১৪১ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তফসিল বাতিলের দাবি অসাংবিধানিক

সংগৃহীত ছবি

১৪১ অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার তফসিল বাতিলের দাবি অসাংবিধানিক

অনলাইন ডেস্ক

দ্বাদশ নির্বাচনের তফসিল ‘একতরফা’ দাবি করে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন ১৪১ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। এছাড়াও নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা অসংগতিমূলক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও তাদের তফসিল বাতিলের বিবৃতিকে সংবিধানের অবমাননা এবং পক্ষপাতমূলক রাজনৈতিক বিবৃতি বলে মনে করছেন অনেকেই। তাই অবসারপ্রাপ্ত সরকারি এই কর্মকর্তাদের বিবৃতি ঘিরে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে।

গতকাল বুধবার ২২ নভেম্বর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তফসিল বাতিলের দাবি জানিয়েছিলেন ১৪১ অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।

সুপ্রিম কোর্ট দেশের সংবিধানের প্রধান রক্ষক হলেও দেশের প্রতিটি জনগণ সংবিধানের নীতি মানতে বাধ্য। সেখানে সংবিধানকে অমান্য করে নির্বাচন নিয়ে দায়িত্বশীল জায়গা থেকে সরকারি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ ধরণের পক্ষপাতিত্বমূলক রাজনৈতিক বিবৃতি নতুন করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির ষড়যন্ত্র বলেও ধারণা করছেন অনেকেই।

বিবৃতিতে গত ১৫ নভেম্বর ঘোষিত তফসিলকে ‘একতরফা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তফসিল ঘোষণার আগে গত ৪ নভেম্বর নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সাথে মতবিনিময় করেছেন নির্বাচন কমিশন।

বিএনপিসহ নিবন্ধিত ৪৪টি দলকে চিঠির মাধ্যমে আমন্ত্রণ পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিএনপি ও তার মিত্ররা সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করেনি। তারা নির্বাচনকালীন মতবিনিময় সভাতে যোগদানও করেনি। শুধুমাত্র বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের অনুপস্থিতির কারণে তফসিলকে এক তরফা হিসেবে উপস্থাপন সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিবৃতিতে বিরোধীদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে পক্ষান্তরে সন্ত্রাসের মদদদাতাদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে। কারণ গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির নেতা কর্মীদের সহিংসতার ঘটনা দেখেছে পুরো বিশ্ব। একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা, শতাধিক পুলিশ সদস্যকে আহত করা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, যানবাহন ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, সংবাদিকদের উপর আক্রমণ, পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগের মতো বর্বর সহিংসতা ঘটিয়েছে বিএনপির সন্ত্রাসী বাহিনী।

বিবৃতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা, কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

বিবৃতি দাতারা উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ সালে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে মীমাংসিত ও নন্দিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ২০১১ সালে বাতিল করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ।

মূলত একথা বলে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে সেনা সমর্থিত শাসনের তিক্ত অভিজ্ঞতা পেয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করেছে বিএনপি আমলের জোট সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে দলীয় ব্যক্তিকে বসানোর জন্য সকল নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিল বিএনপি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিএনপিপন্থী রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদের সাহায্যে এক কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল বিএনপি। যার ফলে দেশে বিদেশে এ ধরণের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়, পাশাপাশি পৃথিবীর আর কোন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই এ ধরণের সরকারব্যবস্থার রীতি চালু নেই।

বিবৃতিতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ভোট হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ‘রাতের ভোট’ মূলত বিএনপি-জামায়াতের সর্বত্র ছড়ানো প্রোপাগান্ডা এবং আজ পর্যন্ত কোন দালিলিক কিংবা তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর তথ্য প্রমাণ কেউ সামনে আনতে পারেনি। বিএনপি-জামায়াতের সুরেই শিক্ষকরা কথা বলছেন বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক।

তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করা বাধ্যতামূলক। এটা করতেই হবে। তফসিল চাইলে বিলম্বিত করতে পারে। কিন্তু নির্বাচন করতেই হবে। এর কোন বিকল্প নাই। যারা এসব দাবি করছে তারা না জেনেই করছে। আমার কাছে মনে হয় এর মধ্যে কোন দুরভিসন্ধি আছে। আমার মনে হয়, তারা বিএনপি-জামায়াতের পক্ষেই কথা বলছে। ’

তিনি আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াতেরও তো একই দাবি, তারা নির্বাচন চায় না। তারা দেশে অরাজকতা চায়। দেশে একটি নৈরাজ্যমূলক পরিস্থিতি তারা তৈরি করতে চায়। ১/১১ এর সময় সংবিধান অবমাননা যেটা করা হয়েছিল একবার সেটাই আবার তারা করতে চাচ্ছে। সেই ধরনের পরিস্থিতি যারা চায় তারাই এসব করছে।

যারা বিবৃতি দিয়েছে তারা বিএনপি-জামায়াতের সুরেই কথা বলছেন। তারা চায় ১/১১-এর সময় বেআইনিভাবে যা করা হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি হোক। অসাংবিধানিক একটি সরকারকে তারা ক্ষমতায় আনতে চায়, সংবিধান উড়ে যাক এটাই তারা চায়। বিবৃতিতে কর্মকর্তারা বলেন, সরকার সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। অথচ নিঃশর্ত সংলাপের কথা শুরু থেকেই আওয়ামী লীগ জানিয়ে আসছিল। অথচ বিএনপি সরকারের পদত্যাগের দাবিতে সংলাপে না যেতে অনড় ছিল। সেসময় বিএনপি সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনসহ নানা শর্ত দিয়ে সংলাপের পথ বন্ধ করে দেয়।

পরে তফসিল ঘোষণার পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সংলাপের সময় শেষ হয়ে গেছে, এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সরকার, তাই পিছনে ফিরে সংলাপের আর কোন সময় সরকারের হাতে নেই। অর্থাৎ সংলাপের প্রস্তাব নাকচ করেনি সরকার, বরং সংলাপ প্রশ্নে টাইমড আউট হয়েছে বিএনপি।