নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি

অনলাইন ডেস্ক

নির্বাচনের আগে ও পরে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ৮ দফা দাবি উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।

আজ সোমবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী গত ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কেউ কেউ সিদ্ধান্ত গ্রহণের অপেক্ষায় আছে। আশা করি সব দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক দল গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের লক্ষ্যে দেশপ্রেমিক ভূমিকা পালনে এগিয়ে আসবেন। ’

তিনি বলেন, ‘এ দেশের দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে নিজ নিজ পছন্দের প্রার্থীকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটদানে আগ্রহী। এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণে নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের কাছে আট দফা দাবি জানাচ্ছি।

দাবিগুলো হলো–
১. নির্বাচনের আগে ও পরে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ জননিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের তাগিদে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ, আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবির নিয়মিত টহল দানের ব্যবস্থা করা এবং নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য একটি মনিটরিং সেল গঠন করা।

২. দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের তাগিদে নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব রাজনৈতিক দল ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যথাযথ ভূমিকা পালন করা।

৩. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে-নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেন, প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম বাধার সম্মুখীন না হন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণে সমান সুযোগ পান তার জন্য নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করা।

৪. নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। যদি কোনও প্রার্থী, কোনও দল বা জোট নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতাকে ব্যবহার করে তবে তাকে শাস্তির আওতায় আনা।

৫. নির্বাচন কমিশন থেকে সংখ্যালঘু নিরাপত্তায় গৃহীত যাবতীয় পদক্ষেপের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতা, নির্বাচনের প্রার্থীসহ প্রার্থীর সমর্থক সবাইকে অবহিত করা।

 ৬. সব ধর্মীয় উপাসনালয় যেমন-মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গীর্জা নির্বাচনী প্রচারকাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ করা0।

৭. ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, বিবৃতি, গুজব প্রচার বা এ ধরণের যাবতীয় প্রচারণা বিশেষ ক্ষমতা আইনের ক্ষতিকর কাজ হিসেবে অপরাধ বলে গণ্য করে শাস্তিমূলক পদক্ষেপের ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে দায়ী ব্যক্তিদের প্রার্থীতা বাতিলের ব্যবস্থা করা।

৮. নির্বাচনের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী ১৫ দিন পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিজিবি, র‍্যাবের টহলদানের ব্যবস্থা করা।

সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি অংশের নেতাকর্মীরা নির্বাচনকে বয়কট করেছে। এ বিষয় জানতে চাইলে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমরা বলেছি, ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুরা তাদের ভোটদানে আগ্রহী। সংখ্যালঘুদের মধ্যেও এমন কেউ কেউ আছেন, যারা নির্বাচন বর্জনের ধারায় আছেন। তবে ধর্মীয় জাতিগত সংখ্যালঘুদের বৃহত্তর অংশ মনে করে নির্বাচন ছাড়া সরকার পরিবর্তন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা বহমান রাখার মধ্যেই এ দেশের মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। কেউ নির্বাচন বর্জন করলে, সেটি তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। ’

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুরা কোনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার শঙ্কায় ভুগছি। এ জন্য আজ আমাদের এই সংবাদ সম্মেলন। ’

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিম চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন– সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার, সুনন্দ্র প্রিয় প্রমুখ।

news24bd.tv/SHS