন্ত্রণালয় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। সার কারখানা পর্যায়ে উৎপাদন যাতে কোনো অবস্থায় ব্যাহত না হয়, সে লক্ষে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সার কারখানার উৎপাদন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার লক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের প্রশাসনিক ক্ষমতা বাড়ানো হবে। একই সঙ্গে কারখানাগুলোর উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কারিগরি জনবলের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন জনবল নিয়োগ করা হচ্ছে।