দেশ জুড়ে বাসে অগ্নি সংযোগ : পেট্রোল বোম হাতে রাস্তায় ছাত্রদল-শিবির

ফাইল ছবি

বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন 

দেশ জুড়ে বাসে অগ্নি সংযোগ : পেট্রোল বোম হাতে রাস্তায় ছাত্রদল-শিবির

অনলাইন ডেস্ক

দেশ জুড়ে বাস ও বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহারের জন্য বিএনপির সবচাইতে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে দলটির সংগঠন ছাত্রদলকে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে গঠিত ছাত্র সংগঠনটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীক কাজ করার কথা থাকলেও বর্তমানে অগ্নি সন্ত্রাসের লক্ষ্যই কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি।

অবরোধ ও হরতালের ডাকে শুরু থেকেই বাসে অগ্নি সংযোগ, ভাংচুর ও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নয় বলে দাবি করে এসেছে দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। কিন্তু ধীরে ধীরে বাসে অগ্নি সংযোগ সহ আরও বেশ কিছু ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখার পর খুঁজে পাওয়ার যায় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ সাবেক এমপিদের ছবি ও ভিডিও।

এমন সব ভিডিও ও ফুটেজেও দেখা যায় অগ্নি সংযোগ, হামলা ও ভাংচুরের জন্য দলটি ব্যবহার করছে ছাত্রদলের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের।

এদিকে দেশ জুড়ে বিএনপি-জামায়াতের এ ধরণের হামলায় শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি প্রায় ৪ কোটির বেশি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকগণ অনুরোধও জানান এই হামলা বন্ধের। কিন্তু কোন কিছুতেই কর্ণপাত করেনি বিএনপি-জামায়াত।

বিএনপি জামায়াতের হামলায় সবচাইতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজকে।

এ ঘটনায় যুবদলের দুই জনকে আটক করে পুলিশ। মূলত সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাদের আটক করা হয়। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই হামলার পেছনেও ভূমিকা রেখেছে ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান। পুলিশ কনস্টেবল ইটের আঘাতে মাটিয়ে লুটিয়া যাওয়ার পরও তার ওপর হামলা ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার নির্দেশ তিনি দেন।

২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরির জন্য ২৬ তারিখ থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক শামিম মাহমুদ। বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা তাকে নির্দেশ দেয়, দনিয়া ফুট ওভার ব্রিজ থেকে মারুফ নামক এক ব্যক্তি থেকে একটি ব্যাগ নিয়ে সেটি রিয়াজের কাছে নয়াপল্টনে আনার জন্য। ২৮ অক্টোবর ও ৫ নভেম্বর উভয় দিন এই ব্যাগ ছিল তার সঙ্গে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়গুলো অবহত করেন। ভিডিওতেও ছাত্রদলের এই নেতাকে দেখা যায়।

১ নভেম্বর মুগদা আইডিয়াল স্কুলের সামনে মিডওয়ে পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে আল-আমিন। এ সময় স্থানীয়দের হাতে আটক হবার পর জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় গাজীপুর বিএনপির এক নেতা মিজানুরের নির্দেশ এই অগ্নিসংযোগ করেছে সে। গাজীপুর থেকে মিজানুরকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায় ছাত্রদল সূত্রাপুর থানার যুগ্ম আহ্বায়ক আমির হোসেন রকির নির্দেশে এই হামলা চালাতে একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেন তিনি।  

এদিকে অপর এক ছাত্রদল নেতাকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এলাকা থেকে ককটেল ও পেট্রোলবোমা  সহ আটক কর হয় ১ নভেম্বর। ছাত্রদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের (২৮) বিরুদ্ধে যানবাহন ভাংচুর সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলে জানায় পুলিশ। একই দিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মহাসড়কে এবং মাধবপুর সড়কে যানবাহনে ভাংচুর চালায় ছাত্রদলের তিন নেতা। মো. আশিকুর রহমান, মোজাম্মেল আকন্দ তানিম এবং রহমতুল্লাহকে এই ভাংচুর চলাকালে আটক করা হয়।  

রাজধানীর পুরান ঢাকায় ফুলবাড়িয়ার বাস ডিপোতে থাকা এক বাসে আগুন দেওয়ার চেষ্টার সময় ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল হোসেনকে (২৯) আটক করেছে পুলিশ। অগ্নি সংযোগের প্রস্তুতি কালে তাকে ৫ নভেম্বর হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে আধা কেজি গান পাউডার, পেট্রোল ও তুলা উদ্ধার করা হয়

নভেম্বরের ১৩ তারিখে প্রজাপতি পরিবহনে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক হন ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মজুমদার। এ সময় মামুনের সঙ্গে থাকা ছাত্রদলের সোহেল রানাকে আটকের চেষ্টা করলেও সে পালিয়ে যায়।  

রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় ১৪ নভেম্বর বিআরটিসি বাসে আগুন দেওয়ার সময় তিনজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এখানেও একজন ছাত্রদল কর্মী ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।  

বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবু তালেব মাসুমকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তিনি ১৫টি মামলার পলাতক আসামি ছিলেন। ১৭ নভেম্বর রাতে কক্সবাজার থেকে একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই দিনেই সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলায় গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টার সময় জামায়াতে ইসলামী সমর্থক ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা।  

নারায়ণগঞ্জ কলেজ ইউনিট ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহেব হাওলাদারকে ১৮ নভেম্বর এক বোতল ভর্তি পেট্রোল এবং ২০টি টায়ার সহ আটক করা হয় সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে।  

এই দিনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে বড় পদ প্রদান ও অর্থের লোভ দেখিয়ে অগ্নি সংযোগের নির্দেশ দেয়া হয় ছাত্রদলের আলামিন, চাদ মিয়া, সাগর ও খোরশেদকে। দলটির সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে এই ছাত্রদলের কর্মীরা কালসিতে একটি বাসে আগুন লাগায়। এক ভিডিও ফুটেজে বাসে আগুন জ্বালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের পক্ষে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাকে।

বাসে অগ্নিসংযোগ চেষ্টার অভিযোগে মশাল ও কেরোসিনসহ এক বিএনপি নেতা ও তার সহযোগীকে ১৯ নভেম্বর আটক করে পুলিশে দেয় ছাত্রলীগ। এ সময় আটককৃতরা হলেন- ২৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মোস্তফা ও তার সহযোগী ছাত্রদল কর্মী মো. মাইনুদ্দিন।

রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনী কাাঁচাবাজার এলাকা থেকে ২০ নভেম্বর নাশকতার প্রস্তুতিকালে ছাত্রদলের ২ কর্মীকে হাতেনাতে আটক করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৩।  

দীর্ঘ এক মাস ধরে দেশ জুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টির অংশ হিসেবে অগ্নিসংযোগ, বাস ভাংচুর, স্কুল অগ্নি সংযোগ, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ, ট্রেন লাইনে টায়ার পুড়িয়ে রাখা, রাস্তায় টায়ার পুড়িয়ে রাখা ও সাধারণ মানুষকে মারধর করেছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রদল। সেই সঙ্গে মাস জুড়ে পুলিশের অভিযানে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল হামলার সঙ্গে জড়িত ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাদের আটকের পাশাপাশি নির্দেশ দাতা কেন্দ্রীয় নেতাদের নথিসহ গ্রেপ্তারের পর বিগত কয়েকদিন অগ্নিসংযোগ ও হামলার পরিমাণ কমেছে বিএনপি-জামায়াতের।