কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যে পাঁচ আমল সহজে পালন করা যায়

কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যে পাঁচ আমল সহজে পালন করা যায়

 মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

কিছু ইবাদত এমন আছে, যেগুলোতে পরিশ্রম একেবারেই কম বা নেই বললেই চলে, কিন্তু এগুলোর মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব অর্জন করা যায়। এখানে এমন কয়েকটি ইবাদত তুলে ধরা হলো : 

১. সার্বক্ষণিক মুখের জিকির : যেসব ইবাদতে পরিশ্রম নেই বললেই চলে তবে অফুরন্ত ফজিলত, সেগুলোর অন্যতম হলো জিকির। জিকিরের মাধ্যমে অন্তর শীতল হয়, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় এবং অফুরন্ত সওয়াব অর্জন করা যায়। এমনকি নিজের জান্নাত আবাদ করা যায়।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, মিরাজের রাতে ইবরাহিম (আ.) আমাদের নবীজি (সা.)-কে বলেছেন, হে মুহাম্মদ আপনার উম্মতকে আমার সালাম পৌঁছিয়ে দিন এবং তাদেরকে জানান যে জান্নাতের জমিন অত্যন্ত সুগন্ধিসমৃদ্ধ এবং সেখানকার পানি অত্যন্ত সুস্বাদু। তা একটি সমতল ভূমি এবং তার গাছপালা হলো ‘সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহ ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৬২)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, দুটি বাক্য এমন, যা মুখে উচ্চারণ করা অতি সহজ, পাল্লায় অতি ভারী, আর আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়। তা হলো ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি।

(বুখারি, হাদিস : ৬৪০৬)

কোরআন-হাদিসে এ রকম অসংখ্য জিকির রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে বিনা পরিশ্রমে বা খুবই অল্প পরিশ্রমে অগণিত সওয়াব অর্জন করা যায়।

২. দোয়া মুমিনের হাতিয়ার : হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে সম্মানিত কোনো জিনিস নেই। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৮২৯)

অথচ দোয়া করতে মানুষের তেমন কোনো পরিশ্রম করার প্রয়োজন পড়ে না। কাজের ফাঁকে, যানজটে, যেকোনো জায়গায় বসে দোয়া করা যায়।

৩. দরুদ শরিফ পাঠ : দরুদ পাঠে তেমন পরিশ্রম হয় না, কিন্তু এই আমলের মাধ্যমে মানুষের দুশ্চিন্তা দূর হয়, আল্লাহর সাহায্য ও রহমত আসে, গুনাহ মাফ হয়, মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার ওপর ১০ বার রহমত নাজিল করবেন, তার ১০টি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে এবং তার জন্য ১০টি মর্যাদা উন্নীত করা হবে। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ১২৯৭)

৪. চুপ থাকা : অহেতুক কথা বা গুনাহর কাজে লিপ্ত হতে হয় এমন বিষয়ে কথা বলার চেয়ে নীরবতা বা চুপ থাকা ইবাদত। এই ইবাদতে কোনো পরিশ্রমেরই দরকার হয় না। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যে নীরবতা অবলম্বন করল, সে নাজাত পেল। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০১)

৫. সুপরামর্শ দেওয়া : মানুষকে ইবাদত ও আল্লাহমুখী হওয়ার সুপরামর্শ দেওয়া অত্যন্ত ফজিলতের কাজ। এতে খুব বেশি পরিশ্রমেরও দরকার হয় না। এখনকার যুগে প্রযুক্তি ব্যবহার করেও লাখ লাখ মানুষকে দ্বিনের দাওয়াত পৌঁছানো সম্ভব। বিভিন্ন ইসলামী কনটেন্ট শেয়ার করে মানুষকে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে অফুরন্ত সওয়াব অর্জন করা সম্ভব।  হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অন্যদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬০৯)

মহান আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এই রকম আরও টপিক