ফসল-শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি করে গেল ‘মিধিলি’

সংগৃহীত ছবি

ফসল-শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি করে গেল ‘মিধিলি’

অনলাইন ডেস্ক

ঘূর্ণিঝড় মিধিলি উপকূল অতিক্রম করেছে গতকালই (শুক্রবার)। তবে যাওয়ার আগে সাতজনের প্রাণহানির পাশাপাশি ফসল আর শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি করে গেছে। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক এলাকা। কাঁচাঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘর ভেঙে পড়েছে।

বরগুনার পাথরঘাটায় নিখোঁজ আছেন ২০টি ট্রলারের ৩০০ জেলে।

মিধিলির প্রভাবে টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় পটুয়াখালীতে রোপা আমন ফসলের ৭৫ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলার ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর রোপা আমন ফসল ঘূর্ণিবাতাসের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া খেসারিসহ মাঠে থাকা সবজিরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

দুই-এক দিনের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বরগুনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সৈয়দ জোবায়দুল আলম বলেন, বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি ও খেসারি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুর সেচ প্রকল্প ও মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভেতর শীতকালীন সবজিসহ নানা জাতের ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ফেনীর কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতিটি উপজেলায় কয়েক হাজার হেক্টর পাকা আমন ধান জমিতে শুয়ে পড়েছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে। ঝড়ের কারণে ধানের তেমন ক্ষতি না হলেও শীতকালীন সবজির কিছু ক্ষতি ও রবিশস্যের আবাদ পিছিয়ে যেতে পারে।

টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে বাগেরহাটের কয়েক হাজার হেক্টর জমির বীজতলা। মাঠঘাট ও ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে থাকায় খেতের ধান ভেসে যাওয়া ও নষ্ট হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া চারা দেওয়ার জন্য বীজধান প্রস্তুত থাকলেও পানি ও বৃষ্টির কারণে বুনতে পারছেন না কৃষকেরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাগেরহাট কার্যালয়ের উপপরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বোরো ধানের বীজতলা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এখনো সময় আছে, কৃষকেরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। ঘেরের পাড়ের শীতকালীন সবজি ও আমন ধানে ঝোড়ো বাতাসে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

ঝড়ের আঘাতে চাঁদপুর শহরের রেলওয়ে আক্কাছ আলী একাডেমির সামনে একটি বড় গাছ বিদ্যুতের তারের ওপর পড়ে। এতে রেলপথ ও সড়ক দুটিই বন্ধ হয়ে যায়। ফেনী সদর উপজেলার কাজিরবাগ ইকোপার্কের পাশে ফেনী-পরশুরাম সড়কে গাছ পড়ে অভ্যন্তরীণ ও জেলা শহরের সড়ক যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় গাছ অপসারণের পর আবার যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ছোট হরণ ও বড় হরণের মাঝামাঝি এলাকায় রেলপথের ওপর গাছ পড়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুই ঘণ্টা পর গাছ অপসারণ করে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করা হয়। এ সময় শহরের তালশহর রেলস্টেশন ও কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলস্টেশনে কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়ে।

এছাড়া ঝড়ের আঘাতে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। নোয়াখালী শহরের পাঁচ রাস্তার মোড় এলাকায় একটি গাছ উপড়ে পড়ে বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে গেছে। ঝোড়ো বাতাস ও বৃষ্টিপাতের কারণে বরগুনার বিদ্যুৎ লাইনের ১৪৯টি স্থানে সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে পাঁচটি খুঁটি। কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় গতকাল দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে। ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় দুপুর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নোয়াখালীর হাতিয়া ও সুবর্ণচর উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ৩০টি কাঁচাঘর, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ঘর বিধ্বস্তের খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ঝড়ের আঘাতে অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। নষ্ট হয়েছে আমন ফসল ও উঠতি শাকসবজি। হাতিয়া উপজেলার চতলার ঘাটে ২৫০ বস্তা ধানসহ একটি ট্রলার ডুবে গেছে। এ ছাড়া ডুবে গেছে ঘাটে থাকা একটি ড্রেজার। সেখানে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে মো. হানিফ (৬০) নামের এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে নিখোঁজ বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ২০টি ট্রলারের ৩০০ জেলের এখনো সন্ধান মেলেনি। ঝড়ের পূর্বাভাসের আগে তাঁরা সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ২০টি ট্রলারের সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেননি।

এদেক ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় তিন দিন ধরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে চার শতাধিক পর্যটক আটকা পড়েছেন।  

news24bd.tv/আইএএম