আল্লাহর ৯৯ নামের তাৎপর্য

সংগৃহীত ছবি

আল্লাহর ৯৯ নামের তাৎপর্য

মাওলানা মুজিবুর রহমান ফরাজি

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালার ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি আল্লাহর এই গুণবাচক নামের জিকির করবে, সে জান্নাতে যাবে। ’ তাছাড়া এ গুণবাচক নামগুলোর আলাদা আলাদা অনেক উপকার ও ফজিলত রয়েছে। আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম (রর) ‘আল-কাবিরু’।

(রর) ‘আল-কাবিরু’র অর্থ হলো সবচেয়ে বড়, যার নিকটেও কেউ নেই; তিনি ব্যতীত সবকিছুই ছোট; আসমান-জমিনের মহিমা ও গর্ব শুধুমাত্র তাঁরই। ’

আল্লাহর কাছে তাঁর গুণবাচক নামসমূহের মাধ্যমে প্রার্থনা ও জিকির করলে আল্লাহ খুশি হন। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সেই নাম ধরেই তাঁকে ডাক।

আর তাদের বর্জন কর, যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃতকর্মের ফল শিগগিরই পাবে’ (সুরা আরাফ, আয়াত নম্বর ১৮০)। উত্তম নাম বলতে সেসব নামকে বোঝানো হয়েছে, যা গুণ-বৈশিষ্ট্যের পরিপূর্ণতায় সর্বোচ্চ স্তরকে চিহ্নিত করে। তাঁর গুণবাচক নামকে বলা হয়, আসমাউল হুসনা।

উপরোক্ত আয়াতেও ‘আসমাউল হুসনা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যার দ্বারা বোঝা যায়, এসব আসমাউল হুসনা বা উত্তম নামসমূহ একমাত্র আল্লাহ রব্বুল আলামিনের বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্য লাভ করা অন্য কারও পক্ষে সম্ভব নয়। আয়াতের মর্মকথা হলো, হামদ, সানা, গুণ ও প্রশংসাকীর্তন, তাসবিহ-তাহলিলের যোগ্য যেহেতু শুধু আল্লাহই এবং বিপদাপদে মুক্তিদান আর প্রয়োজন মেটানোও শুধু তাঁর-ই ক্ষমতায়। কাজেই যদি প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতে হয়, তবে তাঁরই করবে আর নিজের প্রয়োজন বা উদ্দেশ্য সিদ্ধি কিংবা বিপদমুক্তির জন্য ডাকতে হলে শুধু তাঁকেই ডাকবে, তাঁরই কাছে সাহায্য চাইবে। আর ডাকার পদ্ধতিও বলে দেওয়া হয়েছে যে, তাঁর জন্য নির্ধারিত ‘আসমায়ে হুসনা’ বা উত্তম নামে-ই ডাকবে।

এ আয়াতের মাধ্যমে গোটা মুসলিম জাতিকে দুটি হেদায়াত বা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, প্রথমত, আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্তাই প্রকৃত হামদ-সানা বা বিপদমুক্তি বা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য ডাকার যোগ্য নয়। দ্বিতীয়ত, তাঁকে ডাকার জন্য মানুষ এমন মুক্ত নয় যে, যে কোনো শব্দে ইচ্ছা ডাকতে থাকবে, বরং আল্লাহ বিশেষ অনুগ্রহপরবশ হয়ে আমাদিগকে সেসব শব্দ সমষ্টি শিখিয়ে দিয়েছেন যা তাঁর মহত্ত্ব ও মর্যাদার উপযোগী। সেই সঙ্গে এ সমস্ত শব্দেই তাঁকে ডাকার জন্য আমাদিগকে বাধ্য করে দিয়েছেন যাতে আমরা নিজের মতো শব্দ পরিবর্তন না করি। কারণ, আল্লাহর গুণ বৈশিষ্ট্যের সব দিক লক্ষ্য রেখে তাঁর মহত্ত্বের উপযোগী শব্দচয়ন করতে পারা মানুষের সাধ্যের ঊর্ধ্বে।

বিভিন্ন হাদিস অনুসারে, আল্লাহর ৯৯টি নামের একটি তালিকা আছে, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিক ক্রম নেই; তাই সম্মিলিত মতৈক্যের ভিত্তিতে কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকাও নেই। তাছাড়া কোরআন এবং হাদিসের বর্ণনা অনুসারে আল্লাহর সর্বমোট নামের সংখ্যা ৯৯-এর অধিক, প্রায় ৪,০০০। অধিকন্তু আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ তাঁর কিছু নাম মানবজাতির অজ্ঞাত রেখেছেন। এই নামসমূহের ব্যাপারে কোরআনের বর্ণনায় আল্লাহর উদ্ধৃতি এসেছে ‘আল্লাহ বলে আহ্বান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহ্বান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই (সুরা বনি-ইসরাইল-১১০)। অনেক হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত, [৩] মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর অনেক নামের উল্লেখ করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, একটি বিশুদ্ধ হাদিসে হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উক্তি বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর ৯৯টি নাম আছে; সেগুলো মুখস্থকারী ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। যেহেতু আল্লাহতায়ালা বিজোড় (অর্থাৎ তিনি একক, এবং এক একটি বিজোড় সংখ্যা), তিনি বিজোড় সংখ্যাকে ভালোবাসেন। আর ইবনে ওমরের বর্ণনায় এসেছে, (শব্দগুলো হলো) ‘যে ব্যক্তি সেগুলোকে পড়বে। ’

আসুন আমরা আল্লাহতায়ালার ৯৯টি নাম মুখস্থ করার চেষ্টা করি এবং সকাল-বিকাল এ নামগুলো জপি ও আমল করি। আল্লাহতায়ালা আমাদের তাঁর নামগুলোর তাজবি পড়ার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক ও পীরসাহেব সূর্যপুর, কুমিল্লা