বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের আদর্শ

সংগৃহীত ছবি

বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের আদর্শ

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

সাথী ও বন্ধু-বান্ধব এই শব্দগুলোর সঙ্গে আমরা গভীরভাবে পরিচিত। প্রতিটি মানুষের জীবন চলার পথে এবং পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে সাথি ও বন্ধু-বান্ধবের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের কর্ম, চিন্তা-চেতনা এবং ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় বন্ধুদের প্রভাবে। কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে, কাদের বর্জন করতে হবে এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা ও রসুলুল্লাহ (সা.) বিস্তারিতভাবে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

মুসলমানদের প্রতিটি কাজ আল্লাহতায়ালাকে সন্তুষ্ট করা এবং রসুলুল্লাহকে (সা.) ভালোবাসার উদ্দেশ্যে হতে হবে। তাই কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করা, জীবন চলার সাথী হিসেবে নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে আল্লাহ ও রসুল (সা.)-এর নির্দেশনাকে প্রাধান্য দিতে হবে। রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর আরশের ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না। তন্মধ্যে, ‘সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে, যারা এই ভালোবাসার বন্ধনে মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার ওপরই বিচ্ছিন্ন (মৃত্যু) হয়’ (সহিহ বুখারি)।

পরম করুণাময় ঘোষণা করেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো’ (সুরা তওবা-১১৯)। অপর আয়াতে তিনি বলেন, ‘মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী পরস্পরে একে অন্যের সহযোগী। তারা সৎ কাজের আদেশ করে, অসৎ কাজে বাধা দেয়, নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করে। তারা এমন লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ নিজ রহমত বর্ষণ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সুরা তওবা-৭১)।

বর্তমান সমাজে বিভিন্ন লক্ষ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বিভিন্ন স্বার্থের কারণে বা সামাজিক ও জাতিগত কারণে কখনো বন্ধুত্ব হয়। স্বার্থ শেষ হলে সেই বন্ধুত্বের অবসান ঘটে। আল্লাহর প্রতি ইমান ও আনুগত্যের ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, তা ইনশাআল্লাহ স্থায়ী হবে জান্নাত পর্যন্ত। সেই বন্ধুত্বই উভয়কে জান্নাতে টেনে নেবে। ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধুত্বের বাস্তব মাপকাঠি হলো, আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিশ্বের সমগ্র ইমানদারকে ভালোবাসা। আল্লাহর আনুগত্য লাভের আশায় মুসলমানদের ভালোবাসা। তাদের দীনি কর্মকে ভালোবাসা ও সহযোগিতা করা। সৎ ও নীতিবান লোকদের সান্নিধ্য লাভ করা। দুর্নীতিবাজ, অসৎ ব্যক্তিবর্গের সান্নিধ্য পরিহার করা।

কথিত আছে, অসৎ বন্ধু বিষাক্ত সাপের চেয়েও ক্ষতিকর। বিষাক্ত সাপ প্রাণে ধ্বংস করে। আর অসৎ বন্ধু জীবন, যৌবন ও ইহকাল, পরকাল চিরতরে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে। তাই প্রসিদ্ধ আছে, সৎসঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। এ জন্য মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘প্রতিটি মানুষ তার বন্ধুর আদর্শে প্রভাবিত হয়, অতএব, তোমাদের প্রত্যেকেই দেখে নেবে কাকে বন্ধু নির্বাচন করছো’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)।

বিজ্ঞদের মতে, প্রকৃত বন্ধু অপর বন্ধুকে তার যাবতীয় অসৎ কাজ ও অপকর্ম থেকে বারণ করবে। সর্বদা সৎ কাজে উৎসাহিত করবে। সহযোগিতা করবে কল্যাণের পথে। বন্ধুত্ব আমাদের একাকীত্বকে ভুলিয়ে দেয়, অসহায়ত্বকে হার মানায়, জীবনটাকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে। আবার বন্ধু যদি অসৎ হয় সেই বন্ধুর কারণেই ইহ ও পরকাল বিষিয়ে ওঠে। জীবন-মরণ উভয়ই হয়ে ওঠে কণ্টকাকীর্ণ লাল কার্পেট। তাই আমাদের জীবনে যেমন চরিত্রবান বন্ধু প্রয়োজন, ঠিক তেমনি ছেলেমেয়েদের আদর্শভাবে গড়ে ওঠার জন্যও প্রয়োজন সৎ ও চরিত্রবান জীবনসাথি ও ভালো বন্ধু নির্বাচন। সবার এ বিষয়ে সচেতন হওয়া বর্তমান সময়ের অপরিহার্য দাবি।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা