নির্বাচন ঠেকানো যায় না

সংগৃহীত ছবি

নির্বাচন ঠেকানো যায় না

মেজর (অব.) মো. আখতারুজ্জামান

জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ৫২ দিনের নির্বাচনি তফসিল ইতোমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছেন। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন হবে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ রোজ রবিবার এবং ভোট হবে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে ১৫ নভেম্বর ২০২৩ রোজ বুধবার সন্ধ্যা ৭টায়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০২৩।

বাছাই হবে ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রত্যাহার করার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতীক বরাদ্দের দিন নির্ধারিত করা হয়েছে ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩। প্রচার-প্রচারণা শুরু হবে প্রতীক বরাদ্দের সঙ্গে সঙ্গে এবং চলবে ৫ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত।
এবার প্রচার-প্রচারণার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে ১৯ দিন। ১৫ নভেম্বর ২০২৩ তারিখ থেকে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত চলবে মোট ৫৪ দিনের নির্বাচনযজ্ঞ।

এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দল অংশগ্রহণ করবে না। তারপরও নির্বাচন থেমে থাকবে না। অতীতে দেখা গেছে, নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারেনি। ১৯৮৬ ও ’৮৮ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্বাচন ঠেকানো যায়নি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিএনপির নির্বাচনও আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ প্রায় সব দল মিলেও ঠেকাতে পারেনি। ইতোমধ্যে কয়েকটি হরতাল হয়ে গেছে। জনগণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছে। কোনো পক্ষের জনমতও এখনো স্পষ্ট নয়। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যথা সময়ে নির্বাচন করাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমি জানি দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অনেকে একমত হবেন না। তারপরও বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করে কয়েকটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হলো। এগুলো কোনো পরিসংখ্যান বা গবেষণালব্ধ কোনো রায় বা ফলাফল নয়। এটি সম্পূর্ণ উপস্থাপিত ব্যক্তিগত পর্যালোচনা; যার ওপর দলের নীতি-নির্ধারকরা বিবেচনায় নিতে পারেন।

১। নির্বাচন ঠেকানোর মতো কোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই। দেশে ৪৪টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। কিন্তু বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে ৩০০ জন প্রার্থী দেওয়ার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। এমনকী বাকি ৪২টি নিবন্ধিত দল মিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো ৩০০ জন প্রার্থী দিতে পারবে না। কাজেই তাদের পক্ষে নির্বাচন প্রতিহত করারও প্রশ্ন ওঠে না। অতীতে সংগঠিত দল হয়েও আওয়ামী লীগ কোনো নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি। এখন অসংগঠিত বিএনপির পক্ষে নির্বাচন প্রতিহত করার ক্ষমতা কতটুকু- তা জানার জন্য যদি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, তাহলে মনে হয় কারও কিছু বলার নেই।

২। আমেরিকানরা নির্বাচনের বিপক্ষে কোনো অবস্থান নেবে না। গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের কথা যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে বলে আসছে। এর জন্য তাদের ভিসানীতিও প্রয়োগ করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাই এখন শেষ মুহূর্তে এসে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও অবস্থান পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। তারা সর্বান্তকরণে এখন নির্বাচনের পক্ষে। তবে এখন যদি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ না হয়, তাহলে তার দায়দায়িত্ব যেমন সরকারের ওপর বর্তাবে, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রকেও বিশ্ব জনমতের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
৩। বিএনপি মাঠে থাকতে পারবে না। ২৮ অক্টোবর পুলিশের চাপে ও আক্রমণে বিএনপি পল্টনের শান্তিপূর্ণ জনসভা থেকে সরে গিয়ে মাঠে টিকে থাকার অবস্থানকে দুর্বল করে দিয়েছে। বিএনপি মাঠের লড়াকু কোনো দল নয়। সর্বোপরি বিএনপির ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠন অত্যন্ত অগোছালো, অসংগঠিত ও সম্পূর্ণ নেতৃত্বহীন। মাঠে এক মিনিট টিকে থাকার সামর্থ্য তাদের নেই- লড়াই করা তো অনেক পরের প্রশ্ন। হাতেগোনা কয়েকটি উপজেলা ও মহানগরীর ওয়ার্ড ছাড়া কোথাও দাঁড়ানোর ক্ষমতা বিএনপির নেই। বিএনপির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো তাদের ত্যাগী নেতা-কর্মীর তীব্র অভাব।

৪। যারাই নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেবে তারাই সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং মার্কিন ভিসানীতির আওতায় পড়বে। মার্কিন ভিসানীতির ফলে এখন যারাই নির্বাচনের বিপক্ষে দাঁড়াবে বা যে কোনো অসিলায় নির্বাচন প্রতিহত বা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করবে তারা মার্কিন ভিসানীতির আওতায় সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হবে। কেউ যদি দলবদ্ধভাবেও এখন নির্বাচন প্রতিহত বা বাধা দিতে চায় তাহলে সেই দল ও দলসমূহ সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং ভিসানীতির আওতায় পড়ে যেতে পারে।

৫। প্রথম থেকেই বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগোচ্ছিল যা এখন সফল হতে যাচ্ছে। সরকার ভালো করেই জানে এবার ২০১৪ বা ২০১৮ সালের যেনতেন নির্বাচন করে পার পাবে না। যে কোনো মূল্যে সরকারকে এবার সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাতেই হবে। তাই সরকার পূর্ব থেকেই অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে আন্দোলনে নামিয়ে দিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। বিএনপি এখন নির্বাচনে নেই এবং শিগগিরই আন্দোলনের মাঠেও থাকবে না। সরকার এবার খালি মাঠে গোল দিয়ে বেরিয়ে যাবে না। বিএনপি ভাবছে সরকারকে তারা নির্বাচন করতে দেবে না। আবার নির্বাচন করতে পারলেও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতেও দেবে না। দুর্ভাগ্যজনক হলেও চরম সত্য, কোনোটা করার ক্ষমতা বিএনপির নেই। বরঞ্চ নির্বাচনের পরে বিএনপির অস্তিত্বকেই সরকার হুমকির মধ্যে ফেলে দেবে।

৬। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেননি। সিইসি জাতির উদ্দেশে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে তিনি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। তিনি তা করতে যাচ্ছেন। কিন্তু জনগণের প্রত্যাশা হলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের, যেখানে জনগণ তার নিজের ইচ্ছা ও স্বাধীনভাবে তার ভোটটি দিতে পারবেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যে তার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি। তারপরও সিইসি যে প্রত্যয় ও দৃঢ়তা দেখিয়েছেন, তাতে তিনি যে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করাতে চাচ্ছেন সে আস্থা সৃষ্টি করতে পেরেছেন। এখন তিনি জাতির কাছে দেওয়া তার অঙ্গীকার কতটুকু রক্ষা করতে পারেন, তা দেখার জন্য অবশ্যই সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে।

৭। নির্বাচনের পক্ষে বা বিপক্ষে কোথাও জামায়াতের অস্তিত্ব নেই। জামায়াত নির্বাচনের বিপক্ষে বললেও যেমন কেউ কোনো গুরুত্ব দেবে না। তেমনি পক্ষে বললেও কেউ আর শুনবে না। জামায়াত এখন প্রায় বিলুপ্ত একটি রাজনৈতিক দল। তবে তারা এখন পর্দার অন্তরালে থেকে বিএনপির বাহ্যিক লেবাসে চোরাগোপ্তা হামলা ও আগুন সন্ত্রাস চালিয়ে বিএনপিকে কলঙ্কিত করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এতে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা প্রতিহত করতে পারবে না।

৮। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মিলিত প্রতিরোধ করেও নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন কখনো ঠেকানো যায় না। হয়তো ভোটার উপস্থিতি কমিয়ে দেওয়া যায়। প্রতিযোগিতামূলক কোনো নির্বাচন না হলে সেখানে ভোটার যেতে চায় না। তবে ভোটার উপস্থিতি কম বা বেশি তাতে নির্বাচনের সুষ্ঠুতায় কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করে না। তাছাড়া ভোটার উপস্থিতি কম হলে নির্বাচন অবৈধ হয় না। তবে তা হয়তো অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না। কিন্তু যাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না, তাদের মতামতের তোয়াক্কাই বা কে করে?

৯। আপাতত পরাজয় মেনে নিয়ে জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করাই হবে সঠিক এবং বুদ্ধিমানের রাজনীতি। অপ্রিয় হলেও চরম বাস্তবতা হলো বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকারের কোনো কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। সরকার তার পরিকল্পনা নিয়ে অব্যাহত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সব বিরোধী দলের দাবিকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে ইসি সরকারের পরিকল্পনা ও চাহিদা মোতাবেক সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ সালের দিকে তফসিল অনুযায়ী অব্যাহত এগিয়ে যাচ্ছে। তিন দিনের হরতাল ইতোমধ্যে হয়ে গেছে, তাতে সরকার বা ইসি তাদের অবস্থান বিন্দুমাত্র সরেনি এবং সরবে বলে মনে হয় না। উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে বিএনপি তার আন্দোলন কর্মসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন এনে এখন অপেক্ষা করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। অনেকের বিশ্বাস ইসি বা সরকার সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করাতে পারবে না। কারণ জনগণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবে না। তাই এখন অযথা শক্তি ক্ষয় না করে ৭ জানুয়ারির পূর্ব পর্যন্ত শক্তি অর্জন করে এবং অনুশীলনের মাত্রা বাড়িয়ে নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলন আপাতত বন্ধ রেখে নেতা-কর্মীকে মুক্ত করার প্রচেষ্টায় জোর দিলে ভবিষ্যতে ইতিবাচক ভালো ফল আসতেও পারে। তারপর যদি ৭ জানুয়ারি জনগণ ভোট দিতে কেন্দ্রে না যায়, তাহলে যে সুযোগ সৃষ্টি হবে, তা প্রয়োগ করার মতো শক্তি অর্জন নতুন সরকার পতনের আন্দোলন প্রথম থেকে শুরু করে দিলে তাতে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে তীব্রতর যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকবে।

১০। এসব অকার্যকর ও দুর্বল হরতাল ও অবরোধ দিয়ে নির্বাচন ঠেকানো যাবে না। অযথা পণ্ডশ্রম হবে এবং অহেতুক নেতা-কর্মীরা জেল-জুলুম, নির্যাতনের শিকার হবে। সেই সঙ্গে জনগণের ভোগান্তি বাড়াবে; যাতে জনমত সরকারবিরোধীদের বিপক্ষে চলে যেতে পারে।

১১। অত্যন্ত অপ্রিয় হলেও চরম সত্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব চরম দুর্বল, অযোগ্য ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অগ্রহণযোগ্য। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলেও কোনো গ্রহণযোগ্য বিকল্প নেতৃত্ব নেই। তাই প্রকাশ্যে কেউ বিরোধিতা না করলেও ভিতরে ভিতরে কেউ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্বকে মেনে নেয় না। দলে বা পদে টিকে থাকার জন্য সবাই প্রকাশ্যে জো হুজুর জো হুজুর আওড়াতে থাকে।

১২। একমাত্র দেশমাতা খালেদা জিয়া ছাড়া সরকারের বিপক্ষে জনপ্রিয় ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্য কোনো নেতা নেই। তাই সবার এ মুহূর্তে উচিত এবং একমাত্র করণীয় হবে, দেশমাতা খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। এতে নির্বাচনেও বাধা সৃষ্টি করা হবে না, আবার দেশমাতা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে তা মানতে বাধ্য করা যাবে।

আলোচিত বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে যদি বিএনপির নেতৃত্বে সব বিরোধী দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাবি তুলবে, “দেশমাতা খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি ও সব মামলা প্রত্যাহার করলে সবাই মিলে নির্বাচনে আসবে। ” এই দাবি আদায়ের জন্য লাগাতার হরতাল, অবরোধ ঘেরাও আন্দোলন কর্মসূচি যদি শক্তিশালীভাবে শুরু করা যায়, তাহলে নির্বাচন এমনিতেই হাওয়ায় উড়ে যাবে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে সেই শক্তি বর্তমান বিএনপির নেই। তাছাড়া বিএনপির কর্মসূচিতে জনগণের উৎসাহী অংশগ্রহণও তেমন জোরালো নয়। তাই অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিএনপির সামনে নির্বাচনে না যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

আমরা লড়তে চাই। বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়ার কারণে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক বিএনপির সব প্রার্থী হতাশ না হয়ে দল ও দেশের জন্য সর্বোপরি জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য অবশ্যই সবাইকে নির্বাচনে যেতে হবে। জামায়াত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত নেতার মাথা কবজা করে নিয়েছে। সেখান থেকে তারেক রহমানকে মুক্ত করে আপাতত আনা সম্ভব নয়। তাই নতুন নেতৃত্ব খুঁজতে হবে। দলকে বাঁচাতে, দেশমাতা খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে ও মুক্ত করতে এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ও ভারতের বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। খালি মাঠে আওয়ামী লীগকে খেলতে দেওয়া যাবে না। চরম বাস্তবতা হলো- সব বিরোধী দল মিলেও নির্বাচন ঠেকাতে পারবে না। নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলন করতে সরকার সবাইকে সন্ত্রাসী বানায়ে ফেলবে এবং আমাদের বিদেশি বন্ধুরাও তাতে সায় দেবে। আমরা সবাই কলঙ্কিত হয়ে যাব। দেশের শান্তি ও শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হবে, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন ব্যাহত হবে। তাতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে যার পূর্ণ সুযোগ ভারত নেবে। ভারত ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ না করার জন্য প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছে। ভারত পরিষ্কার বলে দিয়েছে, বাংলাদেশে ভারতের স্বার্থ আছে। অতএব বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে অন্য কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দেবে না। তার মানে বিএনপি বা বিএনপি নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে না যায় তাহলে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে একতরফা নির্বাচন করে নেবে। তাই স্থানীয়ভাবে বিএনপির সব শক্তিশালী প্রার্থীর কাছে আমার সবিনয় আহ্বান থাকবে :

১। আপনারা কেউ তৃণমূল বা অন্য কোনো দলে যোগদান করবেন না। ২। যার যার নির্বাচনি এলাকায় ২ বা ৩ জন নিজের মধ্যে আলোচনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাবেন। তার মধ্যে যাদের মনোনয়ন বৈধ হবে তারা সবাই নির্বাচন পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন। যদি পরিবেশ অনুকূলে থাকে তাহলে শেষ পর্যায়ে একজনকে বিজয়ী করে আনবেন। যদি এভাবে সারা বাংলাদেশে বিজয়ী হতে পারেন তাহলে নির্বাচনের পরপরই নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন এবং একটি সংসদীয় দল তৈরি করে একযোগে বিএনপিতে ফিরে আসবেন। নির্বাচনে সবার অঙ্গীকার থাকবে আমরা কেউ কোনো অবস্থাতেই বিএনপি ছেড়ে যাব না।

৩। সবার নির্বাচনের মূল এবং একক নির্বাচনি ইশতেহার থাকবে (যদিও প্রতীক আলাদা আলাদা হবে) :

(১) দেশমাতা খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সব সাজা ও মামলা প্রত্যাহার। (২) বিএনপির সব নেতা-কর্মীর মুক্তি, সব মামলা ও সাজা প্রত্যাহার। (৩) তারেক রহমানের সব সাজা ও মামলা প্রত্যাহার। (৪) মুক্তিযুদ্ধ ও ইসলামিক চেতনার পক্ষে বিএনপিকে পূর্ণ সংস্কার। (৫) বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং প্রকাশ্য সম্মেলন ও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রচলন। (৬) ভারতসহ কোনো বৈদেশিক রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা নয় বরং পূর্ণ সহযোগিতার ও বন্ধুত্বের নিশ্চয়তা। (৭) বাংলাদেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও প্রকাশ্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা। (৮) আইনের শাসন ও পূর্ণ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় পূর্ণ জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। (৯) রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং পুলিশসহ প্রশাসনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকাশ্যে রাজনৈতিক আনুগত্য নিষিদ্ধ করা। (১০) বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতার পূর্ণ স্বীকৃতি, মূল্যায়ন ও রাষ্ট্রীয় সব কাজে যথাযথ প্রাধান্য এবং স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠকারী হিসেবে শহীদ জিয়ার প্রতি পূর্ণ আস্থা, বিশ্বাস ও মর্যাদা প্রদান। (১১) দেশের শান্তি, শৃঙ্খলা, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের স্বার্থে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় অব্যাহত রাখার নিশ্চয়তা। আসুন বিএনপিকে বাঁচাই, দেশকে বাঁচাই। দেশমাতা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করি। যার যার আসন থেকে লড়াই করার জন্য নির্বাচনি যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে অপরাজনীতিকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করেন। জয় আপনাদের হবেই হবে, ইনশা আল্লাহ। সবাই ভালো থাকবেন।

লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য