দাম্ভিকদের পরিণাম কখনই ভালো হয় না

সংগৃহীত ছবি

দাম্ভিকদের পরিণাম কখনই ভালো হয় না

এম এ মান্নান

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহপাক আমার কাছে ওহি পাঠিয়েছেন, ‘তোমরা বিনয় প্রকাশ কর (এ জন্য), যাতে একজন আর একজনের প্রতি বিদ্রোহ না কর এবং একে অপরের ওপর দম্ভ প্রদর্শন না কর। ’ (মুসলিম, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।

এক হাদিসে আছে, ‘যদি পাহাড় আর এক পাহাড়ের ওপর চড়াও হয়, তবে চড়াও হওয়া পাহাড়কে আল্লাহ গুঁড়িয়ে দেবেন। ’ এক হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আগ্রাসন তথা বিদ্রোহ ও ধৃষ্টতা প্রদর্শন এবং আত্মীয়তা ছিন্ন করার ন্যায় এমন পাপ আর নেই, যা পরলোকের শাস্তি ছাড়াও পার্থিব জীবনেই শাস্তি অবধারিত করে দেয়।

এ অপরাধের জন্য আল্লাহতায়ালা সর্বাপেক্ষা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছিলেন হজরত মুসা (আ.)-এর চাচাত ভাই কৃপণ কারুনকে। তার বিদ্রোহ ও ধৃষ্টতার জন্য আল্লাহপাক তার সমুদয় সম্পদসহ তাকে মাটিতে জ্যান্ত পুঁতে ফেলেন। এ ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আল্লাহ বর্ণনা করেছেন এভাবে, ‘নিশ্চয় কারুন ছিল মুসার সম্প্রদায়ভুক্ত। অতঃপর সে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও দম্ভ প্রকাশ করল।

আমি তাকে এত ধন-ভান্ডার দিয়েছিলাম, যার চাবিগুলো বহন করা একদল শক্তিশালী লোকের পক্ষে কষ্টকর ছিল। যখন তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ কর না, আল্লাহ দাম্ভিকদের ভালোবাসেন না। আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন, তা দ্বারা পরকালের বাসস্থান অনুসন্ধান কর এবং পার্থিব জীবনে তোমার অংশ ভুলে যেও না। আল্লাহপাক যেমন তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, অনুরূপ তুমিও অপরের প্রতি অনুগ্রহ কর। আর আল্লাহ পৃথিবীতে অনর্থ (গোলযোগ) সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। ’ সে বলল, ‘এ ধনরাশি তো আমি নিজস্ব বুদ্ধি ও প্রজ্ঞা দ্বারা অর্জন করেছি। ’

সে কি জানে না, আল্লাহ তার পূর্বে আরও অনেক সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছেন? যারা ছিল শক্তিতে তার চেয়েও প্রবল এবং ধনসম্পদে অধিক প্রাচুর্যশীল। আর পাপীদের তো তাদের অপকর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না। অনন্তর কারুন জাঁকজমক সহকারে নিজ সম্প্রদায়ের সামনে উপস্থিত হলো। তখন যারা পার্থিব জীবন কামনা করত, তারা বলতে লাগল, আহ! কারুনকে যে বিষয় সম্পদ দেওয়া হয়েছে, আমাদেরও যদি অনুরূপ দেওয়া হতো! নিশ্চয় সে বড়ই সৌভাগ্যবান। আর যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত হয়েছিল, তারা বলল, ধিক তোমাদের। যারা বিশ্বাসী-ইমানদার এবং সৎকর্ম করে, তাদের জন্য আল্লাহর দেওয়া প্রতিদানই উৎকৃষ্ট। এটা তারাই পাবে, যারা ধৈর্যশীল। অতঃপর আমি কারুন ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে পুঁতে ফেললাম। আল্লাহ ছাড়া এমন কোনো দল ছিল না, যারা তাকে বাঁচাতে পারে এবং সে নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারল না। গতকাল যারা কারুনের মতো হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছিল, পরদিন সকালে তারা বলতে লাগল : আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা জীবিকা বাড়িয়ে দেন, যাকে ইচ্ছা হ্রাস করেন। আল্লাহ আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করলে আমাদেরও তিনি ভূগর্ভে পুঁতে ফেলতেন। অবিশ্বাসীরা সফলকাম হবে না। ’

হজরত ইমাম জাওযি (রহ.) বলেন, কারুনের দম্ভ ও বিদ্রোহ প্রকাশের ব্যাপারে বেশ কয়েকটি অভিমত রয়েছে। (১) হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কারুন হজরত মুসা (আ.)-এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে অসতী এক নারীকে এ বদনাম ছড়াতে প্রভাবিত করে যে, হজরত মুসা (আ.) তার সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু হজরত মুসা (আ.) সেই নারীকে কসম করে সত্য সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করলে সে প্রকাশ করে দেয়, কারুনের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে এবং কারুনই তাকে এমন ধরনের বদনাম ছড়াতে উসকানি দিয়েছে। (২, ৩) যা হোক ও কাতাদা (রা.) বলেন, সে আল্লাহর প্রেরিত নবীকে অমান্য করে কুফরিতে জড়িয়ে পড়ে। (৪) আতা খোরাসানি বলেন, সে পোশাক পরিচ্ছদের জৌলুস প্রদর্শনের মাধ্যমে দম্ভ প্রকাশ করেছে। (৫) মাওরিদ বলেন, কারুন ফেরাউনের উপদেষ্টা ছিল এবং ক্ষমতার দম্ভে সে নিজ সম্প্রদায় বনি ইসরাইলের প্রতি অত্যাচার করত। আল্লাহর ঘোষণা, ‘অনন্তর তাকে (কারুনকে) তার প্রাসাদসহ ভূগর্ভে পুঁতে ফেললাম। ’ (ঘটনাটি নিম্নরূপ) হজরত মুসা (আ.)-এর বিরুদ্ধে বদনাম ছড়ানোয় তিনি ক্ষুব্ধ মনে অভিশাপ দিলে মহান আল্লাহপাক ঘোষণা দেন, ‘ওহে মুসা! আমি মাটিকে তোমার হুকুম পালনের নির্দেশ দিয়েছি। তুমি তাকে তোমার ইচ্ছানুযায়ী আদেশ করো। ’ হজরত মুসা (আ.) আদেশ করলেন, ‘ওহে মাটি, কারুনকে গ্রাস কর। ’ তৎক্ষণাৎ কারুনের আসন তলিয়ে গেল। অবস্থা বেগতিক দেখে কারুন হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে করুণা ভিক্ষা চাইল। কিন্তু মুসা (আ.) আবার মাটিকে আদেশ করলেন, একে গ্রাস কর। এবার তার দুই পা মাটির তলে ঢুকে গেল। এভাবে হজরত মুসা (আ.)-এর বারবার আদেশের পর আদেশে কারুন পুরোপুরি মাটির তলে অদৃশ্য হয়ে গেল।

আল্লাহপাক ওহির মাধ্যমে হজরত মুসা (আ.)-কে জানিয়ে ছিলেন, আমার ইজ্জত ও জালালের কসম! সে যদি তোমার কাছে প্রার্থনা না করে আমার কাছে করত, তবে আমি তাকে মুক্তি দিতাম। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ভূগর্ভে পুঁতে ফেললাম’ অর্থ- ভূগর্ভের অতল তলে দাবিয়ে দিলাম। সামুরা ইবনে জুন্দুব (রা.) বলেন, প্রতিদিন সে নিজের উচ্চতার সমান নিচে তলিয়ে যায়। হজরত মোকাতেল (রহ.) বলেন, কারুন যখন ধ্বংস হয়ে গেল, বনি ইসরাইলের লোকেরা তখন বলাবলি করতে লাগল, হজরত মুসা (আ.) কারুনের ধনসম্পদ নিজে দখল করার জন্য তাকে মেরে ফেলেছেন। এ জন্য আল্লাহ তিন দিন পর কারুনের প্রাসাদ ও ধনসম্পদ ভূগর্ভে বিলীন করে দেন।

 
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি,
আমেনা খাতুন হাফেজিয়া কোরআন রিসার্চ অ্যান্ড ক্যাডেট ইনস্টিটিউট,
কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ 

এই রকম আরও টপিক