কার সঙ্গে কার সংলাপ? তারেক ৫৮, খালেদা ১৭

সংগৃহীত ছবি

কার সঙ্গে কার সংলাপ? তারেক ৫৮, খালেদা ১৭

অনলাইন ডেস্ক

দরজায় কড়া নাড়ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে নির্বাচনের আগে বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর কিছুটা অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তাদের ডাকা একের পর অবরোধ কর্মসূচির মধ্যে দেশের শীর্ষ তিনটি রাজনৈতিক দলকে (আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি) সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বিএনপির এমন জালাও পোড়াও কর্মসূচি এবং দুই সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ নেতার দলের সঙ্গে আদৌ অন্যদলগুলো সংলাপে বসবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

   

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী। খালেদা জিয়ার ছেলে ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ৫৮ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। এমন অপরাধীদের দলের সঙ্গে কি সংলাপ হতে পারে— এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে।  

জানা যায়, তারেক রহমান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন এবং দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধের চারটি মামলায় ২৮ বছরের কারাদণ্ডসহ মোট ৫৮ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।

২১ আগস্টে ২৭ জন মানুষ হত্যা তো আছেই, বার বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।  

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে দলের শীর্ষ নেতারা এমন অপরাধে জড়িত— এমন একটি দলের সঙ্গে কী করে সংলাপ হতে পারে? বিএনপিকে কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আসতে হলে অবশ্যই দণ্ডিত অপরাধীদের দল থেকে বের করে তারপর অন্য আরেকটি গণতান্ত্রিক দলের সঙ্গে সংলাপে আসতে হবে।  

শর্তহীন সংলাপ ইতিমধ্যেই নাকচ করেছে বিএনপি

যুক্তরাষ্ট্র তিন দলকেই শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। যদিও এর আগে ১৫ অক্টোবর এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শর্তহীন সংলাপের কথা বলেছিলেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সেই সংলাপের আহ্বান নাকচ করে দিয়ে বলেছিলেন, ‘শর্তহীন সংলাপে বিএনপি রাজি নয়। ’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এর আগে বলেছেন, সংবিধানের কাঠোমোর মধ্যে ‘শর্তহীন সংলাপ’ হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় আলাপ-আলোচনা করার জন্য নির্দেশ দেন বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।  

কিন্তু যে দল ইতোমধ্যে শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করেছে— সেই দল যুক্তরাষ্ট্রের শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাবে সাড়া দেবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদি তারা এবার সাড়া দেয়, তবে তা বিএনপির রাজনীতির একটা দুর্বলতা হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।  

তফসিল ঘোষণার আগের দিন সংলাপের আলাপ কেন?

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। সম্ভবত এ ভাষণেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন সংলাপের কথা কেন? বিএনপি এতোদিন ধরে আন্দোলন করছে, কোনো পর্যায়ে তো তারা সংলাপে যেতে চায়নি বা সংলাপের আহ্বান করেনি।  

আগুন সন্ত্রাসের মধ্যে সংলাপ কী করে হতে পারে?

ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে গত ১৭ দিনে বিএনপির হরতাল-অবরোধে সারাদেশে অগ্নিসংযোগের ১৫৪টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১৩৫টি ঘটনায় পোড়ানো হয়েছে যানবাহন। আগুনে ৯৪টি বাস, ৩টি মাইক্রোবাস, ২টি প্রাইভেটকার, ৮টি মোটরসাইকেল, ১৩টি ট্রাক, ৮টি কাভার্ডভ্যান, একটি অ্যাম্বুলেন্স, ২টি পিকআপ, ২টি সিএনজি, একটি নছিমন, একটি লেগুনা, ফায়ার সার্ভিসের একটি পানিবাহী গাড়ি, একটি পুলিশের গাড়ি, বিএনপির ৫টি অফিস, আওয়ামী লীগের একটি অফিস, একটি পুলিশ বক্স, একটি কাউন্সিলর অফিস, ২টি বিদ্যুৎ অফিস, একটি বাস কাউন্টার এবং ২টি শোরুম পুড়ে যায়।

গত ১৭ দিনে গড়ে প্রতিদিন ৫টি করে বাস পোড়ানো হয়েছে। বিএনপি কার্যত মাঠে নেই। তারা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে গাড়িতে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। এই চোরাগোপ্তা হামলা এবং আগুন সন্ত্রাসের মধ্যে কী করে সংলাপ হতে পারে—এটা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।  

শুধু তিন দলের মধ্যেই কেন সংলাপ হবে?

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং বিএনপির মধ্যে সংলাপের কথা বলেছেন। শুধু এই তিন দলের মধ্যেই কেন সংলাপ হতে হবে—এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। দেশে আরও নিবন্ধিত দল আছে, তাদের মতামত কেন নেওয়া হবে না?
 
এই তিনটি দল কি একসঙ্গে সংলাপ করবে নাকি রাউন্ড রবিন লীগ পদ্ধতিতে সব দল সবার সঙ্গে যেমন— জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের, আবার বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির— এভাবে হবে? এসব প্রশ্ন উঠে আসছে বিশ্লেষকদের মধ্য থেকে।  

বিএনপি আসলে কী চায়?

বিএনপি একবার ২৭ দফা, একবার ৩১ দফা, একবার ১ দফা— নানা কথা বলছে। একবার বলছে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। একবার বলছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা। একবার বলছে শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হবে না। এখন পিটার হাসের সংলাপের ওপর ভর করেছে তারা। বিএনপি আসলে কী চায়—এমন প্রশ্ন বিশ্লেষকদের।  

শর্তহীন সংলাপের জন্য বিএনপিই প্রস্তুত নয়

যখনই সংলাপের কথা এসেছে, তখনই হয় সংলাপ বর্জন করেছে অথবা শর্ত জুড়ে দিয়ে তা বানচাল করেছে বিএনপি। ২০১৪-তেও সংলাপে অংশ নেয়নি, আর ২০০৭ ও ২০১৮ তে সংলাপে বসলেও শর্ত জুড়ে দিয়ে এবং মিথ্যাচার করে সংলাপগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। নির্বাচন কমিশনও যত বার আলোচনার জন্য বিএনপিকে ডেকেছে, তারা যোগদান করেনি। আসলে বিএনপি কী চাই রাজনৈতিক মহলে এমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।  

শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাবেই শর্ত

পিটার হাস বা যুক্তরাষ্ট্র নিজে শর্তহীন সংলাপের আহ্বান জানালেও সংলাপের বার্তার মধ্যেই “ভিসানীতি”র শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

news24bd.tv/আইএএম