পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর তৃতীয় কারণ ‌'সিওপিডি'

সংগৃহীত ছবি

এভারকেয়ার হসপিটাল আয়োজিত পেশেন্ট ফোরাম

পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর তৃতীয় কারণ ‌'সিওপিডি'

অনলাইন ডেস্ক

‌'শ্বাসতন্ত্রের জটিল রোগ ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি। এটি হচ্ছে গুচ্ছ রোগ, যা ক্রনিক ব্রংকাইটিস, এমফাইসিমা ও ক্রনিক অ্যাজমা—এই তিনটির যেকোনো একটি, দুটি বা তিনটির সহাবস্থান। একসঙ্গে একে সিওপিডি বলে। এর ফলে শ্বাসনালির ভেতরের গ্রন্থিগুলো মাত্রাতিরিক্ত শ্লেষ্মা তৈরি করে শ্বাসনালি সংকুচিত করে ফেলে।

কখনো কখনো ফুসফুসের ভেতর থেকে বাতাস শ্বাসের সঙ্গে নির্গত হতে পারে না বলে ফুসফুস বেলুনের মতো বড় হয়ে ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।  

সিওপিডিকে অনেকে অ্যাজমা বলে ভুল করে থাকেন। তবে সিওপিডি আর অ্যাজমা এক রোগ নয়। অসংক্রামক রোগগুলোর মধ্যে সিওপিডি অন্যতম।

হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের পর পৃথিবীব্যাপী এটি মৃত্যুর তৃতীয় কারণ। ক্যান্সারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় ফুসফুসের ক্যান্সারে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এই রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  

তবে ধুমপান পরিহার, দুষণমুক্ত পরিবেশে বসবাস, মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, ফুসফুসের পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণ, ব্যালেন্স ডায়েট গ্রহণ, যথাযথ চিকিৎসা ইত্যাদির মাধ্যমে সিওপিডি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। '

বিশ্ব সিওপিডি দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার (১৫ নভেম্বর) দেশের প্রথম জেসিআই স্বীকৃত এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকা আয়োজিত পেশেন্ট ফোরাম ও সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেন।  

আলোচনায় অংশ নেন এভারকেয়ার হসপিটাল ঢাকার রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ও কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ডা. রৌশনী জাহান, সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. জিয়াউল হক। পেশেন্ট ফোরামে উপস্থিত ছিলেন এভারকেয়ার হসপিটাল বাংলাদেশের মেডিকেল সার্ভিসেস বিভাগের ডিরেক্টর ডা. আরিফ মাহমুদ। অনুষ্ঠানে রোগী ও তাদের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞরা রোগীদের বিভিন্ন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেন।  

সবাইকে স্বাগত জানিয়ে ডা. আরিফ মাহমুদ বলেন, অন্যান্য সময় যারা রোগী, আজ এখানে তারা আমাদের সম্মানিত অতিথি। আপনাদের নিয়ে এ ধরণের আয়োজন করতে পেরে আমরা খুশি।

অধ্যাপক ডা. রৌশনী জাহান বলেন, সিওপিডির প্রভাবে আস্তে আস্তে মানুষের জীবনী শক্তি ক্ষয় হয়, মানুষকে নিয়ে যায় পঙ্গুত্বের দিকে। সিওপিডি রোগীদের ভালো থাকতে সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি ব্যালেন্স ডায়েট বিশেষ করে কার্বোহাইডেট জাতীয় খাবার কম গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।

ডা. এস এম আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সিওপিডিতে শ্বাসনালী আস্তে আস্তে চিকন হয়ে পড়ে। যখন কেউ বুঝতে পারছেন তিনি শ্বাস নিতে পারছেন না, তখনই তা শ্বাসকষ্ট। এটা অন্যান্য কষ্টের চেয়েও অনেক বেশি কষ্টকর। তিনি বলেন, বায়ুদূষণ, ধুলাবালি, ধোঁয়া ইত্যাদি ফুসফুসে মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি করে সিওপিডি তৈরি করে।  

ডা. জিয়াউল হক বলেন, ধূমপান অন্যতম কারণ হলেও অন্যান্য কারণেও সিওপিডি হয়। বিশেষ করে গ্রামের নারীরা লাকড়ির চুলায় রান্না করেন। তিনি জানান, স্পাইরোমেট্রি পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে এর চিকিৎসা দীর্ঘ সময় ধরে চালিয়ে যেতে হয়।  

উল্লেখ্য, সারা পৃথিবীতে ১৫ নভেম্বর বিশ্ব সিওপিডি দিবস পালন করা হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘ব্রিথিং ইজ লাইফ-এ্যাক্ট আরলিয়ার-অর্থাৎ শ্বাষ-ই জীবন, তাই আগেই পদক্ষেপ নিন।